• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
জামালপুরে খাদ্যগুদামে নিম্নমানের চাল সরবরাহ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

জামালপুরে খাদ্যগুদামে নিম্নমানের চাল সরবরাহ

  • আবদুল লতিফ লায়ন, জামালপুর
  • প্রকাশিত ২৬ জুন ২০১৯

জামালপুরে সরকারিভাবে চাল কেনা নিয়ে জেলায় চলছে তুঘলকি কাণ্ড। কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে জামালপুরের মাদারগঞ্জ খাদ্যগুদামে নিম্নমানের চাল সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে চাল সরবরাহকারী মিলারদের বিরুদ্ধে।

প্রতি বছরই খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ অধিকাংশ নামসর্বস্ব মিলারের মাধ্যমে নিম্নমানের চাল ক্রয় এবং পরে তা বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করছেন। দুর্গন্ধযুক্ত এসব চাল হতদরিদ্ররা খেতে না পেরে পানির দরে বিক্রি করছে। এতে প্রকল্পে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে।

জানা গেছে, এবার বোরো মৌসুমে উপজেলায় খাদ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ১৫ মিল মালিকের কাছ থেকে ১ হাজার ৫১৫ টন বোরো চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সরেজমিন গুনারীতলা বাজারের তরী রাইস মিল, শ্যামগঞ্জ বাজারের রশিদ ট্রেডার্স রাইস মিল, দিঘলকান্দি বাজারের শামীম রাইস মিল, আদারভিটা বাজারের ইব্রাহীম রাইস মিল, উত্তর চরবওলার মুক্তি রাইস মিল, সুখনগরীর আরাফাত রাইস মিল ও মোসলেমাবাদ বাজারের প্রান্তি রাইস মিলে গিয়ে শুধু ধানভাঙার মেশিন পাওয়া যায়। যেগুলোতে শুধু এলাকার লোকজনের ধান ভাঙা হয়। মিলগুলোতে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহের লাইসেন্স পাওয়ার প্রাথমিক শর্ত ধান শুকনোর চাতাল কিংবা ধান সেদ্ধ করার ড্রাম নেই।

জানা গেছে, সরকারিভাবে সংগ্রহের জন্য এবার প্রতি কেজি চালের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৬ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী মিলাররা সদ্য সংগ্রহ করা বোরো ধান নিজস্ব মিলে ভাঙিয়ে তা খাদ্যগুদামে সরবরাহ করবে।

কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্তমানে খুচরা বাজারে ধান ৬০০ টাকা মণ ও মোটা চাল ২৮-২৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও মিলাররা নিজেদের মিলে ধান না ভাঙিয়ে বিভিন্ন অটোরাইস মিল থেকে কম দামের নিম্নমানের চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহ করছেন। এছাড়া অসাধু মিলাররা হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা ভিজিডি-ভিজিএফের নিম্নমানের চাল ১০-১২টাকা কেজি দরে কিনে তা আবার খাদ্যগুদামে সরবরাহ করছে বলেও অভিযোগ আছে। যে কারণে সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে পচা চাল শেষ হয় না কখনো।

জানা গেছে, চাল সরবরাহকারী ১৫ জন মিলারের মধ্যে অন্তত ৮ মিলারের পক্ষে চাল সরবরাহ করছে সেলিম রাইস মিলের স্বত্বাধিকারীর ছেলে সেলিম এবং মিল মালিক সমিতির সভাপতি ও সেতু রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আবদুল ওয়াদুদ। জোনাইল গ্রামে একই চাতালে সেলিম রাইস মিল ও সামিহা রাইস মিলের নামে ২৮০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে সেলিম ও সামিহা রাইস মিল দুইটি বন্ধ পাওয়া যায়। বরাদ্দের ২৮০ টন চাল পুরোটাই অটো রাইস মিল থেকে কিনে খাদ্যগুদামে সরবরাহ করছে মিল মালিক মনোহর আলীর ছেলে সেলিম। অচল ওই দুই মিলের বিদ্যুৎ মিটারে গত এপ্রিল মাসে ৩০ ইউনিট এবং মে মাসে মাত্র ৯০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে বলে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে। একইভাবে একই চাতাল ও মিল দেখিয়ে দুটি মিলের নামে ২৮০ টন চাল সরবরাহের বরাদ্দ নিয়েছেন সেতু রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আবদুল ওয়াদুদ। তিনি হক রাইস মিলের নামে বরাদ্দ ৭০ মেট্রিক টন চালও সরবরাহ করছেন বলে জানান মিলটির মালিক শাহাদত হোসেন রিপন।

রিপন জানান, নিজে চাল সরবরাহ না করলেও তিনি প্রতি কেজিতে এক টাকা করে অন্তত ৭০ হাজার টাকা মুনাফা বসে থেকেই পাবেন।

সায়লা রাইস মিল মালিক সুলতান আহম্মদ জানান, তার বরাদ্দের ১০৫ টন চাল সরবরাহ করছেন সেলিম রাইস মিলের মালিক সেলিম। ১০০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের বরাদ্দ পাওয়া পৌরসভার কনা রাইস মিলের চাতাল থাকলেও ৩ বছর আগে মিলটি মাসিক ৬ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হয়েছে।

ভাড়াটিয়া বেলাল মিয়া জানান, তিনি ধানের তুষ থেকে কুঁড়া তৈরির জন্য এ মিল চালিয়ে মাসে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছেন। এই বিদ্যুৎ বিল দেখিয়েই মিলটি সচল হিসেবে লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। মিল মালিক ফরিদুল ইসলাম ১০০ টন চাল মেলান্দহ উপজেলা থেকে কিনে গুদামে সরবরাহ করছেন বলে জানান।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মিল মালিকরা সর্বক্ষণ খাদ্যগুদামে ওসিএলএসডির অফিসে বসে শুধু মোবাইল ফোনে অটো রাইস মিল মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে চাল সরবরাহ নিয়ে সরকারি খাদ্যগুদামে ঢুকাচ্ছেন। এভাবে মিলাররা বিনা পরিশ্রমে নিম্নমানের চাল সরবরাহ করে প্রতি কেজিতে ৭-৮ টাকা করে অন্তত এক কোটি টাকা মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিম্নমানের চাল সরবরাহ করতে তারা ওসি এলএসডি ও খাদ্য কর্মকর্তাকে প্রতি কেজি চালের জন্য দেড় টাকা করে প্রায় ২৫ লাখ টাকা উৎকোচ দিচ্ছেন।

তবে মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুদাম কর্মকর্তাদের অত টাকা দিতে হয় না,বরাদ্দ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিতে হয়।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ্ জানান, চাতালে মসজিদ নির্মাণ করায় একটি মিলের বরাদ্দ বাতিল করে তিনি অনেক নাজেহাল হয়েছেন। তিনি বলেন, আপনারা সাথে থাকলে চাতালবিহীন ৬-৭টি মিলসহ অচল মিলের লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা করব।

ওসি এলএসডি রফিকুল ইসলাম জানান, ডিলাররা বাইরে থেকে চাল কিনে সরবরাহ করলেও চালের মান ভালো। উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, মিলাররা প্রতি টনে ৫০০ টাকাও দিতে চায় না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads