• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
রোজা রেখেও ভালো থাকা যায়

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

রোজা রেখেও ভালো থাকা যায়

  • ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
  • প্রকাশিত ১৬ মে ২০১৯

নিয়মিত রোজা পালন করলে সাধারণ বাত রোগ, বহুমূত্র, অজীর্ণ, হূদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা যায়। তবে রোজার সময় খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে দেহের ভালো-মন্দ বেশ সম্পর্কযুক্ত। লিখেছেন ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল

জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে, দেহ মনে নতুনত্বের ছন্দ ফিরিয়ে আনতে আমরা বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পেতে চাই। বৈচিত্র্যহীন জীবন কখনোই সুখকর হতে পারে না। রোজা দেহযন্ত্রের কর্মকাণ্ডে বৈচিত্র্যের প্রভাব ফেলে গতিশীল, লাবণীয় ও নতুন ছন্দের হাওয়া লাগায়।
অনবরত একই সুরে বা ধারায় কাজ করতে করতে দেহতন্ত্রের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়ে। এক মাস রোজাতে দেহের প্রতিটি গঠন একক বিশ্রামাগারে থেকে নতুন আঙ্গিকে কর্ম সম্পাদন করে। ইঞ্জিনচালিত গাড়ি যেমন মাঝে মধ্যে ওয়ার্কশপে রাখতে হয়, তারপর নতুন গতিতে চলতে থাকে। ঠিক তেমনি দেহযন্ত্র এক মাস ওয়ার্কশপে থেকে নতুন শক্তি লাভ করে। বিশ্রাম লাভ করে পতিত জমির মতো উর্বরতা লাভ করে।
সারা বছর শরীরে যে জৈব বিষ (টক্সিন) জমা হয়, রোজায় তা জ্বলে-পুড়ে নিঃশেষ হয়ে রক্ত পরিশুদ্ধ হয়। উল্লেখ্য, জৈব বিষয়ের আধিক্য দেহের জন্য ক্ষতিকর। রোজা বা উপবাস থাকলে শরীরের ওজন সামান্য হ্রাস পায় বটে, তবে তা শরীরের ক্ষতি করে না; বরং শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝেড়ে ফেলে। নিয়মিত রোজা পালন করলে সাধারণ বাত রোগ, বহুমূত্র, অজীর্ণ, হূদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা যায়। তবে রোজার সময় খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে দেহের ভালো-মন্দ বেশ সম্পর্কযুক্ত।
রোজার মূল আকর্ষণ ইফতার। আর ইফতার মানেই রকমারি খাবারের আয়োজন। সারা দিন রোজার রাখার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস পায়, আর এ কারণেই আসরের আগে-পরে মাথা থাকে গরম, মেজাজ থাকে চড়া। মস্তিষ্ক বা ব্রেনের খাবার গ্লুকোজ।
সুতরাং ইফতারের প্রথম ও প্রধান উপাদান হওয়া প্রয়োজন কাগজি লেবু, কমলা, তেঁতুল, বেল, তোকমা, গুড়, ইসুবগুলের ভুসি, চিড়া প্রভৃতির শরবত। সারা দিন রোজা থাকার পর পেট বা পরিপাকতন্ত্র এমনি থাকে ঝাঁঝালো, তারপর ভাজি বা ঝালযুক্ত খাদ্য পাকস্থলীতে অস্বস্তির উদ্রেক করতে পারে। তাই ছোলা ভাজা, পেঁয়াজু, বেগুনি, বিভিন্ন ধরনের বড়া কম পরিমাণে খাওয়া উচিত। সেমাই, দই, দুধ, চিড়া, পায়েস ইত্যাদি নমনীয় খাবার বাড়িয়ে ঝাল জাতীয় খাবার কম রাখা ভালো। কলা, পাকা পেঁপে, কমলা, আনারস ত্বক সুন্দর রাখবে এবং আয়রন ও ভিটামিনের অভাব পূরণ করবে। শুকনো খেজুরে রয়েছে প্রচুর আয়রন তাই ইফতারের মেনুতে থাকতে হবে দু-চারটি খেজুর।
ইফতারের পর গুরুপাক খবার খাওয়া ঠিক নয়। সাহরিতে ভারী খাবার বা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেমন- মাছ, গোশত, ডিম, দুধ খেলে ভালো। অনেকে রোজার সময় বেশি বেশি খাবার বিশেষত তৈলাক্ত খাবার খেয়ে নানারকম সমস্যায় পড়ে অথবা অতিরিক্ত মেদবহুল হয়ে পড়ে। আবার কেউ বা শরীরের ওজন কমানোর উদ্দেশে সেহরিতে না খেয়ে নানাবিধ সমস্যায় ভোগে।
অধিক ও অনিয়মিত খাওয়ার ফলে নানারকম রোগের সৃষ্টি হয়। কথায় বলে, ‘অতিভোজন রোগের কারণ’। রমজানে মুখের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে বলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এক মাস রোজা রাখার ফলে পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম পায়, লিভার, হূদযন্ত্র শক্তিশালী হয়, পরবর্তী মাসগুলোতে নতুন উদ্যমে জীবন চলার শক্তি সঞ্চিত হয়। তাই রোজার মাসে ইফতার, ইফতার-উত্তর খাবার এবং সেহরির খাবারের ব্যাপারে সচেতন হয়ে আগামী দিনগুলোতে তেজোদীপ্ত থাকুন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads