• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
রিকশা বন্ধ: নেপথ্যে চক্রাকার বাস সার্ভিস

ছবি : সংগৃহীত

যোগাযোগ

রিকশা বন্ধ: নেপথ্যে চক্রাকার বাস সার্ভিস

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ জুলাই ২০১৯

রাজধানী ঢাকায় চক্রাকার বাস সার্ভিস রুটসহ তিনটি রুটে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার থেকে এ ঘোষণা কার্যকর হবে। ঢাকা মহানগরীর অবৈধ যানবাহন বন্ধ, ফুটপাত দখলমুক্ত ও অবৈধ পার্কিং বন্ধে গঠিত কমিটির সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এ ঘোষণা দিয়েছিলেন।

যেসব রুটে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো হলো-কুড়িল থেকে রামপুরা হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত, গাবতলী থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর ও সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত।

গত ৩ জুলাই দক্ষিণ নগর ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভা শেষে এই রুটগুলোতে রিকশা চলাচল বন্ধের পাশাপাশি সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে পর্যালোচনায় দেখা গেছে, যে তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের কথা বলা হয়েছে, সেসব সড়কে অযান্ত্রিক এই বাহনটির চলাচল বেশ কয়েক বছর আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এসব সড়কে মেট্রোপলিটন পুলিশেরও (ট্রাফিক) পক্ষ থেকেও রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। বর্তমানে কেবল কুড়িল থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়কটির কিছু অংশে অবাধে রিকশা চলাচল করে। এই সড়কের পুরো অংশে রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আগে থেকে ছিল কি না, তা অবশ্য নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া গাবতলী-আজিমপুর এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি-শাহবাগ রুটে রিকশা চলাচল করে মূলত ট্রাফিক পুলিশের শৈথিল্যের সুযোগ নিয়ে। মূলত আগের আদেশ পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় এবার সেই বিষয়টিতেই নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন মেয়র সাঈদ খোকন। ওই সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। 

তবে ধানমন্ডি-নিউমার্কেট এলাকার চক্রাকার বাস সার্ভিসের পুরোটাই রিকশামুক্ত থাকবে না। বেশ কয়েকটি সড়কে চক্রাকার বাস সার্ভিসের পাশাপাশি রিকশাও চলবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

 

ধানমন্ডি চক্রাকার বাস সার্ভিসের রুট

এই এলাকায় চক্রাকার বাস সার্ভিসের জন্য দুটি রুট ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম রুটের শুরু আজিমপুর থেকে। রুট পরিকল্পনা অনুযায়ী এই বাসটি প্রতিদিন নিউমার্কেট-সায়েন্সল্যাব-ধানমন্ডি ২ নম্বর রোড হয়ে সিটি কলেজের সামনে দিয়ে আগে সাত মসজিদ সড়কে যাবে। সেখান থেকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক দিয়ে ঘুরে সোবহানবাগ-রাসেল স্কয়ার-কলাবাগান-ধানমন্ডি ৬ নম্বর সড়ক মোড়-ধানমন্ডি ৩ নম্বর সড়ক মোড় হয়ে আবারো সায়েন্সল্যাব দিয়ে নিউমার্কেট হয়ে আজিমপুর পৌঁছবে।

এর পরের বার বাসটি আজিমপুর থেকে যাত্রা শুরু করে পলাশী দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে নীলক্ষেত-কাঁটাবন হয়ে বাঁয়ে মোড় নেবে। এরপর বাটা ক্রসিং-সায়েন্সল্যাব হয়ে আবারো ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়ক দিয়ে জিগাতলা হয়ে সাত মসজিদ সড়কের দিকে যাবে। দিনভর এভাবেই এই রুটে গাড়ি চলবে। মূলত গাড়ি ঘোরানোর কারণে যানজট সৃষ্টি হওয়া এড়াতে বাসটির এমন রুট পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এই চক্রাকার বাস সার্ভিসের আরেকটি রুটের শুরু হচ্ছে সোবহানবাগ থেকে। এটি রাসেল স্কয়ার দিয়ে কলাবাগান-ধানমন্ডি ৬ নম্বর সড়ক মোড়-ধানমন্ডি ৩ নম্বর সড়ক মোড় হয়ে সায়েন্সল্যাব দিয়ে বাঁয়ে বাটা ক্রসিংয়ের দিকে যাবে। সেখান থেকে কাঁটাবনে ঘুরে নীলক্ষেত-পলাশী হয়ে আজিমপুর পৌঁছবে। এরপর আবারো যানজট এড়াতে আজিমপুর থেকে নিউমার্কেট-সায়েন্সল্যাব-ধানমন্ডি ৩ নম্বর সড়ক-৬ নম্বর সড়ক মোড়-কলাবাগান-সোবহানবাগ হয়ে ২৭ নম্বর সড়ক ঘুরে সাত মসজিদ রোডে পৌঁছবে। এই সড়ক দিয়ে বিজিবি সদর দপ্তরের সামন ধরে ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়ক হয়ে ধানমন্ডি ৩ নম্বর সড়কের সামনে ডানে ইউটার্ন নিয়ে আবারো সায়েন্সল্যাব-বাটা ক্রসিং-কাঁটাবন-নীলক্ষেত-পলাশী হয়ে আজিমপুর পৌঁছবে। এর পরেরবার এটি আবার রওনা হবে নিউমার্কেটের সামনে দিয়ে।

তবে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু হলেও এখনো তা পুরো রুটে চলছে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকনও স্বীকার করেছেন এ কথা। বাসগুলো এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। এর কারণ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে,  প্রধান সড়কে রিকশা চলাচলের কারণে এই বাসগুলোসহ অন্য পরিবহনের যাতায়াতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়ে থাকে।

সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, এই রুটগুলোর মধ্যে ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়ক থেকে সাত মসজিদ সড়ক পর্যন্ত এবং ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে রিকশা চলাচল করবে। পলাশী-নীলক্ষেত-কাঁটাবন রুটেও রিকশা চলাচল করবে।

এদিকে সিটি করপোরেশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আগের ঘোষণা অনুযায়ী গাবতলী থেকে আজিমপুর এলাকা পর্যন্ত প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে বর্তমানে সায়েন্সল্যাব থেকে নিউমার্কেট হয়ে আজিমপুর রুটে একটি বিশেষ লেন দিয়ে রিকশা চলাচল করছে। ফলে গাবতলী থেকে আজিমপুর পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ নতুন কোনো ঘোষণা নয়, আগের নির্দেশ পুরোপুরি কার্যকর করতে না পেরে তাতে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে মাত্র। সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ সড়কটিতেও আগে থেকেই রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও তেমন কড়াকড়ি ছিল না। ট্রাফিক পুলিশ বিষয়টি ঢিলেঢালাভাবে দেখায় বর্তমানে সীমিত আকারে এই রুটে রিকশা চলাচল করছে। এবার এই সড়কটিতে রিকশা চলাচল একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মেয়রের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৭ জুলাই থেকে এ রুটে আর রিকশা চলাচল করতে পারবে না।

এ ছাড়া কুড়িল-রামপুরা-সায়েদাবাদ সড়কে বর্তমানে যানবাহনের সঙ্গে রিকশাও চলাচল করছে। এই সড়কেও রিকশা চলাচল আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল। এবার এই প্রধান সড়কটিও রিকশামুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, যে তিনটি সড়ক রিকশামুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা নতুন নয়। মূলত আগের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে না পারায় এখন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে মাত্র।

তবে চক্রাকার বাস ধানমন্ডিবাসীর সুবিধার লক্ষ্যে চালুর কথা বলা হলেও এ এলাকার অন্যতম প্রধান সড়ক ধানমন্ডি ২ নম্বর থেকে সাত মসজিদ সড়ক এবং ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কটি রিকশামুক্ত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়নি। একইভাবে পলাশী থেকে কাঁটাবন পর্যন্ত সড়কটিতেও রিকশা চলবে। এসব রিকশা হাতিরপুল হয়ে সেন্ট্রাল রোড, বসুন্ধরা শপিংমল, পান্থপথ ইত্যাদি রুটে আগের মতোই নির্বিঘ্ন চলাচল করতে পারবে। ফলে চক্রাকার বাস সার্ভিসের এসব অংশে রিকশাজট লেগেই থাকবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘চক্রাকার বাসের পুরোটা আপাতত কাভার করা যাচ্ছে না। প্রথম অবস্থায় আমরা গাবতলী থেকে আজিমপুর (মিরপুর রোড) ও সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ সড়ক এবং কুড়িল থেকে রামপুরা-খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ সড়ক রিকশামুক্ত করব। এর মাধ্যমে এই রাস্তাগুলো কিছুটা ফাঁকা হলে পর্যায়ক্রমে চক্রাকার বাসের সংখ্যা বাড়াব। এতে রাজধানীবাসী নিরাপদ ও আরামদায়ক গণপরিবহন পাবেন। পাশাপাশি যানজটও কমবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads