• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

খাবারে শিশুর অনীহা

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

খাবারে শিশুর অনীহা

  • বেদৌরা বিনতে আফাক
  • প্রকাশিত ২৭ মে ২০১৮

মায়েদের কাছে শিশুর বিষয়ে জানতে চাইলেই মোটামুটি এক কথায় যে উত্তরটি মেলে তা হলো, ‘বাচ্চা কিছুই খেতে চায় না।’ শিশু কেন খেতে চাইছে না সে বিষয়টি আগে খুঁজে বের করতে হবে। খাবারের প্রতি অনীহা বিভিন্ন কারণে থাকতে পারে। শিশুর কোনো রকম শারীরিক সমস্যা থাকলে খাওয়ায় অরুচি হতে পারে। অনেক সময় বাচ্চার ঘন ঘন ইনফেকশন বা সংক্রমণ হলে খাওয়ার রুচি কমে যায়। এ ছাড়া শিশুর পেটে কৃমি থাকলেও খেতে অনীহা প্রকাশ করে। পাশাপাশি মূত্রনালির সংক্রমণের কারণেও শিশুদের খাবারে অরুচি হতে পারে। শিশুর প্রতি বাবা-মায়ের মনোযোগ কমে গেলেও সে খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। মাকে সারাদিন নানা ধরনের ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে দিন পার করতে হয়। সে কারণে হয়তো শিশুকে ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না। মায়েদের এ ব্যস্ততাই শিশুর মনে দাগ কাটে। শুধু খাবারের সময়টাতেই মাকে কাছে পায় বলে, আরো একটু বেশি সময় কাছে পাওয়ার জন্য খাবার খেতে সময় নেয়। অবচেতনেই তার মনে ঢুকে যায় যে, খাবার খেতে বেশি সময় নিলে বা খাবার নিয়ে যন্ত্রণা করলে মায়ের সঙ্গ আরো বেশি পাওয়া যাবে। এ কারণেও অনেক সময় শিশুরা খাবারের সময় নানা বায়না ধরে, ঠিকমতো খেতে চায় না। আর এই শিশুকে খাওয়াতে মায়েদের বের করতে হয় নিত্যনতুন সব কৌশল।

খাওয়ার প্রতি শিশুর অনীহা দূর করতে কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন :

১. শিশুদের খাওয়ানোর জন্য প্রত্যেকেই জোরাজুরি করি, যা একদমই ঠিক নয়। এতে করে খাবারের প্রতি শিশুর আগ্রহ আরো কমে যায়। জোর না করে খাবার শিশুর সামনে দিন। শিশুকে নিজের হাতে খেতে অভ্যস্ত করে তুলুন। খাবার তৈরির সময় বা পরিবেশনে সম্ভব হলে তাকে সঙ্গে রাখুন। এতে করে সে খাবারের প্রতি আগ্রহী হবে। খাবার তৈরিতে প্রাধান্য দিন তার পছন্দের মাছ, মাংস বা সবজিটিকে।

২. বাচ্চারা সাধারণত বাইরের খাবার খেতে পছন্দ করে। নানা সময় তাদের আবদার মেটাতে শিশুর হাতে এ খাবারগুলো আমরা তুলে দিই। শিশুকে তাই যখন-তখন চিপস, জুস, চকোলেট বা এ ধরনের খাবার দেওয়া যাবে না, এতে ক্ষুধা নষ্ট হয়।

৩. তিনবেলা খাবারের আগে মধ্যবর্তী সময়গুলোতে শিশুকে অন্যান্য খাবার না দেওয়াই ভালো। এতে ক্ষুধা নষ্ট হয়। শিশুর স্কুল যদি ১২টায় ছুটি হয়, তবে ফিরে এসে তেমন কোনো নাশতা না দিয়ে ক্ষুধা থাকা অবস্থাতেই দুপুরের খাবার দিয়ে দেওয়া উচিত।

৪. একই খাবার প্রতিদিন না দিয়ে খাবার ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রস্তুত করে দেওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ রোজ ডিম পোচ বা সিদ্ধ না দিয়ে ডিমের তৈরি পুডিং, জর্দা ইত্যাদি দিতে পারেন। দুধ খেতে না চাইলে পুডিং, সেমাই বা পায়েস রান্না করে দিতে পারেন। শিশু খাবে বেশ আগ্রহ করেই। সিজনাল ফলগুলো দিয়ে বানাতে পারেন মজাদার কাস্টার্ড।

৫. খাবার পরিবেশনে নতুনত্ব আনলে শিশুর আগ্রহ তৈরি হয়। এক্ষেত্রে খাবার পরিবেশনের পাত্রটির আকার ও রঙে ভিন্নতা এনে খাবার পরিবেশন করুন। প্রয়োজনে খাবার টেবিলকে সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে শিশুর উপযোগী করে সাজিয়ে তুলতে পারেন।

৬. শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে থাকলেও ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়। বন্ধুরা যখন বাইরে খেলাধুলায় ব্যস্ত, সে সময় যদি আপনি বাসায় জোর করে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন, তাহলে কিন্তু শিশুটি একেবারেই খেতে চাইবে না।

৭. সচরাচর দেখা গেছে, শিশু যদি একা খায় তাহলে সে খুব বেশি খেতে চায় না। কিন্তু যদি অন্য কোনো শিশুর সঙ্গে থাকে, সেক্ষেত্রে সে খেতে আগ্রহ দেখায়। চেষ্টা করুন পরিবারের সবাই যখন খেতে বসেন শিশুটিকেও সঙ্গে রাখতে। তাহলে শিশুটিও খেতে উৎসাহ পাবে।

৮. শিশুকে যখন-তখন খাবার না দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর খাওয়ানো উচিত। নির্দিষ্ট সময় মেনে খাওয়ালে সে সময়মতোই শিশুর ক্ষুধা লাগবে। এতে করে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় খাওয়ার চাহিদা তৈরি হবে।

৯. শিশুর জন্য বাড়তি খাবার দেওয়া শুরু করার পর থেকেই তার খাবারে সবজি, মাছ, মাংস ইত্যাদি যুক্ত করুন- যাতে সব ধরনের খাবারে অভ্যাস তৈরি হয়।

১০. শিশুর জন্য পর্যাপ্ত খেলার ব্যবস্থা করুন, খেলাধুলার কারণে তার ক্ষুধা বাড়বে। ফলে শিশুর খাওয়া নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা কমবে অনেকটাই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads