• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
রেলস্টেশন ছিল মজনুর অপরাধ সাম্রাজ্য

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

ঢাবির ছাত্রী ধর্ষণ

রেলস্টেশন ছিল মজনুর অপরাধ সাম্রাজ্য

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার মজনুর রেলস্টেশনকেন্দ্রিক ছিল অপরাধ সাম্রাজ্য। তার গ্রুপে কাজ করত আরো ৫-৬ জন দুর্বৃত্ত। ছিনতাই-ধর্ষণসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। রিমান্ডে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সেই সহযোগীদের নাম জানিয়েছে মজনু। তাদেরও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।

ডিবির (উত্তর) উপকমিশনার মো. মশিউর রহমান বলেন, মজনুর জীবনযাপন মূলত রেলওয়ে স্টেশনকেন্দ্রিক। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে হাতিয়া থেকে চট্টগ্রামে চলে যান। বাবা ছিলেন ভিক্ষুক। পথেই থাকতেন। এরপর থেকে তিনি কখনো ভিক্ষা করতেন, কখনো বোতল কুড়াতেন, কখনো কুলির কাজ করে বা চুরি-ছিনতাই করে জীবিকা নির্বাহ করে। তার সঙ্গে ভাসমান যৌনকর্মী, মাদকসেবী, চোর-ছিনতাইকারী, রিকশা ও সিএনজিচালকদের ওঠাবসা রয়েছে। তারা নিজেদের মধ্যে চুরি-ছিনতাই করে পাওয়া জিনিসপত্র বিনিময় করে। যারা ভাসমান তারা থাকে প্রধানত পরিত্যক্ত ওয়াগনে। মজনু দাবি করেছেন, সে নিজে রাস্তা থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী নারীদের তুলে এনে আটকে রাখত। 

গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। গত বুধবার মজনুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওইদিন সকালেই ছবি ও ভিডিও দেখে ছাত্রীটি মজনুকে শনাক্ত করেন। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। ডিবি কর্মকর্তারা মজনুকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান এবং ঘটনার পরম্পরা জানাতে বলেন। পুরো বিষয়টির ভিডিও ধারণ করেন তারা।

মজনু জানায়, সে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে হেঁটে গল‌ফ ক্লাবের সামনে উঁচু স্থানে পা ঝুলিয়ে বসেছিল। ওই সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে দেখে। মেয়েটি কোন দিকে এগোবেন, তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তখনই সে মুখ চেপে পাঁজাকোলা করে তাকে ঝোপের দিকে নিয়ে যায়। কিছুটা এগোনোর পর সে ছাত্রীটিকে টেনেহিঁচড়ে ভেতরের দিকে নিয়ে যায়। এ সময় ছাত্রীটি অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে তিনি চিৎকার করেন। বারবার তাকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ করেন। ওইসময় মজনু তার গলাটিপে ধরে। ধর্ষণের পর সে মেয়েটির কাছে তার নাম-ঠিকানা জানতে চায়। মেয়েটি তার নাম বলেন এবং গাজীপুরে যাবেন বলে জানান। রাত আনুমানিক সোয়া ৮টার দিকে ওই পথ দিয়ে পুলিশের টহল গাড়ি যেতে দেখে মজনু।

তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ছেড়ে দিলে সে ধরা পড়ে যেতে পারে—এ আশঙ্কা থেকে আটকে রাখে। তার বুকে-পেটে ঘুষিও দিতে থাকে। একটা সময় মজনু মেয়েটির কাছ থেকে টাকা চায়। এর আগেই সে ছাত্রীর মোবাইল ফোন পকেটে ভরে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী মজনুকে ব্যাগ হাতে দিয়ে বলে, ভেতরে টাকা আছে। ব্যাগ হাতড়াতে শুরু করলে মেয়েটি দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ফুটপাতের ধারঘেঁষে যে শিকল রয়েছে, তাতে পা বিঁধে পড়েও যান। তখনো মজনু তাকে পেছন থেকে ডাকতে থাকে। ওই রাতে সে সহযোগী অরুণার কাছে ছাত্রীটির মোবাইল ফোন বিক্রি করে দেয়, কিন্তু ব্যাগটি রেখে দেয় নিজের কাছে। সকালে নরসিংদীতে যায়, ফিরে এসে সৈনিক ক্লাবে একটি সিনেমা দেখবেন বলে ঠিক করেছিল। বিদ্যুৎ না থাকায় সিনেমা হলে জেনারেটর চলছিল। সে সিনেমা না দেখেই চলে যায় শেওড়ায়। সেখান থেকেই পরে গ্রেপ্তার হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads