• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
নুসরাত হত্যা : সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেবে পিবিআই

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

নুসরাত হত্যা : সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেবে পিবিআই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ জুলাই ২০১৯

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার সাক্ষীরা যেন কোনো হুমকি বা চাপের মুখে না পড়ে, সে ব্যাপারে পুলিশের বাড়তি সতর্ক দৃষ্টি আছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।

গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ডিবেট ফর ডেমক্রেসি আয়োজিত ‘ছায়া সংসদ বিতর্ক’ প্রতিযোগিতায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সাক্ষীদের যাতে কেউ প্রভাবিত এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা। এখন পর্যন্ত এ মামলায় ৯২ জন সাক্ষী। এর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্য আদালত গ্রহণ করেছেন। বাকিদেরও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। তবে এ মামলায় ১-৭ পর্যন্ত সাক্ষীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাকি ৮-৩২ পর্যন্ত সাক্ষীর ওপর মামলার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।

পিবিআই-প্রধান বলেন, আমরা খুবই সজাগ, পিবিআই, পুলিশ সদর দপ্তর, জেলা পুলিশ সুপার যাতে এখানে ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো প্রকার সাক্ষ্য নড়চড় করা না যায়, আমরা সেটি মনিটরিং করছি।

নুসরাত হত্যার বিচার সুষ্ঠু ও দ্রুত সম্পন্ন হবে-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, আমাদের ভাগ্য ভালো যে, এখানে পাবলিক প্রসিকিউটরের বাইরেও নুসরাত জাহান রাফির মামলার পক্ষে তার ভাই একজন সলিসিটর নিয়োগ করেছেন।

এ মামলায় কোনো রাজনৈতিক বা মানসিক প্রভাব আছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব মামলায় মানসিক চাপ থাকে। এই মামলায়ও মানসিক চাপ ছিল। তবে সব ধরনের চাপ অতিক্রম করেই মামলার চার্জশিট দিয়েছি।

নিজ কক্ষে ওসি ভুক্তভোগী নুসরাতের ভিডিও করেছিলেন। সেটি তিনি করতে পারেন কি না-জানতে চাইলে বনজ কুমার বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে ওসি ভিডিও করতে পারেন। তবে নুসরাতের ঘটনার ক্ষেত্রে ওসি মোয়াজ্জেমের ভিডিও করার এখতিয়ার ছিল না। এটা তার বাড়াবাড়ি ছিল।

ওসি মোয়াজ্জেমকে হাতকড়া না পরিয়ে বীরের মতো আদালতে নেওয়া হয়েছে, পক্ষান্তরে সিনিয়র সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ বিষয়ে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, যদি আসামি পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে আসামিকে পুলিশ হাতকড়া পরাতে পারেন। কিন্তু অসুস্থ কোনো মানুষকে পুলিশ হাতকড়া পড়াতে পারে না। ওই সিনিয়র সাংবাদিককে যে হাতকড়া পরিয়েছিল সেটা তার ঠিক হয়নি। এতদিনে হয়তো ওই পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তিও হতে পারে।

নারী নিপীড়ন প্রতিরোধে মূল্যবোধের চর্চা থাকা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারী-শিশু নির্যাতনসহ সব ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মূল্যবোধের চর্চা থাকা প্রয়োজন। কারণ নারী নির্যাতনের বিষয়গুলোতে দেখা যায় শিক্ষিত, অশিক্ষিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের আপন সদস্যরাও জড়িত থাকে। এ জন্য মূল্যবোধের চর্চা করা প্রয়োজন।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত পরীক্ষায় অংশ নিতে মাদরাসায় গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ডেকে কৌশলে মাদরাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পাঁচ দিন পর ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নুসরাতের। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

এ মামলায় পিবিআই ও পুলিশ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার দায় স্বীকারকারী পাঁচজনসহ মোট ১২ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরবর্তী সময়ে গত ২৯ মে নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক শাহ আলম জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসেনের আদালতে ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে এর বাইরে থাকা পাঁচ ব্যক্তিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত।

‘সাহসিকতা নুসরাত, তুমিই যুক্তি, তুমিই প্রতিবাদ’ স্লোগানে ডিবেট ফর ডেমক্রেসি আয়োজিত বিতর্কের মূল বিষয় ছিল ‘নারী নিপীড়ন প্রতিরোধে মূল্যবোধের চর্চা’।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেয় সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ও ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া। বিরোধী দল হিসেবে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads