• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ছেলেধরা গুজব: গণপিটুনিতে নিহত নারীসহ ৩ জন

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

ছেলেধরা গুজব: গণপিটুনিতে নিহত নারীসহ ৩ জন

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২০ জুলাই ২০১৯

ছেলেধরা সন্দেহে আজ শনিবার রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে গণপিটুনিতে নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আর নেত্রকোনায় দুর্গাপুরের এক কিশোর গণপিটুনির শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছে।

ঢাকা: রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় সকালে অজ্ঞাত এক নারী নিহত হয়েছেন।

বাড্ডা থানার পরিদর্শক ইয়াসিন গাজী জানান, সকাল ৮টার দিকে উত্তর বাড্ডা সরকারি স্কুলের সামনে অজ্ঞাত এক নারীকে (৪২) সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে ছেলেধরার গুজব সৃষ্টি হলে স্থানীয়রা তাকে গণপিটুনি দেয়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কেরানীগঞ্জ: সকালে উপজেলার রসুলপুর গ্রামে গণপিটুনিতে এক যুবক নিহত এবং অপর একজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের দিকে দুই যুবক কয়েকজন শিশুর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয়রা ছেলেধরা সন্দেহে তাদের গণপিটুনি দিলে দুজনই গুরুতর আহত হন।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে একজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং অপরজনকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক চুন্নু মিয়া জানান, দুজনের মধ্যে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া যুবককে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

নারায়ণগঞ্জ: সিদ্ধিরগঞ্জে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক স্থানে দুজনকে গণপিটুনি দিয়েছেন স্থানীয়রা। এতে অজ্ঞাত এক যুবকের মৃত্যু এবং শারমিন (২০) নামে এক নারী আহত হন।
সকাল ৮টায় মিজমিজির আলামিন নগর এলাকার রাজমিস্ত্রী সোহেলের সাত বছরের মেয়ে সাদিয়াকে অপহরণ করার সন্দেহে অজ্ঞাত যুবককে আটক করে গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী।
পুলিশ গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনার দুই ঘণ্টা পর মিজমিজির শাপলা চত্বর এলাকায় ফাইজুল ইসলাম লাবিব নামে চার বছরের শিশুকে অপহরণ করার সন্দেহে এক নারীকে গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক শাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে সাদিয়াকে অপহরণের ব্যাপারে কোনো সত্যতা মেলেনি। নিহত যুবক গুজবের শিকার বলে ধারণা হচ্ছে।
অন্যদিকে, লাবিবের নানি খাদিজা আক্তার জানান, শারমিন তাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে বিভিন্ন অসংলগ্ন কথা বলেছিলেন। এতে সন্দেহ হলে এলাকাবাসী তাকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে বেঁধে রাখেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

নেত্রকোনা: নেত্রকোণার দুর্গাপুরে ছেলে ধরা সন্ধেহে টিএস খাঁন নামে কিশোরকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করছে স্থানীয়রা। শনিবার বেলা ১২ টায় পৌর শহরের সাধুপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

পরে পুলিশ গিয়ে কিশোরটিকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। আহত কিশোর উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বিলাসপুর গ্রামের মুক্তার মিয়া ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে সোমেশ্বরী নদীর বেরিবাধঁরে পাড় ধরে সাধুপাড়া এলাকায় একটি বাড়িতে ডুকে যায় ওই কিশোর। এই সময় বাড়ির ভিতরে থাকা এক মহিলা ছেলে ধরা ভেবে চিৎকার শুরু করে।তার চিৎকার শুনে আশপাশে স্থায়ী বাসিন্দারা ছুটে এসে কিশোরটি ধরে বেদম পিটুনি দেয় । এক পর্যায়ে গাছের সাথে বেধেঁ ফেলে স্থানীয়রা।

এ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে কিশোরটি উদ্ধার করে দুর্গাপুর থানা পুলিশ সদস্যরা । পরে আহত কিশোরটি দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় চিকিৎসা শেষে থানায় নিয়ে যায় ।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকরাম খাঁন জানায়, আমার ওয়ার্ডের কিছু বাসিন্দা বেলা ১২টার দিকে আমাকে মোবাইল ফোনে জানা তারা একটি ছেলে ধরা আটক করেছে। খবর শুনে ঘটনাস্থলে যাই এবং পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের হাতে ছেলেটি বুঝিয়ে দেই ।

তবে আহত কিশোর টিএস খাঁন জানায়, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতা থাকায় কোনো কাজ করতে না পাড়ায় পেটের দায়ে ভিক্ষা করে খাই। আর তাই ভিক্ষা চাইতেই একটি বাড়িতে ফেলে আমাকে ধরে গাছের সঙ্গে বেধে সবাই মিলে মারতে শুরু করে। আমি কথা বলার চেষ্টা করলে তারা আরো বেশি করে মারতে শুরু আমাকে। আমার পিঠ, হাত পাসহ সব জায়গায় মেরেছে তারা ।

এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার তদন্ত ওসি মীর মাহাবুব রহমান জানায়, ছেলেটিকে চিকিৎসা শেষে থানায় দিয়ে এসেছি। প্রাথমিকভাবে অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি তার। আসলে মানুষ আতংকের বসেই ছেলে ধরা ভেবে মেরেছে। তবে সবাইকে সর্তক থেকে কোনো গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads