• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
গ্রামীণ রাস্তার মহাপরিকল্পনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সংগৃহীত ছবি

সরকার

গ্রামীণ রাস্তার মহাপরিকল্পনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ নভেম্বর ২০২০

সরকারি অর্থব্যয়ে দেশজুড়ে যেসব রাস্তা-সেতু-কালভার্ট তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলোর মান ঠিক থাকছে কি-না সে নজরদারি জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি সারা দেশের গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে একটি মহাপরিকল্পনা তৈরির কথাও বলেন। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে সংশ্লিষ্ট একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনাকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

একনেক সভায় সাত হাজার ৫০৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা খরচে পাঁচটি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সরকার দেবে সাত হাজার ৪২৬ কোটি ৬১ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প : বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন দিয়েছে। বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ৩০৫ কোটি বাড়িয়ে ৯৫০ কোটি থেকে ১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

সভা শেষে পরিকল্পনা সচিব আসাদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরেন। বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুবই গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন যে, আমরা অনেক কাজ করেছি গ্রামীণ রাস্তা, গ্রামীণ অবকাঠামোর। কাজগুলো সত্যিকার হচ্ছে কি-না, কোয়ালিটিফুল (মানসম্মত) হচ্ছে কি-না সেগুলো ভালো করে পরখ করতে হবে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেছেন, মাল্টিপ্লেয়ার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। তারপরও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কাজের কোয়ালিটি যেন ঠিক থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তায় যেন পানি না জমে। কারণ রাস্তায় পানি জমলে সেটা নষ্ট হয়ে যায়।

কোন রাস্তা, কত রাস্তা, কোথায় করা হবে সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী আরেকটা মাস্টারপ্ল্যান করার কথা বলেছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের নেতৃত্বে গ্রামীণ রাস্তা ও অবকাঠামো নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। সড়ক, ত্রাণসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ কাজে অংশ নেবে। ৫৯০৫ কোটি ৫৯ লাখ খরচে আজকের একনেকে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে আসাদুল ইসলাম বলেন, এ রাস্তাগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিদ্রুত এগুলো ঠিক করতে হবে। তবে অন্যান্য মন্ত্রণালয় যারা রাস্তা করে বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটা করতে হবে-যাতে কোনো ওভারলেপিং না হয়। কোন কাজটুকু করতে হবে, কত কাজ বাকি থাকছে, কোন মন্ত্রণালয় করলে ভালো হয়-এগুলো সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। আগামী বর্ষা আসার আগেই যেন মূল কাজগুলো হয়ে যায়।

নদী ভাঙনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে বলেন, নদীভাঙন রক্ষায় মূল কৌশল হবে আমাদের একটা চ্যানেলে সবসময় প্রবাহ রাখা। প্রয়োজনে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে নিয়মিত আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং রাখতে হবে। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখলে ভাঙন থেকে আমরা অনেকাংশে রক্ষা পাব। কোনো ডুবোচর বা কোনো চর যদি থাকে, সেগুলো চিহ্নিত করে সরিয়ে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে বর্ষায় যখন পানির খুব চাপ বেড়ে যায় তখন তা যেন আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে, এজন্য একটা বাফার জোন থাকতে হবে বাঁধের পাশাপাশি-যাতে বাঁধ বা লোকালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত না করে পানি সেখানে থাকতে পারে।

বড় নদীর পাশে যেসব ছোট ছোট নদী থাকে, সেগুলো অনেক সময় ভরাট হয়ে যায়। সেগুলোর পানি ধারণক্ষমতা কমে যায়। যার কারণে বড় নদী অনেক প্রশস্ত হয়ে যায়, আমাদের প্লাবিত করে ফেলে বা বাঁধ ভেঙে ফেলে। এজন্য ড্রেজিং, ক্যাপিটাল ড্রেজিং, নিয়মিত ড্রেজিং, বাফার জোন তৈরি করা, ছোট ছোট নদীগুলো খনন করা, রক্ষণাবেক্ষণ করার বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, বন্যা বা নদীর প্লাবন পলি বয়ে নিয়ে আসে। পলি আসা যেন বন্ধ না হয়, সে বিষয়টাও খেয়াল রাখতে হবে।

সচিব আরো জানান, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে চারটিই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এবং একটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। প্রকল্পগুলোর মধ্যে তিনটি  নতুন এবং দুটি সংশোধিত। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘যমুনা নদীর ডানতীরের ভাঙন হতে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলাধীন কাতলামারী ও সাঘাটা উপজেলাধীন গোবিন্দি এবং হলদিয়া এলাকা রক্ষা’ প্রকল্পে খরচ হবে ৭৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।

বাকি চারটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের। সেগুলোর মধ্যে ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে পাঁচ হাজার ৯০৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্জ্যব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ হবে ৩৯৩ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তার মধ্যে সরকার দেবে ৩১৪ কোটি ৭২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি করপোরেশন দেবে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ ১২ হাজার টাকা।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত দুটি প্রকল্পের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প : বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৯৫০ কোটি থেকে সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে হয়েছে এক হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুনে। এর সময় বাড়িয়ে করা হলো ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

এছাড়া শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। এটির খরচ ১২৬ কোটি ৫৯ লাখ ৯২ হাজার থেকে সংশোধন করে বাড়ানো হয়েছে ২২৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের মার্চে শুরু হওয়া এ প্রকল্প ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সংশোধনীতে এর মেয়াদ বাড়িয়ে করা হলো ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। 

একনেক সভায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম; শিক্ষামন্ত্রী মোঃ দীপু মনি; শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন; স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক; বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি; মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকসহ সংশ্লিষ্ট সচিব ও সদস্যরা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads