• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
এখনো সক্রিয় আল্লাহর দল ও নব্য জেএমবি

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

এখনো সক্রিয় আল্লাহর দল ও নব্য জেএমবি

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ২২ আগস্ট ২০১৯

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো এখন নিষ্ক্রিয়। তবে এখনো সক্রিয় রয়েছে নব্য জেএমবি ও আল্লাহর দল নামের জঙ্গি সংগঠন দুটি। নব্য জেএমবি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের মদদে বাংলাদেশে নাশকতার ছক কষা অব্যাহত রেখেছে। আল্লাহর দল স্থানীয় পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহ করছে। তারা নিজেদের নেতা মতিন মেহেদীকে কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেওয়ার পথে প্রিজন ভ্যানে হামলা করে ছিনিয়ে নেওয়াসহ ছোটখাটো হামলার ছক কষছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

১৯৯২ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করা হরকাতুল জিহাদের মূল নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল। এরপর থেকে এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জেএমবি দেশজুড়ে তাণ্ডব চালানোর পর ২০০৭ সালের ৩০ জুন শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ শীর্ষ ৫ নেতার ফাঁসি কার্যকর হলে সংগঠনটি ঝিমিয়ে পড়ে। এরপর তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। ২০০৫ সালের ১৭ অক্টোবর জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) ও জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা নব্য জেএমবির ব্যানারে চলে যায়।

অন্যদিকে ২০০৭ সালে আত্মপ্রকাশ করে আনসার আল ইসলাম। এর মূল নেতা জসিমুদ্দিন রাহমানি ২০০৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এর হাল ধরেন মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি মেজর জিয়া। মেজর জিয়া সংগঠনের নামও আংশিক পরিবর্তন করে এর নাম রাখেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। এরা শুরুতে এ দেশে আল-কায়েদার মতাদর্শ অনুসারীদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছিল। শুরুতে এই গোষ্ঠীটি পাঠচক্র ও ইন্টারনেটভিত্তিক প্রচারে যুক্ত ছিল। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে হত্যার পর সংগঠনটি প্রথম আলোচনায় আসে। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১১ জন ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, ছাত্র-শিক্ষক ও সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কর্মীদের হত্যার দায় স্বীকার করে সংগঠনটি। ২০১৫ সালের ৫ মে আনসারুল্লাহ বাংলার টিমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এর মাস্টারমাইন্ড মেজর জিয়াকে ধরতে ২০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। আজও তিনি পলাতক। অবশ্য তার অস্তিত্বও আপাতত কোথাও নেই। তিনি দেশে নাকি দেশের বাইরে—এটা জানা নেই সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। মূল নেতার অবর্তমানে সংগঠনটির কার্যক্রমের কোনো খবর নেই। ইতোমধ্যে সংগঠনের সক্রিয় নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ। ফলে কর্মকাণ্ড তো দূরের কথা এদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে। ২০০১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মওলানা মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর আত্মপ্রকাশ করে। এরা মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশের সন্ত্রাসী সংগঠনের অর্থসহায়তাপুষ্ট। হিযবুত তাহরীর কোথাও বড় ধরনের কোনো নাশকতা ঘটাতে না পারলেও সরকারবিরোধী লিফলেট প্রচার করত। তারা সরকারকে উচ্ছেদের আহ্বান জানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সদস্য সংগ্রহ করে আসছিল। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠাতা মওলানা মহিউদ্দিনকে ২০০৮ সালে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরা একেবারে নিষ্ক্রিয় নয়। তবে দেশ ও সরকারের জন্য বড় কোনো হুমকির কারণও নয় এরা। হিযবুত তাহরীর একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। সংগঠনের একটি অংশ তৎপর আছে। তারা গোয়েন্দাদের দৃষ্টি এড়িয়ে কিছু কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে মাঝে মধ্যেই হিযবুত তাহরীর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে। ২০০৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শাহাদত-ই-আল হিকমা নামে আরো একটি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে সক্রিয় আছে আল্লাহর দল ও নব্য জেএমবি নামে দুটি সংগঠন। আল্লাহর দলের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল পাবনা জেলা থেকে এবং সম্প্রতি উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ কয়েকটি জেলায় সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নেমেছিল তারা। সদস্য সংগ্রহের জন্য এই জঙ্গিরা ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করার মাধ্যমে সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা কারাবন্দি জঙ্গি নেতা সংগঠনের আমির মতিন মেহেদীকে মুক্ত করতে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল বলে জানিয়েছে র্যাব। সম্প্রতি জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’র ৪ সদস্যকে আটক করেছে মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এ সময় আটকদের কাছে ৮টি ককটেল, ৩টি পেট্রল বোমা, ৫টি ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, দেশীয় অস্ত্র এবং লিফলেট পাওয়া যায়।

ডিবি জানায়, নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে শহরের ফৌজাদারিপাড়ায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল তারা।

এদিকে নব্য জেএমবি আইএসের মদদপুষ্ট। আইএস সরাসরি এদের সহায়তা দেয়। আইএসের টার্গেট দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। যার প্রথম দিকেই আছে বাংলাদেশের নাম। নব্য জেএমবি সদস্যরা আত্মগোপনে থেকে শক্তি সঞ্চার করছে। তারা ঘাপটি মেরে থেকে নানা কৌশলে সদস্য সংগ্রহ করছে। সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে। এরা যেকোনো সময় নাশকতা ঘটাতে পারে বলেও আশঙ্কা আছে। গোয়েন্দাদের মতে, সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরা সুযোগ খুঁজছে।

এ ব্যাপারে সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। কোনো কোনো দেশে জঙ্গিবাদ বাংলাদেশের চেয়েও প্রকট আকার ধারণ করেছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থায় আছে। জঙ্গিরা চেষ্টা করছে। তারপরও তারা বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারবে না বলে আমি মনে করি। কারণ ইতোমধ্যে জঙ্গি নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তা পেয়েছে বলে জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads