• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

লেখায় উঠে আসছে সুঁই-সুতার আবেগ

  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০১৮

একসময় নারীর লেখাপড়া করার পথ ছিল দুর্গম। সেই দুর্গমতা কাটিয়ে উঠেছে নারী। তারা দৃপ্ত পায়ে ঝড়-ঝাপটা অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত সুপ্ত স্বপ্নগুলো সফল করতে। নারী আজ ভেতরে-বাইরে দুর্নিবার ছুটে চলা এক অবিরাম ঝরনা! একসময় নারী ছিল অন্দরে! সেই অন্দরমহল থেকে নারীদের বের করে আনার কৃতিত্বও একজন নারীর! একজন বেগম রোকেয়ার। লেখালেখিতেও তিনি প্রেরণা রেখেছেন। সেই সঙ্গে বেগম সুফিয়া কামাল, নূরজাহান বেগমদের অবদান রয়েছে। আজ নারীর হাতে একই সঙ্গে খুন্তি, পিস্তল, কলম। যখন যার যে পেশা তাতেই শাহেনশাহ নারী। মানিয়ে চলাতে নারী অতুলনীয়া। দশদিক সামলে নারী কর্মজীবনে রেখে যাচ্ছে সফলতার চিহ্ন। এখন চারদিকে নারীর জয়জয়কার।

তবে লেখালেখিতে নারীর অভিজ্ঞতার ঝুলিটা বোধহয় অন্য পেশার চাইতে একটু আলাদা রকমের। এটা সবার পেশা নয়। কেউ শখে লেখেন, কেউ পেশার কারণে লেখেন। কেউ লেখক তাই কমবেশি সব বিষয়েই লেখেন। ইদানীং কেউ কেউ আবার লিখছেন সময় কাটাতে। অনলাইনে এখন ছড়াছড়ি। নিজেও অনলাইন পোর্টাল খুলে নিজে নিজের পোর্টালে লেখেন এবং অন্যদেরও লেখা ছাপেন। দেশে বেশ কয়েকটি নারী পরিচালিত পোর্টাল রয়েছে।

কখন, কবে থেকে নারীর কলম চলছে! মোটামুটি সারসংক্ষেপে তা একবার দেখে নিলে হয়, আঠারো শতকে বা তারও আগে থেকে নারীরা লিখে আসছেন! সুঁই-সুতা যখন নারীর জীবন একঘেঁয়ে করে তুলেছিল, বলতে গেলে তখনই নারী হাতে তুলে নেয় কলম। যেমন বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামালরা, নূরজাহান বেগমরা, সেলিনা হোসেন, রাবেয়া খাতুন, বেগম শামসুন নাহার, জাহানারা ইমামরা লিখে আসছেন। তারও আগে চন্দ্রাবতী প্রথম মহিলা কবি বাংলাদেশের। যার হাতের কলম কাগজের পাতা ভরে দিয়েছিল আকুল করা শব্দে। অন্যদিকে, ব্রিটিশ শাসনামলে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের আগেই নারী সাংবাদিকতার শুরু। বাংলাদেশে বর্তমানে যত পত্রিকা আছে সেসবে এবং পোর্টালগুলোতে ক্রমাগত নারী লেখকরা লিখে যাচ্ছেন নিজের সমস্যা থেকে শুরু করে পারিপার্শ্বিক যাবতীয় সমস্যার কথা। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতায় এভাবেই একসময় আগ্রহী হয়ে ওঠে নারী। আর এখন তো বাংলাদেশে নারীরা পত্রিকায় সরাসরি নিয়োগ ছাড়াও অনবরত লিখছেন। অনেকে নিয়মিত লিখছেন বিভিন্ন পত্রিকায় ও অনলাইনে। তাদেরই একজন জানালেন তার কথা। তিনি অ্যাসাইনমেন্ট পান পত্রিকা থেকে, আবার নিজেও বিষয় ঠিক করে লিখে থাকেন। তবু এ ক্ষেত্রে  অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হলে নিজ সময় অনুযায়ী করতে সমস্যা হয় বলে জানান তিনি। তাই নিজ থেকে করাই তার জন্য সুবিধাজনক বলে মনে করেন। এতে পরিবার সামলে সময় বের করতে নারীদের ঝামেলা পোহাতে হয় না। বাংলাদেশে অনেক নারী রয়েছেন যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন এভাবে।

এতে লেখা-প্রতিবেদন ছাপুক আর নাই ছাপুক কোনো চাপ পড়ে না নিজের ওপর। যেকোনো ঝুঁকি থেকেও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকরা নিরাপদ থাকেন। প্রতিবেদন ছাপা হলে নিজের আনন্দ এখানে কাজ করে এবং একসঙ্গে অনেক পত্রিকায় লেখার সুযোগও ঘটে।

তবে যাই হোক, যেরকম সাংবাদিক-লেখকই হোন না কেন নারীদের প্রতি বৈষম্য রয়েছেই সবক্ষেত্রে। একজন পুরুষের প্রতিবেদন যেভাবে যে পাতায় যে স্থানে প্রকাশিত হয় সেভাবে নারী সংবাদকর্মীরটা ছাপা হয় না। ভেতরের পাতায় তাও ছোট কোনায় কোনো স্থানে ছাপানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে অনেক পরিশ্রমের কাজটি পত্রিকার মুদ্রণে উঠে আসে না। আমরা প্রায়শ দেখি যে, কোনো পত্রিকার সাময়িকীতে নারী লেখকের লেখা কবিতা সবার নিচে দিতে। কয়েকজন নারীর কবিতা থাকলেও পুরুষ লেখকের নিচে অবস্থা বুঝে বিভিন্ন দিকে সাইড দেওয়া হয়। এখানে নারীর লেখার উৎসাহ দিতে কার্পণ্য করা হয়। যথেষ্ট মেধা, সুযোগ, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নারীর জায়গাটি সংকীর্ণই হয়ে থাকে।

একজন পুরুষের অবস্থান রাতারাতি পরিবর্তন হয়। পেয়ে যান পরিচিতি কার্ড ও একটা সম্মানজনক পদ। নারীরা এখনো বৈষম্যের কারণে অনেকটা পিছিয়ে আছেন। জেলা ও মফস্বল শহরে নারীদের অবস্থা আরো করুণ। সেখানে কাজ করতে নানারকম ছলচাতুরী, উপহাস মোকাবেলা করতে হয়। সহকর্মীর সহযোগিতার বেশ ফারাক থাকে মফস্বল শহরে। অঞ্চল ভেদে অনেক কষ্টে তাদের দাঁড়াতে হয়। অনেক নারী আবার ক্লান্ত হয়ে একসময় তা ছেড়েও দেন। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের এক হিসাবে জানা যায়, দেশে নারী সংবাদকর্মীর সংখ্যা প্রায় ৮০০। কিন্তু কোনো প্রয়োজনে ফোন করলে মফস্বলের নারী সংবাদকর্মীর ফোনটাও অনেক ক্ষেত্রে রিসিভ করেন তাদের স্বামীরা। বেশিরভাগই কথা বলতে দেন না নানা অজুহাতে।

এতদসত্ত্বেও নারী এগিয়ে চলেছে মেধার শক্তি নিয়ে। 

 

সাহিদা সাম্য লীনা

সম্পাদক  আঁচল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads