• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
শিশুরা চোখ খুলে দিয়েছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন

ছবি -পিআইডি

সরকার

আন্ডারপাস নির্মাণকাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

শিশুরা চোখ খুলে দিয়েছে

#সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে # ওভারটেকিং না করে লাইন দিয়ে বাস চালাতে হবে #ডিজিটাল বাংলাদেশ অশ্লীল কথা ও গুজবের জন্য নয় #যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৩ আগস্ট ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন। অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মচারীদের তাদের দায়িত্ব আন্তরিকতার সঙ্গে প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষানুযায়ী পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশুরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে, বিবেককে জাগ্রত করেছে। তাই আমি আশা করব, জনগণ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষানুযায়ী সবাই তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করবেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। ড্রাইভার ও হেলপারদেরও আইন মানতে হবে। ওভারটেকিং না করে লাইন দিয়ে বাস চালাতে হবে। ওভারটেক করতে গেলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। বাসস

শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ চত্বরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত পুলিশ মহাপরিদর্শকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথভাবে নির্দেশ দিতে হবে যেন কোনোরকম অনিয়ম না হয়।’ প্রধানমন্ত্রী যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সব সড়কে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন ও ডিজিটাল নম্বর প্লেট ব্যবহার নিশ্চিতে গুরুত্বারোপ করে বলেন, এর মাধ্যমে লেজার সিগন্যাল দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অনিয়ম শনাক্ত করা যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি কর্মচারীদের অহেতুক বিলম্ব পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই আন্ডারপাস প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়িত হলে দুটি অমূল্য প্রাণ হয়তো এভাবে ঝরে যেত না। এ সময় তিনি শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম এবং আবদুল করিম রাজিবের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। মিম ও রাজিব ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের কাছেই জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায় এবং এ দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড ৪৩ মিটার দীর্ঘ এই মাল্টিপারপাস অত্যাধুনিক আন্ডারপাসটির নির্মাণকাজ এক বছরে শেষ করবে। সরকারের অর্থায়নে এর ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রী নির্মাণাধীন আন্ডারপাস প্রকল্পে বিলম্বে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, টাকা কে দেবে এজন্য দীর্ঘদিন এই আন্ডারপাসের প্ল্যান করেও বসে থাকা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সবাইকে অনুরোধ করব আমাদের এখানে বড় বড় আমলারা আছেন, তাদেরকে বলব আপনারা যদি কোনো সমস্যা সমাধান করতে না পারেন, আমি তো রয়েছিই।’ এজন্য প্রধানমন্ত্রী তার নিজস্ব মোবাইল ফোনে বা অফিসে যোগাযোগের অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সবার উদ্দেশে বলেন, ‘রাস্তা পারাপারের জন্য যে জায়গাটি নির্দিষ্ট করা রয়েছে- কোথাও ফুটওভারব্রিজ, কোথাও জেব্রাক্রসিং, কোথাও আন্ডারপাস আছে, ঠিক সেইসব জায়গা দিয়েই রাস্তা পারাপার হতে হবে। এর বাইরে দিয়ে রাস্তা পার হওয়া মোটেই ঠিক নয়। আর কেউ যদি এ ধরনের কাজ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি সড়কে চলতে পারবে না। হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ সংশ্লিষ্ট এলাকা এবং যেখানে বেশি মানুষের চলাচল রয়েছে সেখানে ফুটওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস করে দেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, নিরাপদে গাড়ি চালানো নিশ্চিত করার জন্য সরকার চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও অনেক চালক এতেও ফাঁকি দেয়। তারা নিজেরা ভালোভাবে ট্রেনিং করে না। আবার হেলপারদের হাতেও গাড়ি দিয়ে দেয়। তারপরও সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে সত্য যাচাইয়ের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীসহ সবার উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি সুশিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার জন্য। অশ্লীল কথা বা গুজবের জন্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘এই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অনেকে গুজব ছড়িয়েছে। দয়া করে গুজবে কান দেবেন না।’ এ সময় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তার আহ্বানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে তাদের দাবি-দাওয়া সরকার মেনে নেয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনে যখন দেখলাম স্কুলের ইউনিফর্ম বানিয়ে অনেকে ঢুকে পড়ছে, বুঝলাম তৃতীয় পক্ষ, যারা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়। এটা দেখার পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়ি। তখন একটি অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যেতে বলি। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই, তারা সময়মতো ঘরে ফিরে গেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন আমাদের (ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়) অফিস আক্রান্ত হলো, তখন সেখান থেকে ফোন আসছিল, বলা হচ্ছিল- আমরা তো টিকতে পারছি না, শুধু পাথর ছোড়া হচ্ছে। তখন বলেছি, শুধু ধৈর্য ধরতে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কারা করল এটা? সে সময় ব্যাপক গুজব ছড়ানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন দর্জি দোকানে ইউনিফর্ম বানানোর হিড়িক পড়ে গেছে; এসব কারা করেছে?’

শিশু-কিশোরদের আন্দোলনের সময় সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চললেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আবার পুরনো বিশৃঙ্খলা ফিরে আসায় প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নগরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। এমনকি বাসেও বিন থাকতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে থাকতে পারে বলেও অভিমত দেন প্রধানমন্ত্রী।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads