• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
এবার বর্ষার আগেই ডুববে চট্টগ্রাম

এবার বর্ষার আগেই ডুববে চট্টগ্রাম

ছবি : সংরক্ষিত

মহানগর

এবার বর্ষার আগেই ডুববে চট্টগ্রাম

  • চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • প্রকাশিত ১৮ মার্চ ২০১৯

সমুদ্র আর পাহাড় প্রকৃতির উঁচু-নিচু, অসমতল মহানগরী চট্টগ্রাম। দেশের আমদানি রফতানির অন্যতম পাদপীঠ বলে একে দ্বিতীয় রাজধানী বলা হয়ে থাকে।

কিন্তু নগরায়ণে শিল্পাঞ্চল আর জনসংখ্যার মাত্রাতিরিক্ত চাপ শহরটিকে ধীরে ধীরে রুগ্ণ করে তুলছে। নগরীতে বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানি নিষ্কাশনের মূল পথ এখানকার ৩৬টি খাল ও পাহাড়ি ছড়া। দীর্ঘদিন ধরে নির্বিচারে বেদখল, ভরাট ও দূষণের কারণে এই বন্দরনগরীর প্রাণপ্রবাহ খাল-ছড়াগুলো এখন অনেকাংশেই অক্ষম। নগরীর বিশাল অংশজুড়ে প্রতি বছর পানিবদ্ধতার প্রধান কারণ ৩৬টি মূল খাল-ছড়া ও এর সঙ্গে যুক্ত নালা-নর্দমাগুলোর বেহাল দশা। খাল পুনঃখনন, সংস্কারসহ নগরীর জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে বড়সড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগরীর নাগরিক সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে তার বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সিডিএ’র উদ্যোগে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি মেগা প্রকল্প ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদিত হয়। এতে সরকারি অর্থায়নে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাস্তবায়ন কাজে হাত দিতেই এখন সিডিএ বলছে মেগা প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হবে না। বরাদ্দও বেড়ে যাবে। এর ফলে ঝুলে গেছে সিডিএ’র মেগা প্রকল্পটি। জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে নগরবাসীর পরিত্রাণের কোনো সুখবর এ বছরও নেই।

বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে আসছে। বঙ্গোপসাগর উত্তাল অশান্ত হয়ে প্রবল জোয়ারে দুর্যোগের সময়ও অত্যাসন্ন। অতীতে বেশ কয়েক বছর দেখা গেছে ভরা বর্ষার আগেই ভারী বর্ষণ ও সামুদ্রিক জোয়ারের তীব্রতা। দুইয়ে মিলে প্রতি বছর তলিয়ে যায় বন্দর নগরীর বিশাল এলাকা। সিডিএ’র মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ফের বর্ষায় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে চট্টগ্রাম নগরবাসী। জলাবদ্ধতার ভয়-শঙ্কা শুরু হয়ে গেছে লাখ লাখ চট্টগ্রামবাসীর মাঝে। বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র আগ্রাবাদের মানুষ রয়েছেন জোয়ার ও বর্ষার জলাবদ্ধতার আতঙ্কে।

এ ছাড়া পশ্চিমে হালিশহর, পতেঙ্গা, কাট্টলী, পূর্বদিকে চান্দগাঁও, মোহরা, কালুরঘাট, ষোলশহর, শোলকবহর, বাকলিয়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, মুরাদপুর, চকবাজার, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, প্রবর্তকসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা এবারো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহতের পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হওয়ার মুখে। গুদাম-আড়ত, দোকানপাটে কোটি কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হতে পারে গতবারের মতো এবারো।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ সাদার্ন ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি অধ্যাপক প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ বলেন, সিডিএ’র সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের এক বছর হয়ে গেল। আশা করা হয়েছিল বেশকিছু কাজ এগিয়ে যাবে, জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে মানুষ সুফল ভোগ করবে। কিন্তু কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ কারণে নগরবাসী হতাশ। সরকার যে উদ্দেশ্যে বড়সড় প্রকল্পটিতে বরাদ্দ দিয়েছে, জলাবদ্ধতা নিরসনের মাধ্যমে তার দ্রুত বাস্তবায়ন সবাই দেখতে চান।

গত ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখে সিডিএ ভবনে গণপূর্ত ও গৃহায়নমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম মতবিনিময় সভা করেন। এতে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম স্বীকার করেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটির মেয়াদ তিন বছর। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে না। যেহেতু এটি বৃহৎ প্রকল্প, তাই এর কাজ শেষ হতেও সময় লাগবে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হবে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী চট্টগ্রামে ৫৭টি খাল বিদ্যমান। সেখান থেকে ৩৬টি খাল প্রকল্পে বেছে নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি খালগুলো প্রকল্পের আওতায় আসবে। জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। ১১টি খালের ডিটেইল ডিজাইন তৈরি করতেই আবার বর্ষা এসে গেছে। তাই ডিজাইন মোতাবেক কাজ বাদ দিয়ে আপাতত বিকল্প চিন্তা করতে হচ্ছে। ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা মোকাবেলা করা হবে।

পূর্তমন্ত্রী সিডিএ’র প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সভায় সিডিএ’র বোর্ড সদস্য হাসান মুরাদ বিপ্লব নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প দ্রুত শেষ করার দাবি জানান। তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর এক বছর পার হলো অথচ এখনো অগ্রগতি নেই। খালগুলো যেভাবে ভরাট হয়ে আছে, আসন্ন বর্ষায় চট্টগ্রামবাসী আবারো জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে বন্দরনগরীর মানুষ।

এই নগরের শিরা-উপশিরা বলে পরিচিত ৩৬টি খাল-ছড়ার একাংশ ভূমি দখলবাজদের কব্জায় চলে গেছে। এসব খাল ও ছড়ার দৈর্ঘ্য ১৪৬ কিলোমিটার।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের হিসাবমতে, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে বড়, ছোট ও মাঝারি মিলে ৫৭টি খাল রয়েছে। আরএস, পিএস, বিএস জরিপ-খতিয়ান অনুসারে কঠোর অভিযান চালিয়ে খালগুলো একযোগে পুনরুদ্ধার করে নগরীর প্রাণ ফেরানোর দাবি দীর্ঘদিনের।

সিডিএ’র মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন না হতেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ অপর একটি প্রকল্প সরকারের অনুমোদন পেয়েছে। গত ২ মার্চ চট্টগ্রামে ‘নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসন ও চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতায় দীর্ঘদিনের সমস্যা থেকে চট্টগ্রামবাসী স্থায়ী মুক্তি পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার স্থায়ী একটা সমাধান হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads