• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
চার লেন প্রকল্পের কাজে চলছে মন্থরগতি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে দূর্ভোগ

চার লেন প্রকল্পের কাজে চলছে মন্থরগতি

  • কুদরত উল্যাহ, মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা)
  • প্রকাশিত ১৬ নভেম্বর ২০১৯

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের লাইফলাইন খ্যাত কুমিল্লা-লাকসাম-মনোহরগঞ্জ-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটি চলাচলে ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় দুঃসহ দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চললেও দুর্ভোগ লাঘবে শিগগিরই সুখবর পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের মানুুষ। নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

কুমিল্লা-লাকসাম-মনোহরগঞ্জ নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। কুমিল্লা,চাঁদপুর, নোয়াখালী, ও লক্ষ্মীপুর জেলার লাখ লাখ মানুষ এ সড়ক দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকেন। এ সড়কে প্রতিদিন বাস ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, কাভার্ড ভ্যান, সিএনজি, অটোরিকশা, মটরসাইকেল সহ প্রায় সব ধরনের যান চলাচল করে। বছরের পর বছর এ সড়কটির বেহাল দশা বিরাজ করছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে বর্তমান সরকার সড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করণের পরিকল্পনা নেয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের ২৪শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকে কুমিল্লা-লাকসাম-মনোহরগঞ্জ-নোয়াখালী সড়কের কুমিল্লার টমছম ব্রীজ থেকে নোয়াখালী-বেগমগঞ্জ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ৪৯ কিলোমিটার সড়ক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ১৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সড়কের কুমিল্লার অংশে ৪৫ কিলোমিটার এবং নোয়াখালী অংশে রয়েছে ১৪ কিলোমিটার। সড়কটির বর্তমান প্রশস্থতা ৪০ থেকে ৪৫ ফুট। চার লেনে ৯০ ফুটে উন্নীত হবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

কুমিল্লা-লাকসাম-মনোহরগঞ্জ-নোয়াখলী চার লেনে উন্নীত করণের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাহের ব্রাদার্স, রানা বিল্ডার্স ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড যৌথভাবে সড়কের আধুনিকায়নের কাজ করছে। চুক্তি মোতাবেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু করলেও ধীরগতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার লেনের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এ সড়কের কাজে অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কুমিল্লা- লাকসাম-মনোহরগঞ্জ-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কিছু অংশে চার লেনে উন্নীত হলেও সড়কের অধিকাশই ঝুকিপূর্ণ। বিশেষ করে পদুয়ার বাজার, শ্রীমন্তপুর, উত্তর রামপুর, বিজয়পুর, লালমাই, বাগমারা, জয়নগর, আলিশ্বর, হরিশ্চর, ফয়েজগঞ্জ, মিশ্রী, জংশন, লাকসাম বাইপাস, চাঁদপুর রেলগেইট, দক্ষিন বাইপাস, ফতেহপুর, বাটিয়া ভিটা, চন্দনা বাজার, পিচঢালাই সড়কের খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে যানবাহনের চাকা পড়ে আটকে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে গাড়ীর মুল্যবান যন্ত্রাংশ, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। দীর্ঘদিন সড়কটির প্রত্যাশিত সংস্কার না হওয়ায় কুমিল্লা, চা‍ঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, জেলার লাখ-লাখ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

মাঝে মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মীরা গর্তগুলোতে ইটের সুরকী ও বালু দিয়ে রোলার মেশিনে চাপা দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করলেও কিছুদিন পর আবার সমস্য দেখা দেয়। সড়কটিতে অন্তঃসত্বা নারী, বয়স্ক মানুষ ও শিশুদের চলাচল একবারেই অনিরাপদ, অতিরিক্ত ঝাঁকুনির কারনে যাত্রীদের অনেকের শরীর ব্যাথা হয়ে যায়। কুমিল্লার পদুয়ার বাজার থেকে লাকসাম পর্যন্ত যাতায়াতে আধঘন্টা সময় লাগলেও এখন লাগে দেড় থেকে ২ ঘন্টা। এত যাত্রীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

কুমিল্লা-লাকসাম-মনোহরগঞ্জ-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এ সড়কে প্রতিনিয়ত হচ্ছে দুর্ঘটনা। গত ৫ বছরে এ সড়কে ছোট বড় দুর্ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ও শত শত মানুষ আহত হয়েছে। চলতি বছরের ১৮ই আগষ্ট লালমাই এলাকায় জামতলী নামক স্থানে তিশা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস একটি যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিক্সাকে চাপা দিলে নাঙ্গলকোটের একই পরিবারের ছয়জন সহ আটজন নিহত হয়।

কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ডক্টর মোহাম্মদ আহাদ উল্লার সাথে কথা হলে তিনি জানান, কুমিল্লা-লাকসাম-মনোহরগঞ্জ-নোয়াখালী-মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করণের কাজ চলছে। এজন্য মেরামত কাজে বড় বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এর পরেও মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচায় আমরা বিভাগীয় এলাকাগুলোকে সংস্কার করছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads