• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
আসামিকে নির্দোষ দাবি পুলিশের

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

আসামিকে নির্দোষ দাবি পুলিশের

  • এমদাদুল হক খান
  • প্রকাশিত ২০ জুলাই ২০১৯

র্যাবের হাতে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার এক যুবলীগ নেতাকে নির্দোষ দাবি করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। মাত্র ২৭ দিনের মাথায় মো. রাশেদুজ্জামান জুয়েল মন্ডল (৩৫) নামে ওই যুবলীগ নেতাকে অব্যাহতি দিয়ে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, হত্যাসহ ১৩ মামলার এই আসামির প্রশংসায় পঞ্চমুখ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে র্যাবের অভিযানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এ মামলায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার জুয়েল মণ্ডলের জামিনের বিরোধিতা না করায় সরকারপক্ষের আইনজীবীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, গত ২৭ মে দুপুর ১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের গাছা থানার চান্দরা গ্রামের চেয়ারম্যানবাড়িতে অভিযান চালিয়ে যুবলীগ নেতা রাশেদুজ্জামান জুয়েল মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১-এর একটি দল। এ সময় তার কাছ থেকে ২টি পিস্তল, ৩টি ম্যাগাজিন ও ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গাছা থানায় র্যাব-১-এর পক্ষে নায়েব সুবেদার শ্রী কিরণ চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেন (নম্বর ৩৯, তারিখ: ২৭/০৫/২০১৯ইং)। এ মামলার তদন্তভার পান গাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হাফিজুর রহমান। তিনি মাত্র ২৭ দিনের মাথায় গত ২৪ জুন আদালতে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় হতবাক গাজীপুরবাসী।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসআই হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার তদন্তে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা সঠিক বলে প্রতীয়মান হলেও অস্ত্র, গুলি কে, কোথায়, কেন, কার দখলে ও নিয়ন্ত্রণে এবং জ্ঞানের মধ্যে রেখেছে, সে বিষয়ে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের বিষয়ে আসামি জুয়েল মণ্ডলকে দায়ী করার মতো দালিলিক বা চোখে দেখা সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। বাদী নিজেও এ বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেননি। জুয়েল মণ্ডলের রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে জুয়েল মণ্ডলকে ফাঁসানোর হীন উদ্দেশ্যে বিশেষায়িত বাহিনী র্যাবকে ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে তাদের সংগৃহীত অচল অস্ত্র জুয়েল মণ্ডলের বাড়ির আঙিনায় ফেলে বা অন্য কোথাও রেখে র্যাবকে মিসগাইড করেছে, যা তথ্যগত ভুল বলে প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়া জুয়েল মণ্ডলের পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় সে বৈধ অস্ত্র ক্রয়ের সক্ষমতা রাখে বলে প্রতীয়মান হয়। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ব্যক্তির কাছে অবৈধ অচল অস্ত্র থাকার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ।’

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসআই হাফিজুর র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ আটক এই যুবলীগ নেতার প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘পারিবারিকভাবে জুয়েল মণ্ডল ঐতিহ্য, শিক্ষা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং স্থানীয় গাছা থানা যুবলীগের সভাপতি পদে জোরাল প্রার্থী। বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রতিরোধে জুয়েল মণ্ডলের ব্যাপক ভূমিকা ছিল।’

এ ব্যাপারে জানতে এসআই হাফিজুরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তদন্তে আমি যা পেয়েছি, তাই দিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনের কথা জানেন না মামলার বাদী র্যাব-১-এর নায়েব সুবেদার শ্রী কিরণ চন্দ্র সরকার। বিষয়টি শুনে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। মোবাইলফোনে বাংলাদেশের খবরকে শ্রী কিরণ চন্দ্র সরকার বলেন, জুয়েল মণ্ডলকে র্যাব হাতে-নাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে। এরপরও যদি তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে থাকেন, তাহলে র্যাবের কাছে কপি আসার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাশেদুজ্জামান জুয়েল মণ্ডলকে জামিন দিয়েছেন গাজীপুর দায়রা জজ ড. এ কে এম আবুল কাশেম। জামিন আদেশে তিনি বলেন, ‘আসামি এজাহার নামীয়। এজাহারে আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। আসামিকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মিথ্যা মামলায় জড়িত করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তে আসামির বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধান কোডের ১৭৩ ধারামতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তথ্যগত ভুল দাখিল করেছেন। দরখাস্তকারী আসামি গত ২৭ মে-২০১৯ ইং থেকে জেলহাজতে আটক আছেন। বিজ্ঞ কৌঁসুলি যেকোনো শর্তে আসামির জামিন মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। রাষ্ট্রপক্ষে বিজ্ঞ পিপি আসামির জামিনের বিরোধিতা করেননি। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আসামিকে ৫ হাজার টাকার বন্ডে একজন আইনজীবীসহ স্থানীয় একজন জামিনদারের জিম্মায় আগামী ১ আগস্ট-২০১৯ ইং পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করা হলো।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads