• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

ফিচার

সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের অর্থনীতি

  • অলোক আচার্য
  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০১৯

স্বাধীনতার পর থেকে ক্রমেই অগ্রগতির দিকে ধাবমান আমাদের অর্থনীতি। যে পাকিস্তান আমাদের সব ধ্বংস করে বাঙালির অস্তিত্বই বিনষ্ট করতে চেয়েছিল, তারা নিজেরাই আজ আমাদের পেছনের কাতারে। আমাদের লক্ষ্য এখন ভিশন-২০৪১। ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রতিকূলতা কাটিয়ে বিনিয়োগ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করতে হবে। ধীরে ধীরে আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী পাঁচটি দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতি ও রফতানিনির্ভর শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির কারণে। কয়েকদিন আগে প্রকাশিত এডিবির আউটলুক ২০১৯ প্রকাশিত হয়েছে। চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে দ্রুতগামী। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা শক্তিশালী ও স্থিতিশীল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনীয় জনবল থাকতে হবে এবং আর্থিক খাত, ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ ও অবকাঠামোর শূন্যতা পূরণের মতো খাতগুলোতে উদ্ভাবনীমূলক সংস্কার করতে হবে। দেশের সার্বিক জীবনমান, অবকাঠামো এবং আর্থসামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন করা একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। ভিশন ২০৪১-কে সামনে রেখে বাংলাদেশ যে গতিতে এগিয়ে চলেছে, তাতে বাংলাদেশের উন্নত দেশে পরিণত হওয়া সময়ের ব্যাপার। তবে দেশের উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে এখানে অর্থনীতির গতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভাব বিস্তার করে। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমাগত শক্তিশালী হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি বেড়েছে।

গত বছর প্রকাশিত বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ওপর তৈরি একটি প্রতিবেদনে আইএমএফ বলেছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। আরো কয়েকটি বৈশ্বিক সংস্থার চোখেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অনেক বড় সম্ভাবনা উঠে এসেছে। সম্প্রতি এইচএসবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ যেসব দেশের আকার দ্রুত বাড়বে, সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার উপরে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এশিয়ার পরাশক্তি প্রতিবেশী ভারত, চীন, জাপান দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নতিও ঘটছে দ্রুতগতিতে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে উন্নয়ন কার্যক্রম আরো বেগবান হবে। ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্লুমবার্গের এক বিশ্লেষণে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনাময় দিক উঠে এসেছে। ২০২২-২৩ সালে পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে প্রভাবশালী ২০ দেশের তালিকায় আসছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নতুন চালিকাশক্তির মধ্যে ইরান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ অন্যতম। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ সালে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে চীন। চীনের অবদান থাকবে সবচেয়ে বেশি ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এর পরই রয়েছে ভারত এবং ভারতের পর যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি আরব, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের অবদান থাকবে ১ শতাংশ। এটি সত্যিই বাংলাদেশের জন্য গর্বের। আইএমএফ মনে করে, ২০১৮-২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩ দশমিক ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি পাবে। ২০২১ থেকে ’২৩ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশকে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর কাতারে নিতে হলে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি সড়ক নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি উড়াল পথে মেট্রোরেলের মাধ্যমে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াবে রাজধানীবাসী। কর্ণফুলী টানেল হলে পানির নিচ দিয়ে চলবে গাড়ি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর অগ্রগতি এখন দৃশ্যমান। কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে বাস ও ট্রেন ছুটবে খুব কম সময়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রগতি ঘটবে। মজার ব্যাপার হলো, যে দেশ একসময় বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বকে খাটো করে দেখেছে, তারাও আজ স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে যে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। অনেক দেশ বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে রোল মডেল হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের প্রধান সম্পদের মধ্যে রয়েছে জনশক্তি। এক্ষেত্রে চীন বড় একটি উদাহরণ। বিশাল জনশক্তি নিয়েও চীন আজ অর্থনীতি, সামরিকসহ সব দিক থেকে উন্নত দেশ। ভারত তার জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলেছে। জনশক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করার জন্য জনগণকে দক্ষ করে গড়ে তোলা আবশ্যক। জনগণকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রযুক্তি এবং কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। শিক্ষিত বেকারদের অগ্রাধিকার দিয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং করেও আজ দেশের বহু তরুণ-তরুণী দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। এভাবে চাকরির আশায় না ঘুরে তাদের যদি স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি আরো ত্বরান্বিত হবে। তবে দুর্নীতির কারণে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। এখন দুর্নীতি রোধ করার জন্য সরকারের যেমন দায় রয়েছে, তেমনি নাগরিক হিসেবে নিজেদেরও দায় রয়েছে। কিন্তু আমরা কেউই নিজের ওপর দায় নিতে রাজি নই। কেবল ভোট দিলেই সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। একজন নাগরিক হিসেবে যে দায়িত্ব রয়েছে তা পালন করলেই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বাংলাদেশ একসময় বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে। এ দেশ অর্থনীতি এবং অবকাঠামোতে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। 

তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে মাঝারি আয়ের দেশে উন্নত হওয়া আমাদের দেশ নতুন এক সাফল্য স্পর্শ করেছে। এদেশের অর্থনীতি হবে একসময় এশিয়ান টাইগার। দরিদ্র দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে। ক্রমোন্নতির এই ধারায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলাদেশ অবশ্যই উন্নত দেশে পরিণত হবে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের এই দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশের ঘামে ভেজা মানুষের শ্রমে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। এই পরিশ্রম দিয়েই এদেশের মানুষ ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন করবে।

 

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads