• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
কৃষিবিদ ড. রাজ্জাক হলেন কৃষিমন্ত্রী

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক

সংগৃহীত ছবি

সরকার

কৃষিবিদ ড. রাজ্জাক হলেন কৃষিমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ জানুয়ারি ২০১৯

দেশে প্রথমবারের মতো কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন কোনো কৃষিবিদ। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক।

সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নিয়মানুযায়ী প্রথমে প্রধানমন্ত্রী এবং পরে পর্যায়ক্রমে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের প্রথমে পদের ও পরে গোপনীয়তার শপথবাক্য পাঠ করান। সেখানে কৃষিমন্ত্রী হিসেবে ড. আব্দুর রাজ্জাক শপথ নেন।

ভদ্র ও সজ্জন মানুষ হিসেবে ড. রাজ্জাকের দেশ জোড়া সুখ্যাতি রয়েছে। ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জালাল উদ্দিন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি গবেষণা বিভাগে চাকরি করতেন। মাতা রেজিয়া খাতুন সহজ সরল বাঙালি রমণী। ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক দুই পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী শিরীন আকতার বানু আবুজর গিফারি কলেজের প্রিন্সিপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে ধনবাড়ি নওয়াব ইনস্টিটিউট হতে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাশ করেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে বিএসসি (এজি) এবং ১৯৭২ সালে কৃষিতত্ত্বে এম এস সি (এ.জি) ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাধীনতার যুদ্ধে তিনি সরাসরি যুদ্ধ করেছেন। পরবর্তীতে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি ১৯৮২ সনে যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের পর তিনি যুক্তরাজ্যের অ্যাঞ্জেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ালেখা করেছেন। বাংলাদেশে ফার্মিং সিস্টেম রিসার্চ ও স্থায়ী গ্রামীণ কৃষি উন্নয়ন বিষয়ে তিনি অন্যতম একজন বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও তিনি যুক্তরাজ্যের ইস্ট এনজেলিয়া ইউনিভারসিটি থেকে ফার্মিং সিস্টেম রিসার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের অধীনে ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট, জাইকার ব্যবস্থাপনায় জাপানে স্ট্র্যাটেজিস ফর সাসটেইনেবল এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ বেশ কিছু বিষয়ে তিনি উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশিত মেথডোলজিক্যাল গাইড লাইন্স ফর ফার্মিং সিস্টেম রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ শীর্ষক বইয়ের রচয়িতাদের একজন। এছাড়াও বিভিন্ন জার্নালে তাঁর ২৫ টিরও অধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে । বিভিন্ন বিদেশি ম্যাগাজিনে তাঁর কৃষি বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশিত বেশকিছু ডকুমেন্টের সম্পদনার দায়িত্বও পালন করেছেন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বি.এ.আর.সি) এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের কর্মজীবন শুরু। এ প্রতিষ্ঠানেই তিনি মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে সে¦চ্ছায় অবসর নিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া তিনি কৃষি গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্মদিগন্ত সমনি¦ত ফার্মিং সিস্টেম গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মসূচির ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর হিসেবেও অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনে তার বিচরণ ষাটের দশকে অর্থাৎ স্কুল জীবন থেকে। ১৯৬৯ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি বাঙালির মুক্তি সনদ ৬ দফা ও ১১ দফা ভিত্তিক গণ-আন্দোলনে অংশ নেন। এ আন্দোলনে সক্রিয়া ভূমিকা পালনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ১৯৭২-১৯৭৩ সালে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয় কার্যকরি পরিষদের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশের স¦াধীনতা সংগ্রামে তিনি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। অসাধারণ নেতৃত্বগুণ, কর্তব্যপরায়নতা, নিষ্ঠাগুণে আজ তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন সফল ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী  কমিটিতে ২০০২ থেকে  ২০১৬ সাল পর্যন্ত (৩ মেয়াদে)  কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।

২০০১ সালের  ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল মধুপুর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং এ জাতীয় সংসদের কৃষি মন্ত্রণালয় ও অনুমতি হিসাব সংক্রান্ত দু‘টি স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ২০০৮ সালের ২৯ ডিসে¤¦র তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ৬ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। পরবর্তিতে তিনি খাদ্য মন্ত্রী হিসেবেও সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দশম জাতীয় সংসদে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন  করেছেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে ড. আব্দুর রাজ্জাক নৌকা প্রতীক নিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের সরকার সহিদ পেয়েছেন মাত্র ১৬ হাজার ৪০৬ ভোট। ৭ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান।

ছাত্রজীবন থেকেই ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক নিজ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিজকে নিয়োজিত রেখেছেন। ১৯৬৯ সালে নিজ গ্রাম মুশুদ্দিতে প্রগতি সংঘ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এ কøাবের মাধ্যমেই তার নেতৃত্বে ১৯৬৯ সালে মধুপুর-ধনবাড়ি এলাকার প্রথম শ্রেণীর বিদ্যাপীঠ মুশুদ্দি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ধনবাড়িকে একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের লালিত স¦প্ন-ছিলো। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ১৯৯৮ সালে ধনবাড়িতে থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০১ সালে উপজেলা স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। থানা প্রতিষ্ঠায় ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় মুশুদ্দি ইউনিয়ন গোপালপুর থেকে মধুপুর উপজেলার সাথে সংযুক্ত হয়। অবহেলিত ধনবাড়ি এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরানি¦ত করার লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা করার দাবি তুলে ধরেন। বর্তমানে ধনবাড়ি পূর্ণাঙ্গ উপজেলায় পরিণত হয়েছে। তিনি অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পেশাজীবী ও সামাজিক সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত। ১৯৯৬-৯৭ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক আমেরিকান সোসাইটি অভ অ্যাগ্রোনমি, ক্রপ সাইন্স সোসাইটি অব আমেরিকা, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর দা অ্যাডভান্সমেন্ট অব সাইন্স (বি.এ.এ.এস), বাংলাদেশ এগ্রোনমি সোসাইটি, বাংলাদেশ হর্টিকালচার সোসাইটি ও বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনস্ এর সদস্য।

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক পেশাগত কাজে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, পেরু, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, গিনি, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স ও শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads