• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

বিনোদন

পুরুষ, আরেকটু মহান হও

  • সোহেল অটল
  • প্রকাশিত ১৫ মার্চ ২০১৮

সারা বিশ্ব যখন যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সোচ্চার, বাংলাদেশে তখন নতুন করে আলোচনায় এ প্রসঙ্গ। আলোচনা টেনে এনেছেন শ্রদ্ধাভাজন অভিনেতা, নির্মাতা গাজী রাকায়েত। সম্প্রতি এক তরুণী তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। তরুণী ফেসবুক কনভার্সেশনের স্ক্রিনশট প্রকাশ করে প্রমাণ করেছেন, গাজী রাকায়েত তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছেন।

গাজী রাকায়েত অবশ্য শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তিনি দাবি করছেন, তার ফেসবুক আইডি কেউ হ্যাক করেছে এবং ওই তরুণীর সঙ্গে অমন আলাপন চালিয়েছে।

ফেসবুকের এমনতরো বিব্রতকর কনভার্সেশন প্রকাশ হয়ে পড়লে অভিযুক্তরা ‘আইডি হ্যাক হয়েছে’ ডায়লগটি দিয়ে দায় এড়াতে চান। এর আগেও এমন দেখা গেছে। তবে এ ক্ষেত্রে কনভার্সেশনটি পর্যালোচনা করে অনেকেই নিশ্চিত হয়েছেন, এটা গাজী রাকায়েত নিজেই করেছেন।

গাজী রাকায়েত নিজেই করুন কিংবা আইডি হ্যাক হোক, সমস্যাটি যে রয়েছে তা অস্বীকার করার জো নেই। কদিন আগেই মডেল-অভিনেত্রী ফারিয়া শাহরিন কাস্টিং কাউচ নিয়ে খোলামেলা কথা বলে আমাদের শোবিজ অঙ্গনের চিত্র বেশ পরিষ্কার করে দিয়েছেন। অনেকেই ফারিয়ার এমন খোলামেলা মন্তব্যকে সহজে নিতে পারেননি। তাতে শোবিজের নোংরা অলিগলি পরিষ্কার হয়ে যায়নি। সমস্যাটি আছে। সেটা সবাই জানেন, বোঝেন।

গাজী রাকায়েত সম্মানীয় ব্যক্তি। অভিজ্ঞ, নন্দিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। যৌন হয়রানির অভিযোগ যখন তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়, তখন তা নিয়ে আলোচনা জমে ওঠে। এই সমাজে, শোবিজ অঙ্গনে এমন ঘটনা হামেশাই ঘটছে। সেই অভিযুক্তরা হয়তো গাজী রাকায়েতের মতো সমাজে অতটা পরিচিত নন বলেই আলোচনা জমে না। কিন্তু সমস্যাটি বয়ে চলছে। নীরবে। সরবে।

নিস্তারের পথ কী? কিংবা এ সমস্যা থেকে নিস্তারের প্রয়োজনই বা কতটুকু?

নিস্তারের পথ নিয়ে আলোচনা পরে। নিস্তারের প্রয়োজন নিয়ে কথা হোক আগে। শোবিজ মিডিয়াতে ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ নামে একটা টার্ম প্রচলিত আছে। কাজের বিনিময়ে শরীর, কিংবা শরীরের বিনিময়ে কাজ। এটাই গিভ অ্যান্ড টেক। এই টার্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই অভ্যস্ত। কিন্তু যারা অভ্যস্ত নন, সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় নিজেকে নিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য এটা ভয়াবহ সমস্যা।

সম্প্রতি হলিউডের প্রভাবশালী প্রযোজক হার্ভে উইন্সস্টেনকে নিয়ে বিতর্ক সারা বিশ্বে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে যখন কাস্টিং কাউচ তথা যৌন হয়রানি ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে ধরা হচ্ছে, আমাদের জন্য সেটা আরো বেশি ভয়াবহ হওয়ার কথা। আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নীতিবোধের জায়গা এই ইস্যুতে ভেঙে পড়ে।

নারী যখন শৈল্পিক সৌন্দর্য সৃষ্টির ইচ্ছে নিয়ে শোবিজ মিডিয়াতে পা রাখেন, তখন তার সঙ্গে ঘটা যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো তাকে মানসিকভাবে আঘাত করে। নষ্ট হয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। পদদলিত হয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক নীতি। অস্থির, বিবেচনাবর্জিত মানসিকতার জয় হয়। সমাজে প্রতিষ্ঠা হয় অনিয়ম।

এই বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পেতেই যৌন হয়রানি বন্ধ হওয়া উচিত। মুক্তির পথ আমাদের হাতেই। পুরুষের হূদয়ে নারীকে সম্মান জানানোর মতো মানসিক শক্তি প্রতিষ্ঠা হলেই যৌন হয়রানি বন্ধ হতে পারে। আর সেই শক্তি পুরুষকে বরাবরই মহান করেছে। পুরুষ বুঝলেই নিজেকে আরো মহান করে তুলতে পারে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads