• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
রোহিঙ্গা সংকটের ৩ বছর: ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে এখন রোহিঙ্গারা

ফাইল ছবি

অপরাধ

রোহিঙ্গা সংকটের ৩ বছর: ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে এখন রোহিঙ্গারা

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ২৫ আগস্ট ২০২০

আজ মঙ্গলবার ২৫ আগস্ট নতুন করে আসা রোহিঙ্গা সংকটের ৩ বছর। ২০১৭ সালের এইদিনে প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারের অভ্যন্তরিক সমস্যাকে পুঁজি করে উখিয়া টেকনাফের ১২টি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। এছাড়া প্রায় দেড় যুগ আগে আসা রোহিঙ্গা সহ বর্তমানে কক্সবাজারে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের বিশাল আশ্রয় শিবিরে পরিণত হয়েছে। তবে প্রথম দিকে জাতীয় আর্ন্তজাতিকভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বা নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তৎপরতা দেখা গেলেও বর্তমানে সব কিছু থমকে গেছে। তবে বসে নেই রোহিঙ্গারা। নানার অপরাধ প্রবণতার পাশাপাশি পুরো কক্সবাজারের ইতিহাস ঐহিত্যকে পাল্টে দিচ্ছে রোহিঙ্গার। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের হাতেই এখন ইয়াবা ব্যবসার চাবিকাঠি বলে মনে করছেন প্রশাসনসহ সচেতন মহল। তাদের কারণে নতুন করে আবারো ইয়াবা পাচার বাড়ছে বলে মনে করেন তারা। এর শেষ কোথায় তাও জানা নেই কারো।

২৬ জুলাই নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম উদ্দিন আহামদ বলেছিলেন,রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারসহ সারা দেশে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিশাল রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং এত বেশি মানুষকে নজরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গারা এখন ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে আবার পাচারকারী হিসাবে একটি বড় অংশ কাজ করছে।

এই কর্মকর্তার কথা সত্যতা পাওয়া যায় সরকারি বিভিন্ন তথ্যে কারণ গত ১০ বছরে ইয়াবা পাচারে যে হারে স্থানীয় মানুষ আটক হয়েছে গত দেড় বছরে তার চেয়ে বেশি আটক হয়েছে রোহিঙ্গা। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা আসার পরে প্রথম বছর কিছুটা তারা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত দেড় বছরে বেশি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে। গত ১ বছর প্রায় অন্তত ৭০০ রোহিঙ্গা আটক হয়েছে মাদক পাচার করতে গিয়ে। এর মধ্যে ৭০/৮০ জন নারী। এছাড়া রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মারা গেছে ১৭ জন। এদিকে ২৪ আগস্ট র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে পাওয়া তথ্য মতে চলতি বছরের সব চেয়ে বড় ১৩ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায়ও একজন রোহিঙ্গা জড়িত আর অপরজন ঝিলংজার বাসিন্দা বলা হয়েছে সেও আগে আসা রোহিঙ্গা বলে জানা গেছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান বলেন, এটা সত্য রোহিঙ্গাদের কারণে মাদক পাচার বিশেষ করে ইয়াবা পাচার বেড়েছে। কারণ তাদের খুব সহজে ব্যবহার করা যায়। অল্প টাকা দিয়ে তারা বড় বড় অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করে না। মূলত অনেক বেশি রোহিঙ্গা এবং বিপুল পরিমাণ এলাকায় ছড়িয়ে থাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলে জানান তিনি। তবে সম্প্রতি ক্যাম্পের জন্য বিশেষ পুলিশের ব্যবস্থা হয়েছে।  এছাড়া কাটা তারের বেড়া নির্মাণ করার কাজও এগিয়ে চলছে।

কক্সবাজার বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহাবুবুর রহমান জানান,২০১৭ সালে আসা রোহিঙ্গাদের শরীর আর বর্তমান চেহারা এবং শরীরের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। তারা বর্তমানে বেশ ভাল আছে। তবে সমস্যা হচ্ছে তারা এখন আমাদের দেশ এবং জাতীর জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে জেলার সমস্ত অপরাধের সাথে রোহিঙ্গারা জড়িত থাকে। তিনি দাবী করেন, হয় দ্রুত প্রত্যাবাসন করতে হবে না হয় প্রত্যাবাসন দেরি হলে দ্রুত রোহিঙ্গাদের ভাগ ভাগ করে ভিন্ন জেলায় বা তৃতীয় কোনো দেশে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম জানান, শুধু ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে চিন্তা করলে হবে না। হাজার হাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে আছে তারা প্রতিনিয়ত সমাজে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে। এলাকায় চুরি ডাকাতি থেকে শুরু করে গুম খুনের কাজ করেছে রোহিঙ্গারা। আর ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা জানে কোন পথে কিভাবে ইয়াবা আনতে হয় তাই আমার মতে এখন ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে রোহিঙ্গারা। তাই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে দ্রুত সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর সিন্ধান্ত না নিলে কড়া মাসুল দিতে হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads