• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
টিসিবির পণ্যের চাহিদা বেড়েছে

ছবি: বাংলাদেশের খবর

মহানগর

টিসিবির পণ্যের চাহিদা বেড়েছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ এপ্রিল ২০২১

দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজারদরের ঊর্ধ্বগতি চলছে। এর মাঝে এসেছে মুসলমানদের জন্য পবিত্র রমজান মাস। একই সঙ্গে সারা দেশে করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এসবের দৃশ্যমান প্রভাব পড়েছে টিসিবির পণ্য বিক্রির ট্রাকসেলগুলোর সামনে। বিশেষ করে কঠোর বিধিনিষেধের খবরের পর থেকে আরো কয়েকগুণ দীর্ঘ হয়েছে টিসিবির পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের লাইন।

রমজান উপলক্ষে টিসিবির খোলাবাজারে দ্বিতীয় ধাপে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে গত ১ এপ্রিল। এরপর ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দেওয়া হয় বিধিনিষেধ। ফলে ওই সময় থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে টিসিবির ট্রাকসেলে বাড়তি ভিড় লক্ষ করা গেছে, যা এখন আরো বেড়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় টিসিবির ট্রাকসেলের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। রামপুরা বাজারে টিসিবির ট্রাকসেলে বিক্রি শুরু হয় দুপুর ১২টায়। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে শতাধিক মানুষের লাইন দেখা যায়। দেখা যায়, পণ্য বিক্রি করতে হিমশিম খান ডিলার ও বিক্রয়কর্মীরা। তবে বেশ কিছু স্থানে টিসিবির ট্রাকসেল পৌঁছাতে দেরি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দুপুর দেড়টায়ও আসেনি টিসিবির ট্রাক। এর মধ্যে সেখানে শতাধিক মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সেখানে অপেক্ষমাণ হাফেজা বেগম বলেন, ‘বাড়ির কাজ ফেলে সকাল ১০টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু ট্রাক তো আসে না। আসবে কি না সেটাও কেউ জানে না।’

এ বিষয়ে কয়েকজন ডিলার মুঠোফোনে জানান, চাহিদা বেশি থাকায় বরাদ্দের পণ্য তুলতে সময় লাগছে। তবে যখনই তারা পণ্য পাচ্ছেন সঙ্গে সঙ্গে নির্ধারিত এলাকায় গিয়ে বিক্রি শুরু করছেন।

রামপুরা এলাকায় পণ্য বিক্রি করছিলেন ডিলার জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৭০ থেকে ১০০ ট্রাক পণ্য বুঝে নিতে হচ্ছে টিসিবির তেজগাঁও গোডাউন থেকে। তাতে সময় লাগছে। এখন প্রতিদিন ১২০০ কেজি তেল, ৩০০ কেজি মসুর ডাল, ৭০০ কেজি চিনি, ৪০০ কেজি ছোলা, ৫০০ কেজি পেঁয়াজ ও ১০০ কেজি খেজুর বরাদ্দ পাচ্ছি।’ এদিকে সেখানে দীর্ঘ লাইনে থাকা ক্রেতা সাদেক মিয়া বলেন, ‘বাজারে তেল, চিনির দাম অনেক বেশি। এখানে কিছুটা সাশ্রয়ে কেনা যাচ্ছে। ফলে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তবে যত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছে তেল-চিনি পাব কি না সন্দেহ।’

টিসিবি যেসব পণ্য বিক্রি করে এর মধ্যে তেল ও চিনির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ কারণে ট্রাকসেল শুরুর অল্প সময়ের মধ্যে তেল ও চিনি ফুরিয়ে যায়। কাঙ্ক্ষিত পণ্য না কিনতে পেরে ফিরে যান অনেকে।

অন্যদিকে দ্বিতীয় ধাপে রমজানের পণ্যের দাম কিছুটা বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে টিসিবি। এতে প্রতি কেজি তেলের দাম ১০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা হয়েছে। ডাল, চিনির দাম আগের থেকে ৫ টাকা বাড়ছে বলে জানা গেছে। আর নতুন করে প্রতি কেজি ছোলার দাম ৫৫ টাকা ও খেজুরের দাম ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, এখন ৫০০ ট্রাকসেলে পণ্য বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে। এর মধ্যে রাজধানীতে পণ্য বিক্রি হচ্ছে ১০০ ট্রাকে। এসব পণ্য ১ এপ্রিল থেকে ই-কমার্সের মাধ্যমেও বিক্রি শুরু হয়েছে। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন টিসিবির পণ্য বিক্রি চলবে।

টিসিবি জানিয়েছে, ট্রাকসেলে একজন ক্রেতা দিনে ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল, ১০০ টাকা দরে ৫ লিটার সয়াবিন তেল এবং ২০ টাকা দরে ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। এ ছাড়া ২ কেজি ছোলা ৫৫ টাকা দরে এবং রমজানের প্রথম দিন থেকে এক কেজি খেজুর ৮০ টাকা দরে কিনতে পারবেন।

কচুক্ষেত এলাকায় টিসিবি’র লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশ কাস্টমসে চাকরি করা মিজান। তিনি বলেন, এত কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়েছি শুধু একটু কম দামে কেনার জন্য। বাজারের তুলনায় এখানে কিছুটা কম। এখান থেকে ৫ কেজি তেল নিলে কেজিতে যদি ৪০ টাকা বাঁচে তাহলে ২০০ টাকা সাশ্রয় হয়। ২০০ টাকা আমাদের জন্য অনেক। চাকরি করি বলে লজ্জা নেই। বাজারে সব পণ্যের দাম বেশি। যে বেতন পাই সঞ্চয় তো দূরের কথা খেয়েদেয়েই সব চলে যায়। বউ-বাচ্চা নিয়ে কুলাতে পারি না।

ট্রাকসেলের বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, আগে শুধু গরিব মানুষ টিসিবি থেকে জিনিস কিনত। রিকশাচালক ও বস্তির লোকজন আসত। এখন গরিব মানুষের পাশাপাশি অনেক মধ্যবিত্ত লোকরাও আসেন। বাজারে বেশি দাম সেজন্যই এখানে আসেন। আগের তুলনায় ভিড়ও বেড়েছে। সেজন্য বরাদ্দও এখন বেশি করা হয়েছে। আগে এক টন তেল বরাদ্দ ছিল। লকডাউনের পরে এখন ২০০ কেজি বেড়েছে। আগের বরাদ্দ থেকে ১০০ কেজি বাড়িয়ে এখন ৮০০ কেজি চিনি দেওয়া হচ্ছে। আর প্রতি ট্রাকের জন্য বর্তমানে ৬০০ কেজি ডাল ও ৪০০ কেজি ছোলা বরাদ্দ থাকছে।

টিসিবি’র তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, বর্তমানে রাজধানীর ৮০টি স্থানে ট্রাকসেলের মাধ্যমে কয়েকটি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। সারা দেশে ৫০০ ট্রাকে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় ট্রাকগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ও বেড়েছে। সেজন্য পণ্যের পরিমাণও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ওদিকে লকডাউন ও রমজানকে ঘিরে বাজারে ভিড় দেখা গেছে। অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পণ্য কিনছেন। ফলে বিভিন্ন বাজারে মানভেদে সব ধরনের চাল, সয়াবিন তেল, মসুর ডাল,  পেঁয়াজ, খেজুর, আলু, দেশি রসুন ও আদাসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তি দেখা গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads