• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
হেপাটাইটিস বি

রোগটি নির্মূলের উপায় না থাকলেও রয়েছে প্রতিষেধক টিকা

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

হেপাটাইটিস বি

  • প্রকাশিত ০৯ আগস্ট ২০১৮

হেপাটাইটিস বি প্রাণঘাতী মারাত্মক রোগ। এই রোগের চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। সে কারণে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কোনো চিকিৎসা নেই। পৃথিবীর প্রায় ২৪০ থেকে ৩৮০ মিলিয়ন নারী-পুরুষ দীর্ঘ মেয়াদের জন্য তাদের দেহে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের জীবাণু বহন করে চলছে।

প্রতিবছর ১০-৩০ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এই রোগটি নির্মূলের উপায় না থাকলেও রয়েছে প্রতিষেধক টিকা।

সবার হেপাটাইটিস বি রোগ সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত এবং সময় থাকতেই প্রতিষেধক টিকা নিয়ে রাখা উচিত।

 

নীরব ঘাতক হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্তের কারণ ও লক্ষণ

হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্তের কারণ :

# রক্তক্ষরণ ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট রক্তশূন্যতার চিকিৎসায় বার বার ব্লাড ট্রান্সফিউশন গ্রহণ করা হলে।

# কিডনি ফেইল হওয়ার কারণে ডিমো-ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে।

#  হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত নারী-পুরুষের মধ্যে এবং একাধিক নারী-পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলন হলে।

# ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ বা মাদকদ্রব্য সরাসরি রক্তনালীতে প্রবেশ করালে।

# একই সুঁই ও সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করলে।

#  রোগীর দেহ থেকে রক্ত নেওয়া, স্যালাইন বা ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ দেওয়ার সময় কিংবা ল্যাবরেটরিতে রক্ত ও রোগীর দেহ থেকে তরল পদার্থ নিয়ে পরীক্ষা করার সময় অসাবধানতাবশত হেপাটাইসি বি সংক্রমিত রক্ত কিংবা অন্য তরল জাতীয় পদার্থ স্বাস্থ্যকর্মীদের রক্তের সংস্পর্শে চলে এলে তারাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

# হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত মায়ের গর্ভজাত সন্তানদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

 

হেপাটাইটিস বি রোগের লক্ষণ

# সব সময় গা ম্যাজমেজ করতে থাকা,

# অবসাদ বোধ করা,

# বেশিরভাগ সময় মাথাব্যথা থাকা,

# গা চুলকানো,

# হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা থাকা, বিশেষ করে ডান দিকের উপরিভাগের জয়েন্টে,

# ক্ষুধামন্দা ভাব থাকা,

# বমি বমি ভাব থাকা এবং কারণ ছাড়াই বমি হওয়া,

# জ্বর জ্বর অনুভূত হওয়া,

# চোখ ও প্রস্রাবের রঙ হলুদ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

হেপাটাইটিস বি নিরূপণের উপায়

রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত করতে হবে। সাধারণত রক্তে হেপাটাইটিস বি সারফেস এন্টিজেন, হেপাটাইটিস বি আইজিএম কোর এন্টিজেন, হেপাটাইটিস বি ই এন্টিজেন ও সেই সঙ্গে লিভার এনজাইমের অধিক মাত্রা নিশ্চিতভাবে হেপাটাইটিস বি-এর একিউট সংক্রমণের কথা বলে দেয়।

ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস বি নিশ্চিত হওয়ার জন্য রক্তে হেপাটাইটিস বি সারফেস এন্টিজেন দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি, হেপাটাইটিস বি কোর আইজিজি (ওমএ) এন্টিজেন, হেপাটাইটিস ই এন্টিজেন ও লিভার এনজাইম পরীক্ষা অত্যন্ত-জরুরি। আর সময়ের ব্যবধানে বি ভাইরাস দেহ থেকে নিঃসৃত হয়ে গেলে রক্তে হেপাটাইটিস বি সারফেস এন্টিজেন মাত্রা হ্রাস পেয়ে একসময় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে এবং ভবিষ্যতের জন্য হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধক হেপাটাইটিস বি কোর এন্টিবডি ও বি সারফেস এন্টিবডি তৈরি করে।

কতগুলো বিষয়ে সতর্ক থাকলে এ রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

# ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা।

# ইনজেকশন ব্যবহারের সময় ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করা।

# দাঁতের চিকিৎসার সময় জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া।

# রোগের বিরুদ্ধে নিজের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। হেপাটাইটিস বি-র টিকা ৪টি ডোজ নেওয়া। প্রথম তিনটি

এক মাস পর পর এবং চতুর্থ ডোজটি প্রথম ডোজের এক বছর পর নিতে হয়।

চিকিৎসা 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব নবজাতকের হেপাটাইটিস বি’র টিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে ঘোষণা করেছে এবং ইতোমধ্যে ৮০টির বেশি দেশ এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে টিকা দেওয়ার সম্প্রসারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে সরকার সকল শিশুকে হেপাটাইটিস বি ভ্যাক্সিন দেওয়ার জন্য একে ইপিআই ভ্যাক্সিন কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ টিকা যে কোনো বয়সে যে কোনো দিন নেওয়া যায়। শতকরা নববই ভাগ মানুষের শরীরে এই ভ্যাক্সিন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

নীরব ঘাতক এ সংক্রামক ব্যাধিটি প্রতি মিনিটে কেড়ে নেয় দুজন নারী-পুরুষের প্রাণ। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে সবার প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সর্বোপরি এ মহামারী থেকে বাঁচার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।

ডা. মো: আমিনুল ইসলাম
এমবিবিএস, বিসিএস, এফসিপিএস(গ্যাস্ট্রো)
রেজিস্টার(মেডিসিন) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads