• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
‘কেউ ধর্ষক কেউ দর্শক মানুষ দেখি না’

রাজধানীর কুর্মিটোলায় এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের মুখ ছিল কাপড়ে বাঁধা; হাতে ছিল ধর্ষণবিরোধী পোস্টার-প্ল্যাকার্ড। যার একটির ভাষা ছিল এমন-কেউ ধর্ষক, কেউ দর্শক, মানুষ দেখি না

ছবি -বাংলাদেশের খবর

মহানগর

‘কেউ ধর্ষক কেউ দর্শক মানুষ দেখি না’

বিক্ষোভে উত্তাল ঢাবি, ধর্ষণের আলামত মিলেছে

  • এ এইচ এম ফারুক
  • প্রকাশিত ০৭ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামির নামে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন ওই থানার ওসি কাজী শাহান হক। ওসি বলেন, মামলা গ্রহণের পরপরই তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রথমে ওই ছাত্রী ধর্ষণের জায়গা নির্দিষ্ট করে জানাতে না পারায় সকাল থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আশপাশের এলাকায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে ওই ছাত্রীর তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণ অভিযোগের ঘটনাস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে। তার তথ্যের সূত্র অনুযায়ী, বিমানবন্দর সড়কে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কাছে গলফ ক্লাব সীমানার শেষ প্রান্তে ঝোপের মধ্যে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ঝোপের মধ্যে মেয়েটির ইনহেলার, ক্লাসের নোটবুক, লেকচার শিট, চাবির রিং পড়েছিল। এ ছাড়া সেখান থেকে জুতা ও কালো রঙের একটি জিন্স প্যান্ট পাওয়া গেছে।

সুদীপ কুমার বলেন, ঘটনাটি তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তিরও সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। আশা করা যায়, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের ধরা যাবে। তবে আমাদের ধারণা, ধর্ষক একজন। ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা জানান, গত রোববার বিকালে ক্লাস শেষে বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে ঢাবির নিজস্ব পরিবহনের বাসে ওঠেন দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী। বান্ধবীসহ একসঙ্গে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছিলেন তিনি। তার গন্তব্য একই সড়কের শেওড়া এলাকা হলেও আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভুল করে বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলায় বাস থেকে নামেন তিনি। বাস থেকে নেমে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় হঠাৎ অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজন তার মুখ চেপে ধরে অদূরেই নির্জন স্থানে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এর পর পালাক্রমে কয়েকজন মিলে তাকে গণধর্ষণ করে। একপর্যায়ে তার জ্ঞান ফিরলে পাশবিক নির্যাতনে আবারো তিনি জ্ঞান হারান। রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর ওই ছাত্রী দেখতে পান একটি নির্জন স্থানে পড়ে আছেন। এর পর সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান এবং বান্ধবীকে পুরো ঘটনা জানান। খবর পেয়ে সহপাঠীরা প্রথমে তাকে ক্যাম্পাসে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। রাত ১২টার দিকে ওই ছাত্রীকে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।

সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল ঘটনাস্থল কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ৪০০ গজ সামনে র্যাব-পুলিশ, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও ক্রাইম সিন আলামত সংগ্রহ করে। জায়গাটি গলফ ক্লাবের সীমানার শেষ প্রান্তে যাত্রীছাউনি ছাড়িয়ে। ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাত দূরে একটি বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড রয়েছে। যে জায়গায় ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে সেখানে ফুটপাত আছে। অনেক ল্যাম্পপোস্ট আছে। লোকজনের চলাচলও থাকে। জায়গাটিতে কয়েকটি মেহগনি গাছ আছে। ছোট ছোট বরই গাছ আছে অনেক। ঝোপঝাড় ও লতাগুল্ম আছে। সেখানেই একটি ঝোপে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে ওই স্থান দিয়ে লোকজনের চলাচল তুলনামূলকভাবে কম।

এদিকে ঢামেকের ওসিসি সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রীকে ধর্ষণের সব আলামত পাওয়া গেছে। আগে থেকে তার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল। ধর্ষণের সময় মারধর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, ট্রমা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন ধর্ষণের শিকার ছাত্রীটি। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দিতে চেষ্টা চলছে।

ঢামেক পরিচালক বলেন, মেয়েটির মেন্টাল ট্রমা ছাড়াও শারীরিক কিছু আঘাত রয়েছে। পাশাপাশি তিনি কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন এবং আমরাও কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ অবস্থায় তার সঙ্গে দেখা করা, কথা বলা তার জন্য অস্বস্তিকর। কেউ যেন আমরা তার কাছে না যাই।

তার যেহেতু শ্বাসকষ্ট হচ্ছে সে জন্য রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগসহ আরো কিছু বিভাগের চিকিৎসককে নিয়ে একটি বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঢামেকের গাইনি বিভাগের প্রধান সালমা রউফকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ধর্ষণের আলামতের বিষয়ে তিনি বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগ দেখছে।

ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে ফরেনসিক পরীক্ষায় ঢাবির ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয়প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ। গতকাল বিকালে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।

ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ফরেনসিক পরীক্ষায় ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তার গলায় আঙুলের দাগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তার গলা টিপে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল। হাতে-পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সারা পায়ে খোঁচা লাগার দাগ রয়েছে। ঝোপের মধ্যে ধর্ষণের কারণে এ দাগ হয়ে থাকতে পারে।

ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর মামা জানান, ঠিক কোথায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তা তারা এখনো জানতে পারেননি। ভাগ্নি মা-বাবা ও তার (মামা) সঙ্গে হাসপাতালে কথা বলেছেন। তিনি (ভাগ্নি) জানান, শেওড়া যাওয়ার সময় ভুল করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কাছে নেমে পড়েছিলেন। হাসপাতালের আশপাশেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন তারা।

ছাত্রীর মামার ভাষ্য, তার ভাগ্নি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার তথ্য তাদের জানা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বরত শিক্ষকরা হাসপাতালে গিয়ে ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads