• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
হিমাগারে ১১ ইউটার্ন প্রকল্প

যানজট নিরসনে প্রস্তাব করা হয়েছিল ১১ হউটার্ন প্রকল্প

ছবি : সংগৃহীত

যোগাযোগ

রাজধানীর যানজট সমস্যা

হিমাগারে ১১ ইউটার্ন প্রকল্প

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০১৯

আওয়ামী লীগের ব্যানারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রয়াত আনিসুল হকের বড় শক্তি ছিলেন ব্যবসায়ীরা। নিজে ব্যবসায়ী হিসেবে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের যানজটকে অর্থনৈতিক উন্নতির পথে বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখতেন তিনি। তাই মেয়রের দায়িত্ব নিয়েই যানজট কমাতে রাজধানীর সাতরাস্তা থেকে আবদুল্লাপুরের হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত ১২টি ইউলুপ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পরবর্তী সময়ে ১২ ইউলুপের পরিবর্তে ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়। ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরে নেওয়া প্রকল্পটি অনুমোদনের পর থেকে কখনো বাস্তবায়নে গতি পায়নি।

অন্য প্রকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থানের কারণে বাস্তবায়নে অনীহা, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না দেওয়া ও বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় করতে না পারার কারণে যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগটি স্থবির প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একাধিক সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দের একটি অর্থও ব্যয় করতে পারেনি ডিএনসিসি। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১ লাখ টাকা। নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অবশ্য সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। অবশ্য এ পর্যন্ত একটি পয়সাও ব্যয় করতে হয়নি এ প্রকল্পের জন্য। কারণ ইতোমধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় মেয়াদ না বাড়িয়ে প্রকল্পটির আওতায় আর একটি পয়সাও ব্যয় করার সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়, মেয়র আনিসুল হকের বিশেষ অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে প্রকল্পটি নেওয়া হলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ ৪টি সরকারি সংস্থার জমি সংক্রান্ত বাধার মুখে থেমে যায় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। দুই বছরের বেশি সময়ে জটিলতা কাটিয়ে উঠলেও অর্থ সঙ্কট ও সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতায় এখনো অনিশ্চিত প্রকল্প বাস্তবায়ন। সেই সঙ্গে কবে নাগাদ বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

এ বিষয়ে উপনির্বাচনের মাধ্যমে আনিসুল হকের স্থলাভিষিক্ত হওয়া ডিএনসিসির নতুন মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি রাজধানীর গতি ধরে রাখতে যানজট কমানোর বিকল্প নেই। বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর পাশাপাশি যানজট নিরসনের প্রকল্পটিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। মেয়র আরো জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। একেবারেই স্থবির হয়ে যাওয়া প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পেলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে বলেও তিনি জানান।

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, শুরু করার সময় ৪টি সরকারি সংস্থার জমির বিরোধের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রকল্পটি। পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভার ধারাবাহিকতায় প্রকল্পটি আবার চালু করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সঙ্গে ছাড়াও অন্য যেসব জটিলতা ছিল সেগুলো নিরসন হয়েছে। তবে এসব সংস্থা কিছু ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। ক্ষতিপূরণগুলো যোগ করে এ বিষয়ে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হচ্ছে। ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পের সঙ্গে ক্ষতিপূরণের অর্থ যোগ করে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প পরিচালক ও ডিএনসিসির আঞ্চলিক কর্মকর্তা খন্দকার মাহবুব আলম জানান, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হয়েছে। এ বিষয়ে আগামীকাল রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির আওতায় তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, তিব্বত মোড়, মহাখালী বাস টার্মিনাল, মহাখালী ফ্লাইওভার, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী, বনানী কবরস্থান, বনানী ওভারপাস, শেওড়া, কাওলা, উত্তরার র্যাব-১ অফিসের সামনের সড়ক এবং জসিম উদ্দিন অ্যাভিনিউয়ের সামনে ইউটার্ন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

জানা যায়, নগরবাসীকে যানজটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ছিল প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্বপ্ন। এ বিষয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নগর পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিমানবন্দর সড়কে ১২টি ইউলুপ স্থাপনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় গাজীপুর পর্যন্ত মোট ২২টি ইউলুপ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আগেই ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রকল্পটি নেওয়া হয়।

ডিএনসিসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ২০১৫ সালের শেষের দিকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। পরে এটির চূড়ান্ত রূপরেখা ও নকশা পরিবর্তন করে ইউটার্ন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। সংশোধনের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু করে ২০১৭ সালের জুনে শেষ করার জন্য অনুমোদন পেতেই চলে যায় অনেক সময়। ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন কাল ধরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি এ পর্যন্ত শূন্য।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads