• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

রাজধানীতে বেপরোয়া গণপরিবহন

দৈনিক চুক্তির টাকা তুলতে মরিয়া বাস চালকরা

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

রাজধানীতে এখনো বেপরোয়াগতিতে চলছে গণপরিবহন। কোনো নিয়মনীতিরই তোয়াক্কা করেন না গণপরিবহন চালকরা। এজন্য দৈনিক চুক্তিভিত্তিক বাস চালানোকেই দায়ী করছেন তারা। কিন্তু পরিবহন নেতাদের দাবি, শৃংখলা ফেরাতে চুক্তিভিত্তিক বাস নয়, প্রয়োজন সড়কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন।

রাজধানীর মতিঝিল, মিরপুর, শাহবাগ, মগবাজার, মালিবাগ, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, নির্ধারিত বাস স্টপেজ থেকে বেশ দূরে চালকরা বাস থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করছেন। আর একটি বাসের গা ঘেঁষে থামছে আরেকটি বাস। এরমধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা উঠছেন-নামছেন। পাশাপাশি গন্তব্যে পৌঁছাতে রাস্তায় প্রতিযোগিতায় মেতে উঠছে চালকরা। বাস যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেও কানে নিচ্ছেন না তারা।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে কথা হয় রাইদা পরিবহনের বাসচালক মোবারক হোসেনের সাথে। তিনি জানান, এখনো চুক্তি ভিত্তিতেই বাস চালাচ্ছেন তারা। কন্ট্রাক্টর ও হেলপারের বেতন, মালিকের জমা, রাস্তার চাঁদা সব দেওয়ার পর নিজের টাকা উঠাতে হয়। তাই প্রতিযোগিতায় অন্য গাড়িকে পেছনে ফেলতে না পারলে যাত্রী পাওয়া যায় না। যাত্রী না পেলে বাড়তি টাকাও আয় হবে না। এজন্য কিছুই করার থাকে না।

স্টপেজে বাস এলে আড়াআড়িভাবে আরেকটি বাস বেড়িকেড দেয়। এটি দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলাকা পরিবহনের হেলপার সুজন জানান, আশঙ্কাতো আছেই। যাত্রী ও বাস স্টাফ বিশেষ করে যারা গেটে ডিউটি করে তাদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু আমাদের করার কিছু থাকে না। মালিকের নির্ধারিত টাকা দেওয়ার পর আমাদের বেতন, খোরাকি ও রাস্তার চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে হয়। যেভাবেই হোক না কেন আমাদের টার্গেট পূরণ করতেই হবে। তা না হলে দিন শেষে মালিক-চালকের গালাগাল খেতে হবে।

নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে ফার্মগেটে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, নতুন সড়ক আইনের এতো কঠোরতার পরও বাস চালকদের এ বিষয়ে যেন কোনো তোয়াক্কা নেই। তারা আগের মতোই বেপরোয়া। নতুন সড়ক আইনের শুরুতে চালকরা কিছুটা নিয়ম মেনে চললেও এখন আগের মতোই আচরণ করছে। তিনি হতাশকণ্ঠে বলেন, কর্মকর্তাদের নির্দেশে চালকদের ট্রাফিক সচেতনতা বিষয়ে মোটিভেশন করার পরও শৃঙ্খলা ফেরাতে পারছি না। তিনি জানান, চালকদের অধিকাংশই অশিক্ষিত হওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।

আজিমপুর টু মিরপুর রোডে চলাচলকারী বিকাশ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব হোসেন জানান, পরিবহন সেক্টরে অশিক্ষিত বাস স্টাফদের কারণে শৃঙ্খলা ফেরানোটা সহজে সম্ভব নয়। আমরা নিজেরাও বাসচালকদের অনেক বোঝাতে চেষ্টা করি, ট্রাফিক আইন মেনে চলতে, যাত্রীদের সাথে ভালো ব্যাবহার করতে, কিন্তু তারা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়। তবে শুধু শিক্ষার অভাবই নয়, বাস স্টাফদের অতিরিক্ত  পরিশ্রমও তাদের ধৈর্য চ্যুতির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, একজন চালক সকাল থেকে শুরু করে রাত ১০/১১টা পর্যন্ত বাস চালান। এরমধ্যে রাস্তায় তাকে নানা ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়। তার ওপর মালিকের বেঁধে দেওয়া টার্গেট পূরণের টেনশনও থাকে। এছাড়া পরিবহন শ্রমিকদের প্রশিক্ষণেরও যথেষ্ট অভাব আছে। সবকিছু মিলিয়ে রাজধানীতে একজন বাসচালকের কাছ থেকে ট্রাফিক আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নটা আশা করা দুরূহ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাজধানীতে চলাচলকারী বাস-মালিকদের সংগঠন ‘ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি’র সভাপতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, তারা চুক্তিভিত্তিক বাস চালানো ৬০ শতাংশই বন্ধ করতে পেরেছেন। এখনো ৪০ শতাংশ বাস চুক্তির ভিত্তিতেই চলাচল করছে। এজন্য মালিকদের আপাতত চাপও দিচ্ছেন না। কারণ, বর্তমানে তারা সড়ক অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকেই বেশি জোর দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads