• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলা সাহিত্যে বর্ষা

হুমায়ূন আহমেদের অসংখ্য উপন্যাসে বর্ষা এসেছে নানা রঙে

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

বাংলা সাহিত্যে বর্ষা

  • কামরুল আহসান
  • প্রকাশিত ১৬ জুলাই ২০১৮

বাংলা সাহিত্যে বর্ষা ভিজে কাঁথার মতো লেপ্টে আছে। সেই বিদ্যাপতির ‘এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মোর’ থেকে শুরু করে বাংলার প্রধান কবি রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য গান-কবিতায় বর্ষা ঝরছে অঝোর ধারায়। রবীন্দ্রনাথ বর্ষা নিয়ে এতটাই মাতামাতি করলেন যে বাংলার আরেক প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতির কবি হওয়া সত্ত্বেও বর্ষা নিয়ে কোনো কবিতাই লিখলেন না। জীবনানন্দ দাশ না লিখলেও ত্রিশের অন্য আধুনিক কবিরা অবশ্য পিছিয়ে নেই। নজরুল থেকে শুরু করে বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, জসীম উদ্দীন সবাই অল্পবিস্তর বর্ষার রূপ বর্ণনা করেছেন। পঞ্চাশ-ষাট-সত্তর দশকের বাংলার আধুনিক কবিদের মধ্যেও পড়েছে বর্ষার বিপুল প্রভাব। বাংলাদেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান তার এমন বর্ষার দিনে কবিতায় লিখেছিলেন-

চল্লিশটি বর্ষার সজল স্পর্শ তোমাকে আকুল

করে আজো, আজো দেখি তুমি জানালার কাছ ঘেঁষে

বাইরে তাকিয়ে আষাঢ়ের জলধারা দ্যাখো খুব

মুগ্ধাবেশে; মনে হয়, আষাঢ় তোমার মন আর

হূদয় শ্রাবণ। তুমি এই তো সেদিন ঘন কালো

মেঘদল দেখে, শুনে বৃষ্টির জলতরঙ্গ বললে

নিবিড় মেদুর স্বরে, ‘এ বৃষ্টি আমার, এই বর্ষা

আমাকে সস্নেহে তার দীর্ঘ আঙুলে ছুঁয়ে যায়।’

বাংলাদেশের আরেক জনপ্রিয় কবি মহাদেব আরো তীব্রভাবে হাহাকার করে উঠেছিলেন-

বৃষ্টির কথা থাক, বিরহের কথা বলি।

শুনাই দুজনে বিদ্যাপতির বিষণ্ন পদাবলী,

বর্ষার কথা থাক, বকুলের কথা বলি।

ঝরা বকুলেই ভরে রাখি এই প্রশস্ত অঞ্জলি।

আকাশের কথা থাক, হূদয়ের কথা শুনি।

বর্ষা মানেই যেন হাহাকার, ‘আকাশে জল ঝরে অনিবার, জগতে কেহ যেন নাহি আর, সমাজ সংসার মিছে সব, মিছে এ জীবনের কলরব’, তখন কারো কাছে মন ভার নামানোর জন্য মন কেবল আকুলব্যাকুল হয়ে থাকে।

শুধু কবিতায় নয়, বর্ষা তার সৌন্দর্য, রহস্য ও প্রবল দাপট নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে বাংলা গল্প-উপন্যাসেও। সবচেয়ে গভীরভাবে এসেছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মা নদীর মাঝি এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী এবং জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে উপন্যাসে। বাংলার জনজীবন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, প্রেম-ভালোবাসা, সম্পর্কের মিথস্ক্রিয়া এসব উপন্যাসে বর্ষার প্রকৃতির সঙ্গে এক সুরে মিশে গেছে। আধুনিক বাংলা গল্প-উপন্যাসেও বর্ষা এসেছে নগর ও গ্রামীণ জীবনের সমস্ত আড়ম্বর ও বিড়ম্বনা নিয়ে। সাম্প্রতিক বাংলাসাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের লেখায় বর্ষা নিয়ে মাতামাতি ছিল রবীন্দ্রনাথের মতোই। তার অসংখ্য উপন্যাসে বর্ষা এসেছে নানা রঙে। বিশেষ করে শ্রাবণ মেঘের দিন উপন্যাসে। আর বাংলাসাহিত্যের আধুনিক লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার এক গল্পে নগরজীবনের এক সন্ধ্যার অপরূপ বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে- ‘এই মনোরম মনোটোনাস শহরে অনেক দিন পর আজ সুন্দর বৃষ্টি হলো। রাত এগারোটা পার হয় হয়, এখনো রাস্তার রিকশা চলছে ছল ছল করে যেনো গোটিয়ার বিলে কেউ নৌকা বইছে, ‘তাড়াতাড়ি করো বাহে, ঢাকার গাড়ি বুঝি ছাড়ি যায়।’ আমার জানলায় রোদন-রূপসী বৃষ্টির মাতাল মিউজিক, পাতাবাহারের ভিজে গন্ধভরা সারি, বিষাদবর্ণ দেওয়াল; অনেক দিন পর আজ আমার ভারি ভালো লাগছে।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads