• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
খাবার পরিমিত খেলে রোজায় সুস্থ থাকা যায়

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

খাবার পরিমিত খেলে রোজায় সুস্থ থাকা যায়

  • ফয়জুন্নেসা মণি
  • প্রকাশিত ১৬ মে ২০১৯

চলছে রমজান মাস। এবারের রোজায় পানাহার বিবর্জিত সময়কাল ১৩-১৪ ঘণ্টা। অর্থাৎ সেহরির পরের এতটা সময় শরীর পুষ্টি গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে। খাদ্য গ্রহণের এমন বিরতিকালে অন্ত্র খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষণ সম্পন্ন করে ফেলে। স্বাভাবিক অবস্থায় গ্লুকোজ যকৃত ও পেশিতে সংরক্ষিত থাকে। দীর্ঘক্ষণ খাদ্য-পানীয় গ্রহণ না করলে সঞ্চিত গ্লুুকোজ প্রথমে শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। গ্লু-ুকোজ নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পর শক্তির পরবর্তী উৎস হয় চর্বি। তাই রোজার দিনগুলোয় সুষম খাদ্য ও তরল খাবার গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশি ভাঙন রোধ করতে এবং শক্তি ধরে রাখতে কার্বোহাইড্রেট, ভালো চর্বি, লবণ ও পানিজাতীয় খাবার রাখতে হবে সেহরি ও ইফতারের তালিকায়। পরিশ্রম হয় এমন ব্যায়ামের পরিবর্তে যোগব্যায়াম করুন, এড়িয়ে চলুন ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়।

রোজায় সুস্থতা ধরে রাখুন
ইফতার, রাত্রিভোজ ও সেহরিতে পুষ্টিকর খাবার পরিমিত পরিমাণে খান। উচ্চমানের চর্বিজাতীয় খাবার, লবণ ও চিনি এড়িয়ে চলুন। তাজা ফল, শাকসবজি, ভাত, ডাল ও শস্যদানা খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার ইত্যাদির জন্য নিয়মিত ওষুধ খেতে হলে ডাক্তারের কাছ থেকে রোজায় ওষুধ সেবনের সময় বা নিয়ম জেনে নিন। এবারের রোজা হচ্ছে প্রচণ্ড গরমের সময়ে। তাই সারাদিন সিয়াম সাধনার পর ইফতারে মুখরোচক অনেক কিছুই খেতে ইচ্ছে করলেও রমজান মাসের খাবার যতটা সম্ভব সহজপাচ্য ও স্বাভাবিক হওয়া উচিত। কারণ ভাজাপোড়া ও ভারী খাবার খেলে পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অবসাদ, আলসার, অ্যাসিডিটি, হজমের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। সারাদিন রোজা রাখায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তাই তৎক্ষণাৎ শক্তির জোগান দিতে সক্ষম এমন খাবার খাদ্য তালিকায় রাখুন। এমন খাবারের মধ্যে আছে আঙুর, খেজুর, ফলের রস। এগুলো শরীরে সহজে শক্তি আহরণে কাজে লাগে, শরীরের পানি ও খনিজের প্রয়োজনও মেটায়। মিষ্টি শরবত, মিষ্টান্নজাতীয় অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই এ ধরনের খাবার বর্জন করা ভালো।
খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খাবেন, যা আপনার হজমে সহায়ক হবে। ইফতার ও সাহরিতে আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করুন। রোজায় সুস্থ শরীরে ভালো থাকার জন্য একটা ব্যালান্স ডায়েট বা সুষম খাবার দরকার। দৈহিক চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখেই এ সময় খাদ্য নির্বাচন করতে হবে। তাই শরীরকে হাইড্রেট রাখতে প্রচুর পানি, মৌসুমি ফল ও সবজির জুস বা স্মুদি এ ধরনের তরল, ঠান্ডা খাবার ও আঁশজাতীয় খাবার রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত জুস বা খাবার না খেয়ে প্রাকৃতিক খাবার থেকে এনার্জি নেওয়াই ভালো। এখন গ্রীষ্মকাল, তাই মৌসুমি ফল খেলে রোজায় হাইড্রেটেড থাকা যাবে খুব সহজেই। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার বা পানীয় রোজায় না খেয়ে প্রাকৃতিক খাবার থেকে এনার্জি নেয়াই শ্রেয়। চিনির পরিবর্তে মধু খেলে উপকার বেশি পাবেন। যারা ডায়াবেটিকসের রোগী, তাদের খাবার গ্রহণ এবং ইনসুলিন ব্যবহারে সচেতন থাকতে হবে। পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত তৈলাক্ত খাবার বেশি খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, তাই এসব যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। খাবার পরিমিত খেলে রোজায় সুস্থ থাকা যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রোজার সময় অনেকের পেটের সমস্যা দেখা দেয়। এটি সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণের জন্য হয়। তাই তারা চাইলে ইফতারে দই-চিড়া খেতে পারেন। দই রয়েছে প্রোবাওটিক, যা পেটের খারাপ ব্যাক্টেরিয়াকে ধ্বংস করে।

খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন
রোজায় দুধ, খাসির মাংস (গরুর মাংসের পরিবর্তে), ওটমিল, ফল, সবজি, পেঁয়াজ, শসা, খেজুর, আঙুর ও ডাল খাদ্যতালিকায় রাখুন। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট খাবার পানাহার বর্জিত ঘণ্টাগুলোয় শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চার করে। কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায় শস্যদানা ও বিভিন্ন রকম বীজ থেকে যেমন : বার্লি, গম, ওট, শিমের বিচি, ডাল, বাসমতি চাল ইত্যাদি। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারও ধীরে ধীরে হজম হয়। সিরিয়াল, বিভিন্ন ধরনের বিচি, খোসাসহ আলু, সবজি ও প্রায় সব ধরনের ফলেই রয়েছে ফাইবার। তবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট, মিহি চিনি, সাদা আটা অথবা চর্বিযুক্ত খাবার যেমন : কেক, বিস্কুট, চকোলেট ও মিষ্টি পরিহার করতে হবে। একই সঙ্গে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, চা, কফি ও কোলা এড়িয়ে যেতে হবে। কারণ ক্যাফেইন মূত্রবর্ধক বলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে।


ইফতার : রোজার দিনগুলোয় মূলত ইফতার, রাতে হালকা খাবার ও সেহরি- এই তিনবেলা খাদ্য গ্রহণ করা হয়। অনেকে রাতে দেরি করে খান, যাতে সেহরি করতে না হয়। কিন্তু এটি মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়, কারণ সেহরিতে যা খাওয়া হয়, তা-ই পরবর্তী দিনে ইফতারের আগপর্যন্ত ঘণ্টাগুলোতে শরীরে শক্তি সঞ্চয় করে। সাধারণত পানি ও খেজুর দিয়েই ইফতার শুরু করা হয়। খেজুর শক্তি জোগাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাছাড়া তাজা ফল ও ফলের রসও শরীরে পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করে। দুটি খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করে এক গ্ল¬াস পানি অথবা মাঠা পান করুন। স্বাস্থ্যকর ইফতারে রাখা যেতে পারে বাড়িতে তৈরি স্যুপ, সালাদ, কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার যেমন ভাত, পাস্তা ও আলু, প্রোটিনজাতীয় খাবার- খাসির মাংস, মুরগির মাংস অথবা মাছ।
সেহরি : সেহরি হওয়া উচিত স্বাস্থ্যকর ও দীর্ঘক্ষণ শরীরে থাকে এমন খাবার দিয়ে। সেক্ষেত্রে ধীরে ধীরে হজম হয়, এমন খাবার যেমন কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা জরুরি। সেইসঙ্গে প্রচুর পানি পান করলে সারা দিন শরীর হাইড্রেটেড থাকবে ও খাবার হজমে সহায়ক হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads