• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ঈদের আগেই খুলতে পারে দ্বিতীয় মেঘনা সেতু

দ্বিতীয় মেঘনা সেতু

ছবি : সংগৃহীত

যোগাযোগ

ঈদের আগেই খুলতে পারে দ্বিতীয় মেঘনা সেতু

  • প্রকাশিত ১৮ মে ২০১৯

এ এইচ এম ফারুক

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করেছে জাপানি জয়েন্টভেঞ্চার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সেতুটি যান চলাচলের জন্য এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।  এদিকে নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগেই কাজ শেষ হওয়ায় ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানান প্রকল্প ব্যবস্থাপক শওকত আহমেদ মজুমদার।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চার লেনবিশিষ্ট নতুন এ সেতুটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমান চার লেনের মহাসড়কে পুরনো সেতুটি মাত্র দুই লেন বিশিষ্ট। ফলে দুদিক থেকে আসা গাড়ির চাপ সামাল দিতে না পেরে সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় মেঘনার দুই প্রান্তে। ঈদ বা কোনো উৎসব এবং ছুটির দিনগুলোতে এ চাপ বেড়ে শত কিলোমিটারের যানজটও তৈরি হয়। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে আশা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় মেঘনা সেতু চালু হলে যানজটের ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন এ পথে চলাচলকারী চালক ও যাত্রীরা। স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবেন তারা। চালক ও যাত্রীদের দাবি, ঈদের আগেই যেন খুলে দেওয়া হয় চার লেনবিশিষ্ট এই নতুন সেতুটি।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি পেলে নতুন নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু উদ্বোধন করা হবে। উন্মুক্ত করে দেয়া হবে যানবাহন চলাচলের জন্য। একই সঙ্গে শুরু হবে পুরনো মেঘনা সেতুর সংস্কারের কাজ। নতুন সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে এই মহাসড়কে এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মেঘনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক শওকত আহমেদ মজুমদার জানান, চার লেনবিশিষ্ট দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৩০ মিটার। ১১টি পিয়ার ও দুটি অ্যাপার্টমেন্ট জয়েন্টের ওপর নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৮শ কোটি টাকা। পুরনো মেঘনা সেতু সংস্কারে ব্যয় হবে আরো ৪০০ কোটি টাকা। মোট ব্যয় হবে ২২শ কোটি টাকা। সেতুর ঢাকা প্রান্তে প্রায় এক কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম প্রান্তে এক কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং পশ্চিম পাশে সেতুর নিচ দিয়ে ৫০৭ মিটার দৈর্ঘ্যের সার্ভিস রোড নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা এবং দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ এবং পুরনো তিনটি সেতুর সংস্কারসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়েছিল প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার।

প্রায় সাত মাস আগে এই নতুন তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানান প্রকল্প ব্যবস্থাপক শওকত আহমেদ মজুমদার।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো বড় প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের আগে সম্পন্ন হয়েছে এবং ব্যয়সাশ্রয় হয়েছে। এটি বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকারের জন্য একটি মাইফলক ও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটি সম্ভব হয়েছে দুটি কারণে, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনিটরিং এবং জাপানের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও তাদের কর্মদক্ষতায়।’

মেঘনা সেতুর আবাসিক প্রকৌশলী শেখ জহির উদ্দিন বলেন, ‘জাপানের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি এসপি ফাউন্ডেশন ও স্টিল কনক্রিট কম্পোজিটের ওপর এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ ব্যবহারের কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় চার-পাঁচ মাস আগে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম এই প্রযুক্তি ব্যবহূত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন সরকারের টাকা সাশ্রয় হয়েছে, অন্যদিকে সেতুটি খুলে দেওয়া হলে যাত্রী ও চালকদের যানজটের ভোগান্তি লাঘব হবে।’

মেঘনা সেতুর প্রকৌশলী আমিনুল করিম জানান, পুরনো মেঘনা সেতুতে প্রায় ১০ থেকে ১২টি এক্সপেনশন জয়েন্ট রয়েছে। কিন্তু ৯৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় মেঘনা সেতুতে মাত্র একটি জয়েন্ট এক্সপেনশন। যে কারণে এই সেতুতে যানবাহন চলাচলে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না। বিমানবন্দরের রানওয়ের মতো খুব দ্রুতগতিতে সেতুতে যানবাহন চলাচল করবে। এছাড়া দ্বিতীয় মেঘনা সেতু চার লেনের এবং পুরনো সেতুটি দুই লেনের। অর্থাৎ দুটি সেতুতে মোট লেন আছে ছয়টি। চার লেনের সড়ক দিয়ে যানবাহন এসে দুটি সেতুতে ছয় লেনে চলাচল করতে পারবে। ফলে আগের মতো সেতুর কারণে আর যানজট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে চলাচলকারী স্টার লাইনের চালক সাব্বির আহমেদ জানান, চার লেনের সড়ক থেকে গাড়ি এসে মেঘনা সেতুতে উঠতো দুই লেনে। এছাড়া সেতুটি বেশি খাড়া হওয়ায় লোডেড যানবাহন সেতুতে উঠতো বেশ ধীরগতিতে। যে কারণে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও ঈদের সময় যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে, এই সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হতো। যানজটের কারণে শুধু মেঘনা সেতু পার হতেই তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যেত। দ্বিতীয় মেঘনা সেতু চার লেনের হওয়ায় ভোগান্তি কমবে।

দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণ করায় হানিফ পরিবহনের চালক ইউনুস মিয়া সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এবারে ঈদের আগেই যেন দ্বিতীয় মেঘনা সেতু খুলে দেয়া হয়। আর ঈদের পরে যেন পুরনো সেতুর সংস্কার কাজ করা হয়। এতে করে যানবাহনের চালকরা ছয় লেনের সেতু ব্যবহার করতে পারবে। ফলে সেতুর কারণে কোনো যানবাহন আর আটকা পড়বে না।

চট্টগ্রামের যাত্রী মোরশেদ আলম চান বলেন, বর্তমান সরকার যে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে তার বড় প্রমাণ হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেনের কাঁচপুর, মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ। সরকার সফলভাবে খুব দ্রুতগতিতে এই তিনটি সেতুর কাজ সম্পন্ন করেছে। এজন্য চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads