• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য রেমা-কালেঙ্গা

বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য রেমা-কালেঙ্গা

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য রেমা-কালেঙ্গা

  • হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৩ জুলাই ২০১৮

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বনাঞ্চল। একবার সেখানে গেলে বার বার যেতে ইচ্ছে করে। মাত্র ছয় কিলোমিটার রাস্তা ও একটি ব্রিজের অভাবে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠছে না হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। রেমা-কালেঙ্গা শুধু বনাঞ্চলই নয়, সুন্দরবনের পরেই এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। যা হবে সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা বনাঞ্চল ১৪ হাজার ৬৩২ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠে। এই বনাঞ্চলের বয়স প্রায় একশ বছর। এখানে রয়েছে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, ৭ প্রজাতির উভয়চর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, বিলুপ্তপ্রায় উতবা, কাইম, চশমা বানরসহ ৬০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী এবং ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ। নয়নাভিরাম ছোট-বড় পাহাড়, টিলা ও একটি লেক, দুই শ’ ফুট উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, যা পর্যটকদের খুব সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে। মাত্র ছয় কিলোমিটার সড়ক ও করাঙ্গি নদীর ওপর একটি ব্রিজের অভাবে চরম বিড়ম্বনা পোহাতে হয় বিধায় পর্যটকদের সংখ্যা একেবারেই কম। পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে সরকারি-বেসরকারি কটেজ। এতসব সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও কালেঙ্গা অরণ্যে যাওয়ার মতো কোনো রাস্তা নেই।

বন বিভাগ জানায়, নজির, নূহ, কালাসহ ১১টি বনদস্যু বাহিনীর নেতৃত্বে দুই সহস্রাধিক গাছ চোর এসব অপরাধ সংঘটিত করে আসছিল। এ ব্যাপারে কালেঙ্গা বিট অফিসার হেলাল উদ্দিন বলেন, কয়েক বছর পূর্বে গাছ কাটার মহোৎসব ছিল। যেখানে প্রতিবছর গড়ে আড়াই হাজার গাছ কাটা হতো, সেখানে গাছ কাটা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু সিএমসির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় গাছচোর, দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে একাধিক সভা, উঠান বৈঠক, বন মামলা থেকে অব্যাহতিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। তা ছাড়া আইপ্যাকের মাধ্যমে স্থানীয়দের গরু-ছাগল পালন, বাঁশ-বেত, মৎস্য চাষের ওপর প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ শেষে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং বাগান সৃজন করাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োজিত করা হয়। আর এসব কর্মসূচির মাধ্যমে বনের ওপর নির্ভরশীলদের গাছ পাচার থেকে বিরত রাখা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জনবল সঙ্কট ও লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় বন রক্ষায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে অনেক সময় খবর পেয়েও আমরা জরুরি ভিত্তিতে কিছু করতে পারি না। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে অবশ্যই দেশের অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত হবে। আর পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠলে স্থানীয় অধিবাসীদের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তাহলেই এলাকায় অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে।

এ ব্যাপারে সিএমসির (বন রক্ষায় সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি) সভাপতি সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু বলেন, সিএমসির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি গাছচোর, কুখ্যাত বনদস্যু, বনের আশপাশ এলাকার লোকজনদের নিয়ে বিভিন্ন সময় উঠান বৈঠক, সভা ও সমাবেশ করেন। এরপর বন মামলায় জর্জরিত ব্যক্তিদের মামলা থেকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত করা, আইপ্যাকের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মধ্য দিয়ে বনদস্যুদের গাছ চুরি থেকে রোধ করা সম্ভব হয়েছে। আদিবাসী রমেশ দেব বর্মা বলেন, স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বাঁশ-বেত, গরু-ছাগল প্রদানসহ বিভিন্ন প্রকল্পে বনের ওপর নির্ভরশীলদের অন্তর্ভুক্ত করায় এখন সবাই মোটামুটি ভালোভাবে বাস করতে পারছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads