• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
পণ্য পরিবহন ধর্মঘটে অচল গণপরিবহনও

পণ্য পরিবহন ধর্মঘটে সীমাহীন দুর্ভোগে নগরবাসী

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

পণ্য পরিবহন ধর্মঘটে অচল গণপরিবহনও

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ০৮ অক্টোবর ২০১৮

সড়ক পরিবহন আইনের সংশোধনসহ সাত দফা দাবি আদায়ে ঢাকা বিভাগে অনির্দিষ্টকালের পণ্য পরিবহন ধর্মঘট চলছে। তবে গতকাল রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘটে বন্ধ ছিল রাজধানীর সকল ধরনের গণপরিবহনও। এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় অসহনীয় ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে রাজধানীবাসীকে।

গত শনিবার রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল থেকে ‘পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’ গতকাল রোববার থেকে ঢাকা বিভাগে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। একই দিন রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে ‘সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’ও সড়ক আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবি জানায়। দাবি না মানলে তারাও বৃহৎ আন্দোলনের হুমকি দেয়। এদিকে ফুলবাড়ীয়ার সমাবেশ থেকে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনকে দেশের সকল বাস টার্মিনালে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে ‘পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’-এর নেতাকর্মীরা গতকাল থেকেই রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোয় ব্যারিকেড দিয়ে পণ্যবাহী যানের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ করে দেয়। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা সড়ক, বাবুবাজার দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা ব্রিজ হয়ে ঢাকা-মাওয়া সড়ক, বসিলা হয়ে মোহাম্মাদপুর প্রবেশের বসিলা সড়কসহ ঢাকায় প্রবেশের আরো কয়েকটি রাস্তা অবরোধ করে রাখেন তারা। সকালে যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা সড়ক ও বসিলা সড়কে চলাচল করা গাড়ি থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করেন শ্রমিকরা। যেসব চালকের লাইসেন্স নেই, তাদের নাকেমুখে পোড়া মোবিল মেখে দেন তারা। বৈধ লাইসেন্সধারীদেরও গাড়ি চালানো বন্ধ করে আন্দোলনে নামার জন্য বল প্রয়োগ করা হয়। রাজধানীর পশ্চিম ধোলাইরপাড় এলাকায়ও একই দৃশ্য দেখা গেছে। বসিলা সড়কের বেড়িবাঁধ এলাকায়ও অবস্থান নিয়ে ব্যারিকেড দেয় শ্রমিকরা। তারাও সড়ক দিয়ে সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

নগরবাসীর ভোগান্তি : ‘অঘোষিত’ এই পরিবহন ধর্মঘটের কারণে অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় সীমাহীন দুর্ভোগের মুখে। যানবাহন না পেয়ে অনেকেই পায়ে হেঁটেই রওনা দেন গন্তব্যে। যারা রিকশা বা ভ্যান পেয়েছেন তাদের গুনতে হয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া। সকালে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে পাঠাও, উবারের মতো রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকরা নিয়মের তোয়াক্কা না করেই খেয়াল-খুশিমতো ভাড়ায় চলছে। তারা সুযোগ বুঝে দেড়গুণের বেশি ভাড়া হাঁকছেন।

মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ইশরাত জাহান। তিনি বাংলাদেশের খবরকে জানান, সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসেই অবাক হয়ে যান তিনি। তিনি দেখেন বাসগুলো দরজা বন্ধ করে রাস্তার পাশে রেখে দেওয়া হয়েছে। ইশরাত জানান, তখনো তিনি জানতেন না কেন বন্ধ রয়েছে বাসগুলো। আগের রাতেও তিনি এই ধরনের কোনো ঘোষণা শোনেননি। পরে তিনি অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশাযোগেই গন্তব্যে রওনা হন।

যাদের সামর্থ্য কম তাদের পড়তে হয় ভীষণ বিপদে। হিসাবের চেয়ে দশগুণের বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার চেয়ে অনেকেই ফিরে যান ঘরে। অনেকেই পায়ে হেঁটে রওনা দেন গন্তব্যে। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের একটি বিপণিবিতানের বিক্রয়কর্মী হেলাল বলেন, আজ (রোববার) দোকানে যাওয়া মানে এক দিনের আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করা, তাই আর দোকানে যাব না। তিনি বলেন, এমন অবস্থার মধ্যে পড়লে মনে হয় আমরা একটা মগের মুল্লুকে বাস করি, যার যা খুশি করেন। জনসাধারণের কথা কেউ ভাবেন না।

এদিকে বিকালের পর থেকে কয়েকটি এলাকা থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার খবর পাওয়া গেলেও প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদকর্মী শাহিনুর রহমান সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাংলাদেশের খবরেকে জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবরোধ না থাকলেও যানবাহনের তীব্র সঙ্কট রয়েছে। তিনি নিজেও কর্মস্থল থেকে প্রায় পায়ে হেঁটেই কাজলা এলাকার বাসায় ফিরছেন।

সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি : গত ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন বিল-২০১৮ সংসদে পাস হয়। সেই আইনে অবহেলা বা বেপরোয়া মোটরযান চালনার কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাণহানির দায়ে অভিযুক্তদের অপরাধ জামিনযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনাজনিত অন্যান্য অপরাধ আপস-মীমাংসার জন্য পুলিশকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

তবে সরকার প্রণীত এই আইন মানতে নারাজ পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। তাই আগের কয়েকদফা আঞ্চলিক আন্দোলনের পর গত শনিবার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন করা; সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০২ ধারায় মামলা গ্রহণ না করা; ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল ও জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করা; পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা; গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা; সারা দেশে গাড়ির ওভারলোডিং বন্ধ করা এবং ফুটপাথ, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস ও জেব্রাক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। দাবি না মানলে সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন তারা। নেতারা জানান, ১২ অক্টোবর ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads