• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
কুসংস্কারের কুপ্রভাবে গর্ভবতী মা

কুসংস্কার আছে, মায়ের শালদুধ শিশুর জন্য ক্ষতিকর

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

কুসংস্কারের কুপ্রভাবে গর্ভবতী মা

  • প্রকাশিত ২৯ জুলাই ২০১৮

ফারজানা বীথি

গর্ভাবস্থা প্রতিটি নারীর জন্য কাঙ্ক্ষিত একটি অধ্যায়। দীর্ঘ নয় মাসের এই অধ্যায়টি আনন্দ, ভয় আর উত্তেজনার মিশেলে কাটে। সবচেয়ে সুন্দর এ সময়টাতে হবু মায়েরা গর্ভস্থ সন্তানের জন্য সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত থাকেন। তাই যে যেভাবে চলার কথা বলেন বা পরামর্শ দেন কোনো কিছু বিবেচনা না করেই মেনে নেন। পরিবারের লোকজন বিশেষ করে বয়োজেষ্ঠ ব্যক্তিরা মাকে এ সময়টি কীভাবে পার করবে সে বিষয়ে নানা রকম পরামর্শ এবং বিধিনিষেধ দিয়ে থাকেন। যা অনেকাংশেই কুসংস্কার। যেটি গর্ভবতীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জায়গায় তার গর্ভাবস্থা বা প্রসবকালীন সময়টাকে আরো জটিল করে তুলতে পারে। প্রচলিত কিছু কুসংস্কারের মধ্যে রয়েছে-

১. শালদুধ শিশুর জন্য ক্ষতিকর

কুসংস্কার আছে, মায়ের শালদুধ শিশুর জন্য ক্ষতিকর। এটি খেলে শিশুর পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া ইত্যাদি হয়ে থাকে। অথচ শালদুধ নবজাতকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন এবং এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

২. গর্ভাবস্থায় কম খাওয়া ভালো

এই ধারণাটি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত যে, গর্ভাবস্থায় বেশি খাবার খেলে শিশু আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হবে, ফলে সন্তান প্রসবের সময় মায়ের কষ্ট বেশি হবে। এই ভ্রান্ত ধারণা থেকেই গর্ভবতীর প্রসবকে সহজ করার জন্য এ সময় অল্প খাবার খেতে বলা হয়। অথচ গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টি চাহিদা একজন সাধারণ নারীর চেয়ে অনেক বেশি থাকে। আর সেই বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য তাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এই ভ্রান্ত ধারণার ফলে এ সময় মা এবং গর্ভস্থ শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারের অভাবে অপুষ্টিতে ভোগে। অনেক মা-ই অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেন। এখনো গ্রামাঞ্চলগুলোতে এই কুসংস্কার রয়ে গেছে।

৩. বোয়াল মাছ, বাইম মাছ, মৃগেল মাছ না খাওয়া

গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন মাছ খাওয়া নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের কুসংস্কার। বোয়াল মাছ খেলে শিশুর ঠোঁট বোয়াল মাছের মতো দেখতে হবে। শিশুর জন্মের পর বেশি গা মোড়াবে যদি মা বাইম মাছ খান। মৃগি রোগ হতে পারে মায়ের মৃগেল মাছ খাওয়ার ফলে।

৪. চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময় ধারালো জিনিসে কোনো কাজ নয়

এই কুসংস্কারটিকে সবচেয়ে প্রাচীন বললে কোনো ভুল হবে না। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এ ধারণা প্রচলিত যে, চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলা কিছু কাটাকাটি করলে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হয়। সন্তান কানকাটা বা ঠোঁটকাটা বা বিভিন্ন অঙ্গের বিকলাঙ্গতা নিয়ে জন্ম নেয়।

এ ছাড়া এ সময় মাকে কোনো কিছু স্পর্শও করতে দেওয়া হয় না। বলা হয়, এতে শিশুর শরীরে দাগ দেখা যায়। গ্রহণ শেষ হওয়ার আগে খাবার খেতেও নিষেধ করা হয়ে থাকে।

৫. জোড়া ফল খেলে যমজ শিশুর জন্ম হয়

চন্দ্র গ্রহণের মতোই এটিও খুব পুরনো ধারণা যে, জোড়া কলা বা জোড়া যেকোনো ফল খেলে যমজ সন্তান হয়। যদিও সন্তান যমজ হবে কি না তা পুরোটাই নির্ভর করে ক্রোমোজোমের ওপর।

৬. খাসির মাংস খেলে শিশুর শরীরে পশম হয় বেশি

গর্ভবতীকে খাসির মাংস খেতে নিষেধ করা হয়ে থাকে। বলা হয়, এতে করে শিশুর শরীরে অধিক পশম হয়।

৭. মুখে মধু দিলেই শিশু হবে মিষ্টভাষী

এখনো শহর-গ্রাম সব জায়গাতেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মুখে মধু দেওয়ার প্রথা লক্ষ করা যায়। বলা হয়, জন্মের পর মুখে মধু দেওয়া হলে শিশুর মুখের ভাষা সুন্দর হয়। অথচ এই মধু থেকে নবজাতকের মুখে ঘা হতে পারে।

৮. সন্তান ছেলে না মেয়ে বোঝা যায় পেট দেখেই

আরো একটি কুসংস্কার প্রচলিত আছে। গর্ভবতীর পেটের আকৃতি দেখে অনাগত সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে- তা নাকি সহজেই বোঝা যায়। পেট যদি সামনের দিকে কিছুটা ঝুলে থাকে, তবে সন্তান হবে ছেলে। আর যদি মায়ের পেট অনেক বড় হয়, তবে গর্ভের সন্তান হবে মেয়ে। যদিও এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কিন্তু অনেক সময় এই কুসংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই গর্ভবতীর সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করা হয়। ছেলে সন্তান হবে অনুমান করা গেলে যেমন যত্নের অন্ত থাকে না, তেমনি মেয়ে হবে মনে হলে সইতে হয় লাঞ্ছনা।

৯. প্রসব-পরবর্তী সময়ে শুকনো খাবার খাওয়া

প্রসবের পরও রয়েছে কিছু কুসংস্কার। যেমন সদ্যপ্রসূতি মাকে স্বাভাবিক খাবার কিংবা রসালো খাবার দেওয়া যাবে না। এতে করে শরীরের ঘা শুকাতে সময় নেবে বেশি। এজন্য তাকে শুকনো খাবার যেমন- মুড়ি, ভর্তা দিয়ে ভাত ইত্যাদি খাওয়ার কথা বলা হয়ে থাকে। যাতে ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। এ কারণে অনেকাংশেই মায়ের পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়।

এসব কুসংস্কার থেকে যতদিন গর্ভবতী মাকে রক্ষা করা না যাবে, ততদিন নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads