নাটোর, নওগাঁ এবং টাঙ্গাইল জেলার আট নারী হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার বাবু শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রাতে তাকে নাটোর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ রোববার বেলা ১১টায় নাটোর জেলা পুলিশের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং-এ রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি একেএম হাফিজ আক্তার পিপিএম বার এ তথ্য প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মলনে দুর্র্ধষ খুনী বাবু শেখের বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এ, কে, এম হাফিজ আখতার বলেন, আনোয়ার ওরফে আনার ওরফে বাবু শেখ ওরফে কালু। তার সম্পর্কে নাটোরে জেলা পুলিশের তেমন ধারণাও ছিল না। সম্প্রতি গত ৯ অক্টোবর একই রাতে খুন হয় নাটোরের লালপুর উপজেলার চংধুপইল গ্রামের সাহারা পারভীন (৩২) এবং বাগাতিপাড়া উপজেলার জয়ন্তীপুর গ্রামের রেহেনা বেগম (৬০)। খুনীরা ওই দুই নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে নগদ টাকাসহ চুরি করে নিয়ে যায় স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ও মোবাইল। একই রাতে দুই খুনের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। দুই খুনের রহস্য উন্মোচন করতে রাজশাহী থেকে ঘটনাস্থলে আনা হয় সিআইডির ফরসেনিক বিশেষজ্ঞ দলকে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ অক্টোবর প্রথমে জেলার সিংড়া উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রুবেল আলী নামে এক ব্যাক্তিকে।
রুবেলের দেওয়া তথ্যমতে একই তারিখে আটক করা হয় লালপুরের চংধুপইল গ্রামের সাবিনা পারভীনকে হত্যার করে চুরি করে নিয়ে যাওয়া স্বর্ণের ক্রেতা নাটোর শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী লিটন খাঁকে (৩০)। রুবেল ও লিটনের তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন ১৬ অক্টোবর নাটোর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আটক করা হয় আসাদুলকে (৩০)। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে সিরিয়াল কিলার বাবু শেখের নাম। বাবু শেখকে ধরার জন্য তৎপর হয় নাটোর জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার নির্দেশে মাঠে নামে গোয়েন্দা বিভাগ। গত ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় নাটোর রেল স্টেশন এলাকা থেকে গোয়েন্দা জালে ধরা পড়ে সিরিয়াল কিলার বাবু।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অকপটে সে স্বীকার করে শ্বাসরোধ করে ৮ নারী হত্যার কথা। গত কয়েক বছর ধরে নাটোর, নওগাঁ ও টাঙ্গাইলে বাড়িতে একা থাকা নারীদের টার্গেট করে শ্বাসরোধে হত্যা করে এই সিরিয়াল কিলার। প্রায় পাঁচ বছর পর অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল এই খুনী।
বাবু শেখ নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের মৃত জাহের আলীর ছেলে। বাড়ী নওগাঁ হলেও নাটোরই অবস্থান করতো বেশী। বাড়িতে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে তিন সন্তান। তার পরেও অভিযুক্ত কেন পর পর এভাবে মহিলাদের টার্গেট করে খুন করে আসছিল তা এখনও তদন্তকারীদের কাছে স্পষ্ট নয়। অদ্ভুত মানষিকতার খুনী বাবু শেখ টার্গেট করতো নিম্নবিত্ত পরিবারের মহিলাদের। মাছ শিকারের ছদ্মবেশে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়ে কোন বাড়ীতে চুরি করতে পারবে সেটা পরিকল্পনা করে রাখতো। পরিকল্পনা মাফিক অন্যান্য সহযোগীদের সাহায্য নিয়ে পছন্দকৃত বাড়ীতে ঢুকে ধর্ষণের পর হত্যা করতো।
পুলিশ জানায়, ২০১৪ সালে বাবু শেখের হাতে খুন হয় জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার স্কুল ছাত্রী লাবনী। তাকে রিমান্ডে নিয়ে আরও কিছু জানা যাবে বলে মনে করেন পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা।
প্রেস ব্রিফিংকালে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বড়াইগ্রাম সার্কেল হারুন-অর রশিদ, ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈকত হাসান।