• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব

  • প্রকাশিত ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাধারমণ দত্ত 

রাধারমণ দত্ত বা রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থ (জন্ম ১৮৩৩, মৃত্যু ১৯১৫) সাহিত্যিক, সাধক কবি, বৈষ্ণব বাউল, ধামালি নৃত্যের প্রবর্তক। বাংলা লোকসঙ্গীতের পুরোধা লোককবি রাধারমণ দত্ত। তার রচিত ধামাইল গান সিলেট ও ভারতে বাঙালিদের কাছে পরম আদরের ধন। রাধারমণ নিজের মেধা ও দর্শন কাজে লাগিয়ে মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। তিনি দেহতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, অনুরাগ, প্রেম, ভজন, ধামাইলসহ নানা ধরনের কয়েক হাজার গান রচনা করেছেন। রাধারমণের পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় উপাসনার প্রধান অবলম্বন সঙ্গীতের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল শৈশব থেকেই। পিতার সঙ্গীত ও সাহিত্য সাধনা তাকেও প্রভাবিত করেছিল। কালক্রমে তিনি একজন স্বভাবকবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। রচনা করেন হাজার হাজার বাউল গান। লিখেছেন কয়েকশ ধামাইল গান। ধামাইল গান সমবেত নারীকণ্ঠে বিয়ের অনুষ্ঠানে গীত হয়। বিভিন্ন সংগ্রাহকের মতে, রাধারমণের গানের সংখ্যা তিন হাজারেরও উপরে। সাধক রাধারমণের গানের বেশকিছু গানের বই বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়। অধ্যাপক যতীন্দ্র মোহন ভট্টাচার্য প্রথমে রাধারমণ দত্তের গান সংগ্রহের উদ্যোগ নেন। কলকাতা থেকে বাউল কবি রাধারমণ নামে ৮৯৮টি গান নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। মোহাম্মদ মনসুর উদ্দীন তার হারামনি গ্রন্থের সপ্তম খণ্ডে রাধারমণের ৫১টি গান অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

হাসন রাজা   

হাসন রাজা একজন মরমি কবি এবং বাউলশিল্পী। তার প্রকৃত নাম দেওয়ান হাসন রাজা। মরমি সাধনা বাংলাদেশে দর্শনচেতনার সঙ্গে সঙ্গীতের এক অসামান্য সংযোগ ঘটিয়েছে। দর্শনচেতনার নিরিখে লালনের পর যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নামটি আসে, তা হাসন রাজার। হাসন রাজার জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সেকালের সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে। হাসন রাজা জমিদার পরিবারের সন্তান। তার পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন প্রতাপশালী জমিদার। হাসন রাজা তার তৃতীয় পুত্র। তার পূর্বপুরুষের অধিবাস ছিল অযোধ্যায়। হাসন ছিলেন স্বশিক্ষিত। তিনি সহজ-সরল সুরে আঞ্চলিক ভাষায় প্রায় সহস্রাধিক গান রচনা করেন। এক আধ্যাত্মিক স্বপ্ন-দর্শন হাসন রাজার জীবন-দর্শন আমূল পরিবর্তন করে দেয়। হাসন রাজার মনের দুয়ার খুলে যেতে শুরু করে। তার চরিত্রে আসে এক সৌম্যভাব। বিলাসপ্রিয় জীবন ছেড়ে দেন। তার মনে আসে একধরনের উদাসীনতা, একধরনের বৈরাগ্য। হাসনের গানেই তার চিন্তা-ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি কত গান রচনা করেছেন, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। হাসন রাজার কিছু হিন্দি গানেরও সন্ধান পাওয়া যায়। মরমি গানের ছক-বাঁধা বিষয়ধারাকে অনুসরণ করেই হাসনের গান রচিত। ঈশ্বানুরক্তি, জগৎ জীবনের অনিত্যতা ও প্রমোদমত্ত মানুষের সাধন-ভজনে অক্ষমতার খেদোক্তিই তার গানে প্রধানত প্রতিফলিত হয়েছে।

শাহ আবদুল করিম

বাউল গানের জীবন্ত কিংবদন্তি শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্র্য ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। বাউল সম্রাটের প্রেরণা তার স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। তিনি তার গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহের দর্শন থেকে। যদিও দারিদ্র্য তাকে বাধ্য করে কৃষিকাজে তার শ্রম ব্যয় করতে; কিন্তু কোনো কিছু তাকে গান সৃষ্টি থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তিনি আধ্যাত্মিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন কামাল উদ্দীন, সাধক রশীদ উদ্দীন ও শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশের কাছ থেকে। তিনি শরীয়তি, মারফতি, নবুয়ত, বেলায়াতসহ সবধরনের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখারও চর্চা করেছেন। স্বল্প শিক্ষিত বাউল শাহ আবদুল করিম প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার কিছু গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। বাউল শাহ আবদুল করিমের এ পর্যন্ত প্রকাশিত গানের বইগুলো হলো— আফতাব সঙ্গীত, গণসঙ্গীত, কালনীর ঢেউ, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে এবং দোলমেলা। বাউল শাহ আবদুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম মৃত্যুবরণ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads