• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

থার্টিফার্স্ট নাইট

রাজধানীর নিরাপত্তায় ১৫ হাজার র্যাব-পুলিশ

যান চলাচলের ওপরও কড়া নজরদারি

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

থার্টিফার্স্ট নাইটে রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় আজ ১০ হাজার পুলিশের পাশাপাশি সাড়ে ৫ হাজার র্যাব সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। রাজধানীকে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো বলতে যা বোঝায় সেটিই করবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। শুধু প্রধান সড়কেই নয়, অলিগলিতেও র্যাব-পুলিশের উপস্থিতি থাকবে। নাশকতার পাশাপাশি উচ্ছৃঙ্খলা ঠেকাতে র্যাব-পুলিশের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলে মনে করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে কোনো ধরনের ডিজে পাটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বন্ধ থাকবে সব বারও। এছাড়া গুলশান-বনানীকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে আরো কঠোর।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, থার্টিফার্স্ট নাইটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেওয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনারের বক্তেব্যও তা প্রকাশ পেয়েছে। ডিএমপি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, থার্টিফার্স্ট নাইটে এবার রাজধানীতে ১০ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মাঠে থাকবে। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও মাঠে থেকে তাদের মনিটরিং করবেন। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সিসি ক্যামেরা দিয়ে কন্ট্রোলরুম থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

এছাড়া রাজধানীর স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে নাশকতা, উচ্ছৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ সকাল থেকেই কাজ শুরু করবে। কূটনৈতিক এলাকা ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, ধানমন্ডি, উত্তরাসহ বেশ কিছু এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ডিএমপির নির্দেশনা : ঢাকা মহানগরের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায়, ভবনের ছাদে এবং প্রকাশ্যে স্থানে কোনো জমায়েত/সমাবেশ/উৎসব করা যাবে না। উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কোনো অনুষ্ঠান বা সমবেত হওয়া যাবে না বা নাচ, গান ও কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। কোথাও কোনো ধরনের আতশবাজি/পটকা ফোটানো যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬ টার পরে বহিরাগত কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গাড়ি নির্ধারিত সময়ের পর পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। আর পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে নীলক্ষেত ক্রসিং দিয়ে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করতে পারবে। গুলশান ও বনানী এলাকায় রাত ২টার পর বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারবে না। তবে উক্ত এলাকায় বসবাসরত নাগরিকরা নির্ধারিত সময়ের পর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) এবং মহাখালী আমতলী ক্রসিং দিয়ে পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে প্রবেশ করতে পারবে। একইভাবে উপর্যুক্ত সময়ে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় যেসব নাগরিক বসবাস করেন না তাদের ওইসব এলাকায় যেতে নিরুৎসাহিত করা হলো। রাত ২টার পর হাতিরঝিল এলাকায় কাউকে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না। গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বসবাসরত নাগরিকরা আজ রাত ৮টার মধ্যে স্ব-স্ব এলাকায় প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করা হলো। আজ সন্ধ্যা ৬ টার পর ঢাকা মহানগরীর কোনো বার খোলা রাখা যাবে না। রাত ১০ টার পর সব ফাস্টফুড দোকান বন্ধ থাকবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত আকারে আবাসিক হোটেলগুলোতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান করতে পারবে। তবে কোনোক্রমেই ডিজে পার্টি করতে দেওয়া যাবে না।

ইংরেজি নববর্ষের আগে আজ বৃহস্পতিবার  সন্ধ্যা ৬ টা হতে ১ জানুয়ারি ভোর ৬টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, জনসমাবেশ ও উৎসবস্থলে সব প্রকার লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বহন না করার জন্য সংশ্লিষ্ট নগরবাসীর প্রতি অনুরোধও জানিয়েছে ডিএমপি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নির্দেশনা পালনে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ট্রাফিক ডাইভারশন ও পরামর্শ : আজ রাত ৮ টা থেকে পরদিন ভোর ৫ টা পর্যন্ত গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় যানবাহনে প্রবেশের জন্য কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) এবং মহাখালী আমতলী ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে। সেক্ষেত্রে গুলশান, বনানী ও বারিধারায় বসবাসরত নাগরিকদের রাত ৮ টার মধ্যে উক্ত এলাকায় প্রবেশের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। রাত ৮ টা হতে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে মহাখালী এলাকা-ফিনিক্স রোড ক্রসিং, বনানী ১১ নং রোড ক্রসিং, চেয়ারম্যান বাড়ি ক্রসিং, ঢাকা গেট, শুটিং ক্লাব, বাড্ডা লিংক রোড, ডিওএইচএস বারিধারা-ইউনাইটেড হাসপাতাল ক্রসিং ও নতুন বাজার ক্রসিং উক্ত এলাকাগুলো প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা যাবে না, তবে উক্ত এলাকা থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে এসব ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে। একইভাবে আজ সন্ধ্যা ৬ টা হতে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত শুধুমাত্র শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিচয়পত্র প্রদর্শন এবং শনাক্তকরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। এজন্য পরিচয়পত্র সাথে রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো  হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬ টা হতে টিএসসি, রোমানা স্কয়ার, ঢাকা মেডিকেল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ভাস্কর্য ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং, বকশীবাজার ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং এবং শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করবে না, শুধু বের হওয়ার ক্ষেত্রে এসব ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে। হাইকোর্ট ক্রসিং হতে আসা সব যানবাহন দোয়েল চত্বর বামে মোড় নিয়ে শহিদুল্লাহ হল হয়ে চাঁনখারপুল ক্রসিং দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে। কেউ বেপরোয়া, মদ্যপ ও বিপজ্জনক অবস্থায় গাড়ি চালালে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। রাজধানীতে পুলিশের পাশাপাশি সাড়ে ৫ হাজার র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। র্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডিএমপি কমিশনার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কোনো ধরনের হুমকি  নেই। তবে সতর্কতামূলক সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিএমপির যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, থার্টিফার্স্ব নাইট ও নববর্ষ উদযাপনে দেশে কোনো ধরনের নিরাপত্তার হুমকি নেই। বুধবার দুপুরে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবির দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। মন্ত্রী জানান, কেউ কোনো অঘটন ঘটাতে পারবে না। গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads