• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
সিনহার বই নিয়ে আ.লীগে ‘অস্বস্তি’

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) সিনহার বই

ছবি : ইন্টারনেট

রাজনীতি

সিনহার বই নিয়ে আ.লীগে ‘অস্বস্তি’

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সরকারের বিরুদ্ধে ‘জোর করে দেশের বাইরে পাঠানোর’ অভিযোগ এনে বই লিখে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা)। তার বই গণমাধ্যমে প্রকাশের পর শুরু হয় আলোচনা ও সমালোচনা। বইয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিষয়টি লুফে নেয় সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস আগে প্রকাশিত এ বই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে একধরনের ‘অস্বস্তিতে’ ফেলেছে। প্রকাশিত এ বই নতুন ‘বিতর্ক’। সরকারের জন্য এ পরিস্থিতি ‘বিব্রতকর’ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কোনো নেতা। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচারণায় থাকা দলটির অনেকে সিনহার বই ইস্যুকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

দলটির কেউ কেউ মনে করেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারকে ‘বিব্রতকর’ পরিস্থিতিতে ফেলার উদ্দেশ্যে বইটি প্রকাশ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকার ও আওয়ামী লীগের ‘ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ’ করার উদ্দেশ্যও বইটির আছে। বইটি প্রকাশের পেছনে দেশ ও বিদেশের একটি চক্র জড়িত। বিশেষ দল ও গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতেই এস কে সিনহা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বইটি প্রকাশ করেছেন। বইয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছেন, সেগুলো ‘মনগড়া’, ‘কল্পনাপ্রসূত’, ‘মিথ্যা’ ও ‘ভুতুড়ে’ বলে মন্তব্য আওয়ামী লীগ নেতাদের।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকে মনে করেন, সিনহার বই নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা চলতে থাকলেও তা হবে সাময়িক। আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ইস্যুটি ধরে রাখতে চাইলেও তা বেশি দিন টিকবে না। সিনহার পদত্যাগের পরই নানা ‘তথ্য’ ও গুজব ডালপালা ছড়িয়েছিল। সেগুলোই এখন একত্রিত হয়ে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বইটিতে থাকা অভিযোগগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তাছাড়া বইটির অভিযোগ সিনহার ব্যক্তিগত। বইটিকে কেন্দ্র করে কোনো গোষ্ঠীর তাই সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণায় নামার সুযোগ নেই বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা। তাছাড়া এরই মধ্যে সরকারের পক্ষে আইনমন্ত্রীসহ কয়েকজন এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।

ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অনেকে মনে করেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন এস কে সিনহা। তার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ জানতে পারার পর আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা তার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান বলে জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তি রয়েছে বলে তখন জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সিনহা সংসদ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে গত শনিবার বলেন, ‘এস কে সিনহা দেশ ছেড়েছেন দুর্নীতির অভিযোগে। তার বিষয়ে দেশের জনগণ জানেন। তিনি বইয়ে মনগড়া যেসব অভিযোগ করেছেন, সেগুলোকে আমরা কোনো ধরনের গুরুত্ব দিচ্ছি না।’ আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আবদুল মতিন খসরু বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য দিতে আগ্রহী নন বলে জানান।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সিনহার বই লেখার বিষয়টিকে ‘ক্ষমতা হারানোর জ্বালার’ সঙ্গে তুলনা করেন।

‘এ ব্রোকেন ড্রিম : রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি’ শিরোনামে আত্মজীবনীমূলক বইয়ে এস কে সিনহা দাবি করেন, তিনি দেশ ছাড়েন হুমকির মুখে। একই কারণে বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads