• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
তৃণমূলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো ছোঁয়া লাগেনি

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

তৃণমূলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো ছোঁয়া লাগেনি

  • রেজাউল করিম লাবলু
  • প্রকাশিত ২১ অক্টোবর ২০১৮

সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সারা দেশের বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা অন্ধকারে রয়েছেন। শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে জাতীয় ফ্রন্টের কার্যক্রম। যার কারণে তৃণমূল পর্যায়ে ফ্রন্টের ঢেউ এখনো পড়েনি। ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, কেন্দ্রের উচিত ফ্রন্টের কার্যক্রম সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করা। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলেন, আগে ২০-দলীয় জোট ছিল। এখন আবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। এখন ২০-দলীয় জোটের পাশাপাশি ফ্রন্টের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে, কাজ করতে হবে, সে বিষয়ে কেন্দ্রের নির্দেশনা দরকার তাদের।

তৃণমূল নেতাদের অন্ধকারে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল শনিবার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তাদের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একমত কেন্দ্র। তাদের অন্ধকারে থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সময় হলে তাদের অবশ্যই জানানো হবে।

তিনি বলেন, গত ১৩ অক্টোবর ফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। ফ্রন্ট গঠনের পর বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র এক সপ্তাহ সময় পেয়েছেন তারা। তবে কাজের প্রয়োজনে যেসব বিভাগে সমাবেশ হবে সেসব বিভাগ ও তার আওতাধীন জেলা নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের তৃণমূল নেতাকর্মীকে ফ্রন্টের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করা হবে, নির্দেশনা দেওয়া হবে। সময় ফুরিয়ে যায়নি।

বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ফ্রন্ট গঠনের পর ফ্রন্টের দলগুলোর নেতাদের সমন্বয়ে লিয়াজোঁ কমিটি, স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিএনপি কিছু নেতা ফ্রন্টের কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। লিয়াজোঁ কমিটি জেলা পর্যায়ে যোগাযোগ করে ফ্রন্টের দলগুলোর নেতাদের নিয়ে জেলার লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করবে। লিয়াজোঁ কমিটির নেতারাই এসব কাজ করবেন। এভাবে ফ্রন্টের কার্যক্রম সম্পর্কে সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের অন্ধকার থেকে আলোতে আনা হবে। এর বাইরে ফ্রন্টের নেতারা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃত্ব দেন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ইতোমধ্যে ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে ফ্রন্ট নেতারা বসেছিলেন। তাদেরকে ফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি তাদের যে জিজ্ঞাসা ছিল তার উত্তর দেওয়া হয়েছে। 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান গতকাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গত শুক্রবার ধানমন্ডিতে গণফোরাম নেতা মোবারক হোসেনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত ফ্রন্ট নেতাদের বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়। লিয়াজোঁ কমিটিতে তাকে রাখার বিষয়ে জানানো হয়েছে। কমিটিতে তিনি ছাড়াও বিএনপি নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বরকতউল্লা বুলু, মনিরুল হক চৌধুরী ও হাবিবুর রহমান হাবিব। নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে রাখা হয়েছে ড. শহীদুল্লাহ কায়সার, মমিনুল ইসলাম, ডা. জাহেদ উর রহমানকে। জেএসডির পক্ষ থেকে রয়েছেন মিসেস তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন ও শহিদুদ্দিন মাহমুদ স্বপন। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে রয়েছেন আ ও ম শফিকুল্লাহ, জগলুল হায়দার আফ্রিক ও মোস্তাক আহমেদ। আগামীকাল বিকাল ৫টায় মতিঝিলে গণফোরাম অফিসে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে তাকে জানানো হয়েছে।

বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশের খবরের পক্ষ থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোর তৃণমূল বিএনপির এক নেতা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে। এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কীভাবে কার্যক্রম শুরু করবে, সেখানে তৃণমূল নেতাদের ভূমিকা কী তা নিয়ে তারা একেবারেই অন্ধকারে রয়েছেন। তৃণমূলের ঢেউ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েনি। এখন পর্যন্ত তাদেরকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কবে নাগাদ দেওয়া হবে তাও জানেন না তারা।

ব্যক্তিগত মতপ্রকাশ করে তিনি বলেন, বিএনপির এই মুহূর্তে উচিত খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে একদফা আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। খালেদা জিয়ার মুক্তির পরই অন্য কোনো বিষয় নিয়ে বিএনপির কথা বলা উচিত। কারাবন্দি খালেদা জিয়া কেমন আছেন তাও জানেন না তারা।

গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় কিংবা অন্য কোনো কর্মসূচিতে গণমাধ্যম কর্মীদের পেলেই বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানতে চান, ভাই কোনো খবর আছে? পজিটিভ কোনো খবর আছে? জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কী করতে যাচ্ছে? দলের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তৃণমূলের এসব নেতাকর্মী গণমাধ্যমকর্মীদের জানাচ্ছেন দলীয়ভাবে তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে না।

সারা দেশে বিএনপিদলীয় নেতাকর্মীদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে কি না সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফ্রন্টের কর্মসূচি ও কর্মপন্থা সম্পর্কে তারা অন্ধকারে রয়েছেন। তাদের কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন কেন্দ্রের উচিত তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকে এ সম্পর্কে অবহিত করা।

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ফ্রন্টের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ফ্রন্ট গঠনের পর আগের ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ফ্রন্টের শরিক দলগুলোর সঙ্গে কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় তারা কাজ করবেন তার কোনো নির্দেশনা তাদের এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads