• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ভক্ত সমাচার

অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস

সংরক্ষিত ছবি

আনন্দ বিনোদন

ভক্ত সমাচার

  • প্রকাশিত ১৭ মে ২০১৮

রাফিউজ্জামান রাফি

‘অপু বিশ্বাস’ নামটা শুনলেই সবাই আজকাল মনে করে বসে নিশ্চয়ই পুরনো ক্যাঁচাল (শাকিব খান-অপু বিশ্বাস কাহিনী) নিয়ে কথা বলতে এসেছি। অভিযোগের তীর শাকিবের দিকেই বেশি যাওয়ায় আমিও তার দিকেই অভিযোগের তীর ছুড়ব ভেবে শাকিবভক্তরা আগেভাগেই গোস্সা করা শুরু করে। আর অপু বিশ্বাসের ভক্তরা? এখানে এসে আমাকে ছোট্ট একটা হোঁচট খেতে হয়। আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে বসি, ‘আদৌ কি অপু বিশ্বাসের ভক্ত বলে কিছু আছে?’ প্রশ্ন শুনে নিজেই আবার শিউরে উঠি, ভাবি, কী বলছি এসব? অপু বিশ্বাসের ভক্ত থাকবে না কেন? কী কম আছে অপু বিশ্বাসের? রূপ, যৌবন, আবেদন, অভিনয়, হিট সিনেমা? না, কোনোটাই তো কম নেই! দুধে আলতা রঙ, মধুমাখা চেহারা, সুন্দর অভিনয়- একজন নায়িকার জন্য যা যথেষ্ট। সঙ্গে রয়েছে সেই ‘কোটি টাকার কাবিন’ থেকে ‘রাজনীতি’ অবধি অসংখ্য হিট সিনেমা। একজন নায়িকার সফল হতে এগুলোই তো লাগে, তাই না? তাহলে অপু বিশ্বাসের ভক্ত থাকবে না কেন? আর তিনি সফলই বা হবেন না কেন? নিজেকে নিজে একটা ধমক দিই এসব উল্টোপাল্টা প্রশ্ন মাথায় আনার জন্য। কিন্তু তাও আমার ভেতরে খচখচ করে।

আমি মৌসুমী, শাবনূরের কথা ভাবি। ভাবতেই মনের ভেতর কেমন যেন সুবাতাস বয়ে যায়। আহা, মৌসুমী! আহা, শাবনূর! কত যুবকের স্বপ্নের নায়িকা ছিলেন তারা! কত ভক্ত তাদের। কারো চেয়ে কেউ কম যান না। পাতলা ছিপছিপে সেই শাবনূর হাজার যুবক, শুধু যুবক নয়- যুবতীরও মন কেড়েছে। তা ছাড়া তার চঞ্চল তিড়িংবিড়িং অভিনয়? কত দর্শকের হূদয় হরণ করেছে। আমি তখন ছোট হলেও আমার মনে আছে প্রতিবেশী কিশোরী, যুবতীরা শাবনূরের মতো তিড়িংবিড়িং করত, শাবনূর হওয়ার চেষ্টা করত। এমনকি শাবনূরের ডাক নাম ‘নূপুর’ জেনে এরাও নিজেদের নামের শেষে ব্র্যাকেটে লিখত ‘নূপুর’। আবার মৌসুমীর হেয়ারস্টাইল ফলো করে তারা নিজেরা মৌসুমী হওয়ার চেষ্টা করত। মানুষ মৌসুমী শাবনূরের সিনেমা দেখতে হলে যেত। আর অপু বিশ্বাস? অপু বিশ্বাস কি পেরেছেন শাবনূর মৌসুমীর (শাবানা-ববিতার কথায় না-ইবা গেলাম) মতো এই প্রাপ্তি অর্জন করতে? পেরেছেন দর্শকের স্বপ্নের নায়িকা হতে? অপু কি পেরেছেন যুবতীদের নিজেকে অপু বিশ্বাস ভাবাতে? পেরেছেন কি তিনি তার তুঙ্গে থাকা দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শুধুই তার জন্য পাগল একদল ভক্ত বানাতে? ওপরের সব প্রশ্নের উত্তরই হয়তো হবে ‘না’।

কিশোর বয়সে আমার কয়েকজন বন্ধুকে দেখেছি মানিব্যাগে পূর্ণিমার ছবি রাখতে। বুঝতাম পূর্ণিমা ওদের প্রিয় নায়িকা। ওরা পূর্ণিমার সিনেমা দেখতে স্কুল পালিয়ে আড়াই কিলোমিটার পথ হেঁটে সিনেমা হলে যেত। কিন্তু কেউ কি অপু বিশ্বাসের সিনেমা দেখতে স্কুল পালিয়েছে? মনে হয় না। অথচ তারা অপু বিশ্বাসের সিনেমাই কিন্তু দেখেছে। কিন্তু অপু বিশ্বাসের সিনেমা দেখতে নয়, তার বিপরীতে অভিনয় করা জনপ্রিয় নায়কের সিনেমা দেখতে। তাহলে এত ব্যবসাসফল সিনেমা করে কী পেলেন অপু বিশ্বাস? ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সিনেমাই তো একজন মাত্র নায়কের সঙ্গে করেছেন তিনি। আর সেই সঙ্গে তিনিও আবদ্ধ থেকে গেছেন ওই নায়কের বলয়ে। আর এই বলয়ের এ-তীর ও-তীর সাঁতরেই কাটিয়েছেন এই দীর্ঘ ক্যারিয়ার। অপু বিশ্বাস কি শাকিব খান ভিন্ন অন্য কারো সঙ্গে কোনো সফল সিনেমা উপহার দিতে পেরেছেন? হতে কি পেরেছেন শাবানা, ববিতা, মৌসুমী, শাবনূর? যারা কোনো নির্দিষ্ট নায়কের সঙ্গে জনপ্রিয় জুটি তৈরি করার পরও অন্য নায়কদের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য ব্যবসাসফল সিনেমা, আপন দ্যুতিতে আলোকিত হয়ে আলোকিত করেছেন চলচ্চিত্র, একাই টেনে নিয়েছেন পুরো সিনেমা। তিনি কি পেরেছেন তাদের যোগ্য উত্তরসূরি হতে? হয়তো না। কেননা উল্টো তিনিই প্রতিটি সিনেমায় নির্ভর হয়ে পড়েছেন শাকিব খানের ওপর। আর শাকিবকে স্বমহিমায় পুরো সিনেমা টানতে হয়েছে, সঙ্গে টানতে হয় অপু বিশ্বাসকে। আর সেই টানে উতরে তিনি শাকিব খানের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে হয়েছেন অসংখ্য সফল সিনেমার সফল (?) নায়িকা। তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারজুড়ে এই দৃশ্যগুলো সবারই জানা। এই যদি হয় তার সফলতার পেছনের গল্প তাহলে সে গল্পে অনুপ্রাণিত হওয়ার কিছু নেই। সে গল্প খুবই রোগা ও টিংটিংয়ে। সে গল্পের নিজ পায়ে দাঁড়ানোর মতো শক্তিটুকুও নেই।

অথচ তার অনেক পরে এসে অভিনয়ে অপটু মাহিয়া মাহিও চলচ্চিত্রে গড়ে তুলেছিলেন আপন ভিত, গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব দর্শক। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে হয় তার প্রথম সিনেমা ভালোবাসার রঙসহ অন্যান্য সিনেমায় দর্শকদের আকর্ষণ নবাগত বাপ্পী সাইমুনরা যতটা না ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল নবাগতা মাহিয়া মাহি। মাহি একের পর এক যখন সিনেমা দিচ্ছিলেন তখন সব সিনেমাতেই এই দৃশ্য দৃশ্যমান ছিল। স্বপ্নজাল বলে দেয় পরীমণিও হাঁটছেন এই দৃশ্য দৃশ্যমান করার পথে। অথচ অপু বিশ্বাসের এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এই দৃশ্যটি দৃশ্যমান হলো না। তিনি শুধু পর্দায় হিরোর নয়নের মণিই হয়ে রইলেন, কিন্তু পর্দার এই রসায়ন যারা উপভোগ করে, সেই  দর্শকের নয়নের মণি হতে পারলেন? পর্দায় তার জন্য পরিচালকের তাগিদে নায়ক জান পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত থাকলেও দর্শকরা শুধু তাকে দেখতে মনের তাগিদে কখনো ভিড় জমিয়ে লাইন ধরে সিনেমার টিকেট কিনল কি? প্রশ্নগুলোর উত্তর অপু বিশ্বাসকেই খুঁজতে হবে। কেননা, এখনো মনে হয় সময় আছে নিজেকে প্রমাণ করার। এখনো মনে হয় সময় আছে পরনির্ভর না হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার- একজন শাবানা, একজন ববিতা, একজন শাবনূরের পাশে একজন অপু বিশ্বাস হিসেবে নিজের নামটা লেখানোর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads