পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে বসল সেতুর আরেকটি স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার)। ড্রেজিং করে পলি অপসারণ ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় দুদিন স্থগিত থাকার পর গতকাল শনিবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান ৩সি বসানো হয়। এটি সেতুর চতুর্দশ স্প্যান। সেতুর সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ নিয়ে স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে ১২টি ও অস্থায়ীভাবে ২টি স্প্যান। সে হিসেবে ৩সি স্থায়ীভাবে বসানো দ্বাদশ স্প্যান। এর মধ্য দিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দুই কিলোমিটারের বেশি দৃশ্যমান হলো।
একের পর এক স্প্যান বসিয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে চলছে পদ্মা সেতুর। এ স্প্যানটি বসানোর ফলে সেতুর মোট ২ হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান হলো। গাড়ি ও ট্রেনে চড়ে পদ্মা পাড়ি এখন ক্রমশ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ত্রয়োদশ স্প্যান বসানোর এক মাস তিন দিনের মাথায় বসল এই চতুর্দশ স্প্যানটি। রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে আর ২৭টি স্প্যান বসলেই।
পদ্মা সেতুর উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর বলেন, শনিবার বিকালে স্প্যানটি মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সফলভাবে বসানো হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে বহন করে নিয়ে আসে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ক্রেন।
পদ্মা সেতুর প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ২৯টি পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জাজিরা প্রান্তের স্প্যানগুলোতে রেলওয়ে স্ল্যাব ও রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। চীন থেকে আরো দুটি স্প্যান মাওয়ার পথে রয়েছে। তবে সেতুতে দুই ধরনের স্প্যান বসবে নদীর মধ্যে থাকা ৪২টি পিলারের ওপর। এর মধ্যে ৪১টি স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) মূলত স্টিলের এবং নদীর দুই পাড়ে থাকা ভায়াডাক্টের ওপর ৭টি করে ১৪টি রেলওয়ে স্প্যান এবং জাজিরা প্রান্তে ২৩৪টি সুপার-টি গার্ডার ও মাওয়া প্রান্তে ২০৪ টি সুপার-টি গার্ডার মিলিয়ে মোট ৪৩৮টি সুপার-টি গার্ডার বসবে। এতে মোট রোডওয়ে স্প্যান হবে ৮৩ টি।
পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।