করোনাকালে কৃষিখাতে সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের প্রণোদনা সঠিক হলেও পর্যাপ্ত ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, ঋণ প্রণোদনা প্রদানের চেয়ে নগদ আর্থিক প্রণোদনা বেশি কার্যকর। কেননা প্রান্তিক কৃষকের পক্ষে বিভিন্ন দাপ্তরিক জটিলতা অতিক্রম করে ঋণ গ্রহন করা দুরূহ। যে কারণে করোনার আপতকালে কৃষককে নগদ ২৫০০ টাকা প্রদান বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁও এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘কৃষিখাতে করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগ’ নিয়ে ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরো বলেন, কৃষিবান্ধব আর কৃষক বান্ধব কথাটি যে এক নয় করোনাকালে তা আরো সুস্পষ্ট হয়েছে। সরকার কৃষিবান্ধব হলেই কৃষকের যে উপকার হবে তা বলা যায় না। কৃষি উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃষক যেন মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দ্বারা প্রতারিত না হয় তার জন্য সরকারকে কৃষকবান্ধব হতে হবে। প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে শুধু প্রশাসনের উপর নির্ভরশীল না হয়ে স্থানীয় সরকার, এনজিও ও ব্যক্তিখাতকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। করোনার অভিঘাতে বিভিন্ন খাতে যে বিপর্যয় ঘটেছে তার খাতওয়ারি মূল্যায়ণ এখনো সম্ভব হয়নি। তবে করোনা বিপর্যয়ে সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট না হলেও তা সঠিক সময়ে নেয়া হয়েছে। এ সময়ে সরকারি উদ্যোগের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় দুভাবে সেটি গ্রহন করা হয়েছে। একটি ছিল চলমান উদ্যোগ আরেকটি করোনা বিপর্যয় কালীন বিশেষ উদ্যোগ।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষিখাত ব্যাপক ভূমিকা রাখলেও পোশাক সহ অন্যান্য শিল্পখাতের মতো এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা তাদের দু:খ-দুর্দশায় ততোটা গুরুত্ব পায় না। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এফবিসিসিআই ইত্যাদি সংগঠনের মতো কৃষকদের কোনো শক্ত সংগঠন নেই। ফলে কৃষকদের সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পুরোপুরি চাপ তৈরি করা যায় না। করোনাকালে পোশাক শিল্প, শিল্প-কলকারখানা, আমদানি-রপ্তানী বাণিজ্য সহ অন্যান্য খাতে সরকারের প্রণোদনা প্রবাহ যেভাবে লক্ষ্য করা গেছে, সেভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষক ও কৃষিখাত সংশ্লিষ্টদের জন্য প্রণোদনা প্রবাহ তেমন জোরদার ছিল না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পৌছায়নি। তবে কৃষি বান্ধব এই সরকার করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় তাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। করোনা প্রতিরোধে যখন সারা দেশে লকডাউন চলছিলো তখনও আমাদের কৃষক-কৃষানি ভাই ও বোনেরা ঘরে বসে থাকেনি। আমাদের জন্য ফলন উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। তাই করোনার অভিঘাতে আবারো প্রমাণিত হয়েছে কৃষি আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে মজবুত জায়গা।
ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে কৃষিখাতে করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় জনাব কিরণ ১০ দফা সুপারিশ প্রদান করেন। সুপারিশগুলি হচ্ছে- অতি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ঋণের সুদ মওকুফ করা, কৃষকদের ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ আরো বাড়ানো, অতি ক্ষতিগ্রস্থদের কৃষকদের এককালীন সাহায্য দেওয়ার জন্য তহবিল গঠন করা, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, কৃষির সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী কৃষি কমিশন গঠন করা, কৃষি প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে কৃষি শ্রমিকদের অন্তর্ভূক্ত করা, নারী কৃষকরা যেন প্রণোদনা থেকে বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করা, প্রণোদনা প্রদানের উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বো”চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, প্রকৃত কৃষকদের জন্য স্বল্পমূল্যে ও সহজ কিস্থিতে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, প্রকৃত কৃষকদের কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করা ও এর আওতা বাড়ানো।
প্রতিযোগিতায় বিরোধী দল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে সরকারি দল ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মঈনুল আলম, সাংবাদিক অনিমেষ কর, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা এবং সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ক্রেস্ট, ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।