বিজিবি ও বিএসএফের কঠোর নজরদারির কারণে গরু পাচার কমেছে। নিজেদের গরুর ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে বলে আশায় বুক বেঁধেছেন বাংলাদেশের খামারিরা। এ সময় বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসার হিড়িক পড়ে যায়। কিন্তু এবার তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। তবে পাচার যে একেবারে বন্ধ সেটাও বলা যাচ্ছে না। ভারতীয় এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে শত শত গরু পাচার হচ্ছে। এনডিটিভি এ দাবি করলেও বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন। সরেজমিন ঢাকার বিভিন্ন হাট পরিদর্শন করে ভারতীয় গরু পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়া থেকে ট্রাকে করে আটটি গরু নিয়ে কেরানীগঞ্জের হাটে আসা বেপারী আবদুল হামিদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গরুগুলো সন্তানের মতো যত্ন করে লালনপালন করেছি। লাভ হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ করতে পারব। প্রায় প্রতি বছরই আমাদের আশার মরণ হয়। ঈদের এক সপ্তাহ আগে ভারতীয় গরু আসার হিড়িক পড়ে। এতে গরুর দাম পড়ে যায়। আমরা ন্যায্য দাম পাই না। ফলে অপেক্ষাকৃত কম দামে গরু বিক্রি করে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। এবার ভারতীয় গরু হাটে দেখছি না। শুনেছি সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফলে ভারতীয় গরু এবার অন্যান্য বারের মতো আসতে পারছে না। আগামী ২-৩ দিন এ কঠোরতা অব্যাহত থাকলে আমরা ন্যায্য দামে গরু বিক্রি করতে পারব।
তবে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবার আগাম সতর্কতামূলক অবস্থান নিয়েছে ভারত সরকার। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে গরু পাচারের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে-এমন অভিযোগ এনে গবাদিপশু পাচার রুখতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। শীর্ষ বিএসএফ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে অতিসম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গরু পাচার রুখতে সীমান্তে অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নৌপথে বাড়ানো হচ্ছে সার্বক্ষণিক টহল।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরো দাবি করা হয়েছে, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে শত শত গরু পাচার হচ্ছে। প্রতি রাতেই পাহাঘাটি, ফুলতলা, লালপুর, ধানগ্রা, ধুলিয়ান, ছোটোশিবপুর, বড়শিবপুর, ডিস্কোমোকর, দৌলতপুরের মতো গঙ্গার তীরবর্তী গ্রাম থেকে সারি বেঁধে গরুর গলায় কলাগাছ বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেন গরুগুলো ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে যেতে পারে এবং বাংলাদেশ সীমান্তের পাচারকারীরা সহজেই যেন সেগুলো নিয়ে নিতে পারে। গত কয়েক সপ্তাহে পাচারকালে প্রায় ১ হাজার ২০০ গরু ও মহিষ আটক করেছে বিএসএফ। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রতিটি ভারতীয় গরু ও মহিষের দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ রুপিতে পৌঁছেছে বলে বিএসএফ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ঈদ সামনে রেখে ভারত থেকে যে পরিমাণ গরু বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে, তার এক-তৃতীয়াংশ গবাদিপশু এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে। এ মুহূর্তে দুই দেশের সীমান্তে অতিরিক্ত জওয়ান, নৌপথে বোটের সংখ্যা বাড়ানো ও সর্বোপরি বাড়তি নজরদারি রাখা হচ্ছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহসীনুল কবীর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, একসময় বছরে ২০ লাখ গরু পাচার হয়ে বাংলাদেশে আসত। সেটা কমতে কমতে এখন এক-দুই লাখে এসে দাঁড়িয়েছে। বিজিবি সেটা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বিজিবি জওয়ানরা সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে কঠোর নজরদারি করছে। শুধু গরু পাচার নয়, ভারত থেকে সীমান্তপথে অবৈধভাবে পাচার হয়ে আসা অন্যান্য সামগ্রীও বন্ধ হয়েছে।
খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, অবৈধপথে ভারতীয় গরু ও ছাগল যাতে বাংলাদেশে সহজে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য ইতোমধ্যে সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্যাম্পের সদস্যরা সীমান্তে কড়া পাহারা দেওয়ার ফলে চোরাকারবারিরা সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধ পথে কোনো গরু-ছাগল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করাতে পারছে না। এতে করে কোরবানিতে ভারতীয় গরু ও ছাগলের সংখ্যা অনেক কম হবে বলে ধারণা করছেন বিজিবির এই কর্মকর্তা।
রাজধানীর বালু নদী সংলগ্ন এক শ ফিট বালুর মাঠ গরুর হাটের ইজারাদার ও যুবলীগ নেতা ইকবাল খন্দকার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গত ৩ দিনে শতকরা ৩০ ভাগ গরু হাটে উঠেছে এর মধ্যে ভারতীয় কোনো গরু চোখে পড়েনি। সব দেশি গরু। শুনেছি সীমান্তে কঠোর নজরদারির কারণে এবার গরু পাচার প্রায় বন্ধ রয়েছে। এটা শুভ লক্ষণ। বাংলাদেশের গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা লাভবান হবে বলে আমি মনে করি।
উল্লেখ্য, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় গরু বাংলাদেশে পাচার ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নেয়। বিজিবি ও বিএসএফ একাধিক বৈঠকে গরু পাচার বন্ধে যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর অবৈধপথে গরু পাচারের হার কমতে থাকে।