• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

ই-কমার্সে বাড়ছে প্রতারণা

রিটার্ন পলিসি না থাকলে অর্ডার না করার পরামর্শ

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

অনলাইন কেনাকাটা (ই-কমার্স) ব্যবসার ব্যাপক প্রসার হচ্ছে বাংলাদেশে। করোনার কারণে গত ৯/১০ মাসে এর ব্যাপকতা আরো বেড়েছে। সেই সুযোগে এক শ্রেণির প্রতারক মেতেছে ই-কমার্সের নামে প্রতারণায়। প্রতারকচক্র তাদের ই-কমার্স সাইটে ভুয়া রিভিউ, বেশি লাইক এমনকি ব্র্যান্ডেড প্রতিষ্ঠানের ভুয়া বিজ্ঞাপন প্রচার করে প্রলুব্ধ করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে ক্রেতাদের। সংশ্লিষ্টদের মতে, ই-কমার্সের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের ভালো সেবা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যারা প্রতারণা করবে তারা ঝরে পড়বে। এদিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার অনলাইনে কেনাকাটায় সাধারণ মানুষকে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। একই সাথে প্রতারক সাইটগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্যও প্রকাশ করেছে তারা। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের হিসাবে, বর্তমানে বাংলাদেশে মাসে এ খাতে ৭শ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। বার্ষিক হিসেবে যা ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। গত তিন বছরে এই খাতের প্রবৃদ্ধি একশ ভাগ।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, অনলাইন কেনাকাটায় এখনো বড় সমস্যা প্রতারণা। এক্ষেত্রে যারা ক্রেতাদের ভালো সেবা দেবে তারাই টিকে থাকবে। এই গ্রুপের ই কমার্স প্ল্যাটফরম অথবা ডটকম করোনাকালের আগের চেয়ে তিনগুণ বেশি ব্যবসা করেছে। জানা যায়, বেশিরভাগ ক্রেতাই অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করেই প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে। শুধু অ্যাডভান্স পেমেন্টই নয়, ক্যাশ অন ডেলিভারিতেও প্রতারকের পাতা ফাঁদে পড়েও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্রেতারা। আবার অবিশ্বাস্য মূল্য হ্রাসের ঘোষণা দিয়ে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে ক্রেতাদের। ক্যাশ অন ডেলিভারি ক্ষেত্রে ক্রেতাকে নির্দিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মূল্য পরিশোধ করে পণ্য নেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু ডেলিভারি নেওয়ার পর ক্রেতা দেখতে পান তাকে অন্য কোন পণ্য কিংবা নিম্নমানের পণ্য দেওয়া হয়েছে। ক্রেতা পণ্য ফেরত দিতে চাইলে বলা হয়, ‘এ প্যাকেজের সাথে রিটার্ন পলিসি না থাকায় রিটার্ন নেওয়া সম্ভব নয়।’ অথবা ফেসবুকে নক করতে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাকে আগেই ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।

মোটরসাইকেলের মতো বড় অঙ্কের পণ্য কেনাবেচার সময় ঘটে আরো বড় দুর্ঘটনা। সিআইডি’র সাইবার পুলিশ সেন্টার সূত্রে জানা যায়, এ ক্ষেত্রে প্রতারক চক্র অবিশ্বাস্যরকম মূল্য ছাড় দিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়। দেড় লাখ টাকার মোটরসাইকেল তারা অফার করে আশি হাজার টাকায়। বলা হয় সামনাসামনি মোটরসাইকেল দেখে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। পছন্দ হলে সেখান থেকেই মোটরসাইকেল হ্যান্ডওভার করা হবে। প্রি-ইনস্টলমেন্ট মাত্র ৫ হাজার টাকা। এরকম বিজ্ঞাপনে সাড়া দিলে ঘটতে পারে দুই রকম ঘটনা।  টাকা দিলেই ক্রেতাকে হয় ব্লক করে দেওয়া হয়। অথবা টাকা দেবার পর সরাসরি ইন্সপেকশনের জন্য ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বলা হয়। টাকা নিয়ে সেখানে গেলে ক্রেতার শিকার হন ছিনতাইয়ের। প্রতারণা চলছে স্ক্রিল, নিটেলার, বিটকয়েন কেনার ক্ষেত্রেও। এসব সাইটেও আগে পেমেন্ট করে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা।

সিআইডি পরামর্শ দিয়েছে ‘বিক্রয় ডট কম’-এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে কেনাবেচা না করতে। এ ধরনের প্ল্যাটফরম প্রোডাক্ট কোয়ালিটি বা ক্রেতা/বিক্রেতার আইডেন্টিটি ভেরিফাই করে না। কেনাবেচা হয় সরাসরি ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। কোনো ক্রেতা প্রতারিত হলে এ প্ল্যাটফরমের কিছু করার থাকে না।

সিআইডি’র সাইবার পুলিশ সেন্টার প্রতারক পেজগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্যে প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, প্রতারকরা তাদের পেজগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য বিভিন্ন ক্রেতার পজিটিভ রিভিউর স্কিনশট দেয়। তারা বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে ভালো ভালো রিভিউ দিয়ে রাখে। তাদের পণ্য মূল্যও বাজারের একই পণ্যের তুলনায় থাকে অবিশ্বাস্য রকম কম। এসব পেজের বিজ্ঞাপন অন্য কোনো পেজ থেকে কপি করা থাকে, যা নেটে ঘাঁটাঘাঁটি করলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তারা অ্যাডভান্স পেমেন্টের কথা বলে। এসব পেজগুলোর কোনো শোরুম থাকে না বা থাকলেও তা হয় ভুয়া।

এসব পেজের লাইকের সংখ্যা বেশ কম হয়। তবে বেশি লাইক দেখেই সেটিকে অথেনটিক পেইজ ভাবারও কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছে সিআইডি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমন অনেক পেজ আছে যা তৈরি হয়েছিল কোনো নামকরা মডেলের ফ্যান ক্লাব হিসেবে। ফলে দ্রুতই সেটির লাইকের সংখ্যা বেড়ে লাখ ছাড়িয়ে যায়। পরে রাতারাতি ঐ পেজের নাম ও ছবি চেঞ্জ করে তা কোনো প্রোডাক্টের মার্কেটপ্লেসে রূপান্তর করা হয়।

অনলাইনে কেনাকাটা করতে সাধারণ মানুষকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে সিআইডি’র সাইবার পুলিশ সেন্টার। এ প্রসঙ্গে সিআইডি’র সাইবার পুলিশ সেন্টারের এডিশনাল ডিআইজি মাসুদুল হাসান বলেন, অনলাইনে পণ্য বিক্রির সাইটগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রতারকদের অধিকাংশই এমেচার উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক সময় সন্দেহজনক এরকম সাইটের অ্যাডমিনদের সতর্ক করা হচ্ছে। আবার অতি ক্ষতিকর সাইটগুলোকে বন্ধ করা হচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে আইনগত ব্যবস্থাও। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের প্রতারণার থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে অ্যাডভান্স পেমেন্ট না করা। দ্বিতীয়ত রিটার্ন পলিসি না থাকলে অর্ডার না করা। কুরিয়ার থেকে পণ্য রিসিভ করেই সাথে সাথে তা চেক করা। যে পেজ থেকে পণ্য কেনা হচ্ছে সে পেজের সকল রিভিউ পড়ে দেখা। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে নিজের বুদ্ধি বিবেচনা খাটানো। যে দামে পণ্য অফার করা হচ্ছে সত্যিই ওই দামে সেই পণ্য বিক্রি করা সম্ভব কি না তা বিবেচনা করা। প্রতারিত হলে চুপচাপ না থেকে সিআইডি’র সাইবার পুলিশকে অবগত করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads