• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন বিতর্কিতরা

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন বিতর্কিতরা

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৬ মে ২০১৯

ছাত্রলীগের সদ্যঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের কমিটি থেকে বাদ দিয়ে সেসব পদের শূন্যস্থান পূরণ করতে নতুন ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের ঠাঁই দেওয়া হবে। বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও আদর্শকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের অভিভাবক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশের খবরকে জানায় ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্র।

গত সোমবার ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিত ও পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের সংবাদ সম্মেলনে ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং পদপ্রাপ্ত কয়েকজনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদপ্রাপ্ত সবার বিষয়ে পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে খোঁজ নিতে গোয়েন্দা সংস্থাকেও নির্দেশ দেন বলে জানায় গণভবনের একটি সূত্র। সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার নেতাকেও একই নির্দেশ দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সংগঠনটির সাবেক কয়েক নেতা গতকাল বুধবার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পান বলেও সূত্র উল্লেখ করে।

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার একজন ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এ প্রসঙ্গে গতকাল বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পাওয়া বিতর্কিত নেতারা বাদ পড়বেন। কয়েকজনের বিষয়ে কিছু অভিযোগ আসছে। যাদের ব্যাপারে অভিযোগ আসছে, তাদের নামে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে অভিযুক্তদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে কমিটিতে শূন্যস্থান পূরণ করতে নতুনদের স্থান দেওয়া হবে।’

ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিতর্কিতদের ব্যাপারে অভিযোগ প্রমাণ হলে পদ শূন্য ঘোষণা করা হবে। বিকর্কিতদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আছে।’

ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের এক বছর পর নানা যাচাই-বাছাই শেষে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি সোমবার ঘোষিত হয়। কমিটিতে অছাত্র, রাজাকার পরিবার, বিএনপি পরিবারের সদস্য, জামায়াতের ছাত্রসংগঠন শিবির, বিবাহিত ও চাকরিজীবীদের শীর্ষ পদে রাখার অভিযোগ উঠেছে। অন্তত অর্ধশত বিতর্কিত নেতাকর্মী স্থান পেয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন পদবঞ্চিত ও পদপ্রত্যাশীরা। তাদের মতে, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অভিযুক্ত, হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন মামলার আসামি, সংগঠনের গঠনতন্ত্র নির্ধারিত বয়সোত্তীর্ণ, মাদক ব্যবসায় অভিযুক্ত, অপকর্মের দায়ে সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত ও সাজাপ্রাপ্তরাও কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন।

সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে গত সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে ছাত্রলীগেরই একাংশের হামলায় আহত হন নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত ১০ থেকে ১২ জন। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ— ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরাই পরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালান। গত মঙ্গলবার দুপুরে ওই হামলার বিচারের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে নতুন কমিটির সবাইকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার পাশাপাশি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান পদবঞ্চিতরা। এর অংশ হিসেবে তারা গতকাল দুপুর ১টায় সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেন এবং প্রয়োজনে অনশনে বসবেন বলেও ঘোষণা দেন।

মধুর ক্যান্টিনে সংগঠনটিতে পদবঞ্চিতপক্ষের নারী নেত্রীসহ কয়েকজনের ওপর সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের হামলার ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের মন্তবব্যের সমালোচনা করেন বিক্ষুব্ধরা। গতকাল পদবঞ্চিত ও কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ অংশের নেতাকর্মীরা তার বক্তব্যের সমালোচনা করেন। ওই দিনের ঘটনাকে মঙ্গলবার ‘সাধারণ ঘটনা’ বলে আখ্যা দেন হানিফ।

অন্যদিকে বিতর্কিত ও সংগঠনের মৌলিক আদর্শবিরোধীরা কীভাবে কমিটিতে ঠাঁই পেলেন, কারা তাদের ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছেন— এমন প্রশ্ন আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতার। নতুন কমিটিতে বিতর্কিতরা ঠাঁই পাওয়ায় বিস্মিত দেশের প্রবীণতম সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও। পদবঞ্চিতদের সংবাদ সম্মেলনে পদপ্রাপ্তদের ঝাঁপিয়ে পড়ে সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনা এবারের মতো আগে কখনো ঘটেনি। কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে পদপ্রত্যাশী ও পদবঞ্চিতরা গণপদত্যাগের যে হুমকি দিয়েছেন, এমন ঘটনার দৃষ্টান্তও নেই। এসব ঘটনা নানা বিতর্ক জন্ম দেওয়ার পাশাপাশি ছাত্রলীগের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সংগঠনটিতে অনুপ্রবেশকারীরাই এসব বিতর্কের পেছনের ষড়যন্ত্রকারী বলেও সন্দেহ সাবেক নেতাদের।

ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আড়াই মাস পর গত বছরের ৩১ জুলাই রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত হয়। ওই দিন গণভবন থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের নাম ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করেন। গত বছরের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়। রীতি অনুযায়ী ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর দ্রুততম সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা।

ছাত্রলীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সাত দিনের মধ্যে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে গত ১৫ এপ্রিল নির্দেশ দিলেও নির্ধারিত সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে সংগঠনটির বর্তমান নেতৃত্ব ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বই এর মূলে বলে অনেকের ধারণা। নানা আলোচনা ও সমালোচনার পর সম্প্রতি পুরো কমিটি করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের চার নেতাকে। ছাত্রলীগের সম্মেলনের এক বছরেও সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে কমিটি করতে না পারায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ওই চার নেতাকে এ দায়িত্ব দেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads