• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
রাবি শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে ছাত্রলীগ নেতার চাঁদা আদায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)

সংক্ষিত ছবি

অপরাধ

রাবি শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে ছাত্রলীগ নেতার চাঁদা আদায়

  • রাবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১০ নভেম্বর ২০১৮

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলে জিম্মি করে ২০ হাজার টাকা আদায় করেছে শাখা ছাত্রলীগ নেতাসহ স্থানীয় এক শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ১৯১ নম্বর কক্ষে ঘটে এ ঘটনা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে না দেখা গেলেও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে শুক্রবার রাত ৮টার মধ্যে টাকা উদ্ধার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ভুক্তভোগী আল ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচণ্ডীর এক মেসে থাকে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শাফিউর রহমান শাফি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও ফারসি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং নাইম ইসলাম ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তবে নাইম ছাত্রলীগের কেউ না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী ফারুক জানায়, গত দুই দিন আগে আমার বিভাগের বড় ভাই নাইম আমাকে সোহরাওয়ার্দী হলের বড় ভাইদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার পরীক্ষা থাকায় যেতে পারব না বলেছি। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জোর করলে আমি তার সঙ্গে হলে আসা মাত্রই আমাকে ১৯১ নম্বর কক্ষে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে শাফি বলে, ‘তোর ফোনটা দে। পরে ফোন নিয়ে ফেসবুক লগইন করে বলে, তুই শিবির করিস, তুই এই পেজে লাইক দিছোস। আমি শিবির করি না, এটা তাদেরকে বলি। তারা আমাকে মারতে থাকে। চড়-থাপ্পড় মারে। একপর্যায়ে রড দিয়েও পিঠে আঘাত করে।’ পরে একপর্যায়ে সেখান থেকে বাঁচতে হলে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি করে। আমি বাবাকে ফোন দিলে আমার বড় ভাই ১০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠায়। তারা পরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে, এই কথা যদি বলিস, তবে তোর খবর আছে। 

এ ঘটনার পর রাত ১১টার দিকে সাংবাদিকদের ফোনে ঘটনাস্থল শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে আসেন রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু। ওই হলের গেস্ট রুমে আল ফারুকসহ সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেন। পরে টাকা পাঠানোর বিকাশ নম্বরে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শাফি ঘটনার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করে বলেন, আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি টাকার কোনো খবর জানি না। কিন্তু একটু পরেই সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে সব স্বীকার করে নেন এই নেতা। তিনি বলেন, সব টাকা নাইমের কাছে।

ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু ২০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আগে টাকা উদ্ধার করতে হবে। টাকা তো নাইমের কাছে। নাইম ছাত্রলীগের কেউ না। শুক্রবার রাত ৮টায় এ হলের এখানেই ফারুকের ২০ হাজার টাকা আপনাদের (সাংবাদিকদের) উপস্থিতিতে দেওয়া হবে। আর নাইমের বিরুদ্ধে অপহরণ বা অন্য কোনো মামলা দায়ের করা হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে এ ঘটনায় শাফি কেন এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে তার কক্ষে স্থান দিল সেই মর্মে তাকে শোকজ করা হলো এবং সাত দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ঘটনাস্থলে আসেননি। এমনকি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার বিষয়ে জানালেও দায়িত্ব নিতে চাননি বলে অভিযোগ করেন হলের শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, আমি ওই ছেলেকে (ফারুক) ফোন দিয়েছি সকালে। তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। আর যেহেতু অভিযুক্তদের পাওয়া গেছে, তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে আইন অনুযায়ী।

ফারুককে ছেড়ে দেওয়ার পর আপনি বা আপনার প্রশাসনের কেউ আসেননি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, তখন রাত অনেক ছিল। আমার আসা হয়তো সম্ভব হয়নি। তবে আমার যোগাযোগ ছিল অন্যদের সঙ্গে। হয়তো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ তাদের চোখে পড়েনি, তাই তাদের ভেতরে একটু ক্ষোভ আছে হয়তো। কিন্তু আমার সব ধরনের ব্যবস্থাই ছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads