• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
‘কাঠগড়ায়’ আ.লীগের ৩০ এমপি

লোগাে আওয়ামী লীগ

রাজনীতি

‘কাঠগড়ায়’ আ.লীগের ৩০ এমপি

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০১ এপ্রিল ২০১৯

চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দল মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করে আলোচনা ও সমালোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের অন্তত ৩০ জন সংসদ সদস্য। দলের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার তিন মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই দলীয় নির্দেশ না মানার অভিযোগে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এখন তারা আছেন ‘দলীয় কাঠগড়ায়’।

‘বাড়াবাড়ি ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে তারা নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ে নানা তৎপরতা চালান বলে তৃণমূল থেকে অভিযোগ এসেছে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। তাদের কারণে অনেক উপজেলায় নৌকার প্রার্থীরা জয়ী হতে পারছেন না। দলের তৃণমূলে কোন্দল ও বিভেদের জন্যও তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সরকারি দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, সভাপতিমণ্ডলীর সভায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারকারী সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের কারণে দলীয় প্রার্থী ভোটে পরাজিত হচ্ছেন ও তৃণমূলে কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করেন। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতার মধ্যেও কিছু কিছু স্থানে ভোট জালিয়াতি, বাক্স ছিনতাই ও সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর জন্য ওইসব সংসদ সদস্যকে দায়ী করা হয়।

তাদের এমন কাণ্ডে দলের তৃণমূলে ভ্রাতৃঘাতী বিরোধও বাড়ছে বলেও কেউ কেউ সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনের তিন মাস না যেতেই এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে কিছু সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে।

সভায় স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে যেসব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতা দলের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেননি ও করছেন না, তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর প্রতিবেদন তৈরি ও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সাংগঠনিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে দলের আটটি সাংগঠনিক বিভাগের জন্য আটটি দল গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। দলের উপদেষ্টামণ্ডলী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে দলগুলো গঠন করা হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগ সভপতির ঢাকার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভা হবে। এ সভায়ও উপজেলা নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের বিপক্ষে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়ে কাজ করা মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আলোচনা হবে। আগামীকাল ১ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভায় বিষয়টি প্রাধান্য পেতে পারে। এ বিষয়ে শরিক দলের নেতাদের কোনো বক্তব্য ও ক্ষোভ আছে কি না, তাও জানতে চাওয়া হতে পারে বলে জানায় সূত্র।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্রমতে, মোট পাঁচ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মিলিয়ে অন্তত ৩০ জনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন সংসদ সদস্যকে চিঠিও দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চিঠিতে তাদের ভোটের আগে নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে বলা হয়।

ইসির নির্দেশ অনুযায়ী কেউ কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনী এলাকা ছাড়েননি বলেও অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগেরই তৃণমূল পর্যায় থেকে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীর অভিযোগ, ইসির নোটিশের বাইরেও অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আছেন, যারা নির্বাচনে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখবে দল।

সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে নানা উদ্যোগ শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের পক্ষে নেওয়া হয়। তাদের পছন্দের প্রার্থীদের মনোনয়নের বদলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতকে প্রার্থী বাছাইয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া ও দলের মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে কোনো অবস্থাতেই যেন দলীয় কোন্দলের প্রকাশ না ঘটে, সেদিকে সতর্ক থাকতে নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই।

দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সময় ঘটা আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য এবার আগেভাগেই দল সতর্ক ছিল। এছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধের কারণে উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে যেন খেসারত দিতে না হয়, সেজন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে দলীয় কোন্দল নিরসনের উদ্যোগও নেওয়া হয়। অনেক উপজেলায় সেসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন হয়নি বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। এসব নির্দেশ না মেনে যারা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে তৎপরতা চালান, তাদের বিরুদ্ধে ‘সাংগঠনিক ব্যবস্থা’ নিয়ে তৃণমূলে শৃঙ্খলা ফেরাতে চায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

সূত্রমতে, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে। বাম দলের জোট ও ধর্মপন্থি কয়েকটি দলও এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে মহাজোটের শরিক দলগুলো আলাদা অংশ নেয়। অনেক উপজেলায় শরিক দলগুলো প্রার্থী দিতে পারেনি। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সমালোচনা এড়াতে আওয়ামী লীগ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে অনেকটাই ‘নমনীয়’ থাকে। এ সুযোগেই মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন উপজেলায় নিজের লোককে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান। তবে তাদের এ তৎপরতার পরও সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত চার ধাপে ৪৫০ উপজেলার ১০৮ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এ হিসাবে প্রায় চার ভাগের এক ভাগ চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads