মুদ্রাবাজারের তারল্য সঙ্কটের কারণে চলতি বছর অধিকাংশ শেয়ারের দর হ্রাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ৬ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট হারিয়েছে। মূলধন হারিয়েছে ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাত, জ্বালানি ও প্রকৌশলসহ অধিকাংশ খাত। তবে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট নিরসনে সরকারি উদ্যোগের পর দুই সপ্তাহে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। এ সময় কিছু শেয়ারের দর বেড়েছে, যার মধ্যে এগিয়ে রয়েছে জীবন বীমা খাত। চলতি বছর এ খাতটি থেকে বিনিয়োগকারীরা ১০ শতাংশের বেশি মূলধনি মুনাফা পেয়েছেন।
তবে সূচকে প্রভাব বিস্তারকারী ব্যাংক খাত এখনো দর হারানোর তালিকার সর্বনিম্নে রয়েছে। এ খাতটি চলতি বছরের শুরু থেকে পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ দর হারিয়েছে। আগের বছর এ খাতটি থেকে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৬০ শতাংশ মূলধনি মুনাফা পেয়েছিলেন। চলতি বছর ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ দর হারিয়ে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাত। এর বাইরে রিয়েল এস্টেট, তথ্যপ্রযুক্তি, বস্ত্র, সিরামিক, সাধারণ বীমা, সিমেন্ট, প্রকৌশল ও জ্বালানি খাত ২ থেকে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে। ২০১৭ সালে তিনটি খাত ছাড়া বাকি সব খাতের বাজার মূলধন বেড়েছিল।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৩৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২২৩ কোম্পানির শেয়ার থেকে বিনিয়োগকারীরা মূলধনি মুনাফা পেয়েছেন। অধিকাংশ শেয়ারের দর বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচকটি এ সময় ২৪ শতাংশ বেড়েছে। আর বাজার মূলধন ৮১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বা ২৩.৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। সূচকের এ উল্লম্ফনেও বেশকিছু শক্ত মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারে লগ্নি করে লোকসান গুনতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
বিনিয়োগকারীরা ২০১৭ সালে জীবন বীমা খাতের শেয়ার থেকে ২১ শতাংশের বেশি মূলধনী মুনাফা পেয়েছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে বাজার পরিস্থিতির কারণে এ খাতটির বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে মূল্য সংশোধন হলেও দুই সপ্তাহে তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। হারানো দর পুনরুদ্ধার করে খাতটিতে পর্যন্ত ১০ দশমিক ২ শতাংশ বাজার মূলধন বেড়েছে। এতে খাতটির বাজার মূলধন ৪ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
জীবন বীমা ছাড়াও চলতি বছর টেলিযোগাযোগ খাতে ৬ শতাংশ মূলধনি মুনাফা পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এর বাইরে ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিবিধ খাত থেকে ২ দশমিক ৮ থেকে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ মূলধনি মুনাফা এসেছে।
এদিকে টানা দরবৃদ্ধির পর জীবন বীমা খাতের শেয়ার থেকে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নিয়েছেন। এতে খাতটির বাজার মূলধন ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। লেনদেনের শুরুতে নেতিবাচক ধারা থাকলেও ব্যাংক শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে শেষ পর্যন্ত সূচকে বাড়তি পয়েন্ট যোগ করে কেনাবেচা শেষ হয়েছে। দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫৮২৩ পয়েন্টে উঠেছে।
সূচকে ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি লেনদেনেও ইতিবাচক ধারা বজায় রয়েছে। ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৬১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। ডিএসইতে লেনদেনকৃত কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১২৯টির, কমেছে ১৬৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৪টি শেয়ার।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কোমপানি হলো : বেক্সিমকো লি., আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক লি., ইউনাইটেড পাওয়ার, উসমানিয়া গ্লাস ফ্যাক্টরি, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লি., লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, গ্রামীণফোন ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক লি.।