• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

ফাইল ছবি

রাজনীতি

আ.লীগ থেকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৮ মে ২০১৯

দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের এবারের সাংগঠনিক সফরে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে দলে অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড নেতাকর্মীদের বিষয়টি। তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভিযোগেও উঠে আসছে দলের নাম ভাঙিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার কথা। দলে তাদের খবরদারি, দল ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো নানা কর্মকাণ্ডে তৃণমূল খুব ক্ষুব্ধ। সুদিনের মধুর আশায় দলে ভেড়া সুবিধাবাদীদের আমলনামা জেনে কেন্দ্রীয় নেতারাও অবাক ও বিস্মিত হচ্ছেন।

কেন্দ্রীয় নেতারা গুরুত্বের সঙ্গে অভিযোগ শুনে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরি করছেন। তালিকার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে অভিযোগ প্রমাণ হলে দলে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসাদের’ দল ও সংগঠনের সব পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হবে। এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নীতিগত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে গত কয়েক বছর ধরে অনুপ্রবেশকারীরা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বলে বাংলাদেশের খবরকে জানায় দলটির উচ্চপর্যায়ের সূত্র।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, চলতি বছরে অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া ও দলকে অনুপ্রবেশকারী মুক্ত করতে আবারো জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর শুরু হয়েছে। অভিযানের লক্ষ্যে সারা দেশে সাংগঠনিক সফরের জন্য দলের গঠিত আটটি বিভাগীয় টিম গত ১১ মে থেকে কার্যক্রম শুরু করে। ক্ষমতাসীন দলে ঠাঁই নেওয়া বহিরাগত ও নানা অপকর্মে জড়িতদের চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেওয়ার পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের দলীয় পদ থেকে সরানোর পর জনপ্রিয়, ত্যাগী ও সৎ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ জেলা, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় সম্প্রতি আয়োজিত বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করা হবে। অনুপ্রবেশকারীদের আমাদের সংগঠনে দরকার নেই। ধীরে ধীরে তাদের বের করে দিতে হবে। সেই কার্যক্রম আমাদের শুরু করতে হবে। ভাড়া করা লোক দিয়ে দল গঠন করেছিল বলেই বিএনপির এখন ভরাডুবি অবস্থা।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান দলের সাংগঠনিক সফর সম্পর্কে বলেন, ‘সংগঠনের ভেতরে কোনো অশুভ শক্তি আছে কি না, কোনো অনুপ্রবেশকারী আছে কি না, এসব বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আগামী জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে একটা কাউন্সিলার তালিকা প্রস্তুত করে বর্ধিত সভা করা।’ দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘সফরের মধ্য দিয়ে আমারা একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কমিটির ঠিকানা সংগ্রহ করব। ডাটাবেজে তৃণমূলের সব নেতাকর্মী ও সংগঠকের নাম লিপিবদ্ধ থাকবে মুঠোফোন নম্বরসহ।’

দলীয় সূত্র মতে, সাংগঠনিক সফরের প্রথম দফায় ৯ সদস্যের টিম গত ১১ মে থেকে শুরু করে আগামী ২১ মে পর্যন্ত খুলনার বিভিন্ন জেলায় সফর করবে। সফরে বর্ধিত সভার পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক হবে কেন্দ্রীয় নেতাদের। খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত দলকে সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে বিভাগের জেলাগুলোতে সাংগঠনিক সফর করছেন। তারা আজ ১৮ মে খুলনা মহানগর, আগামীকাল ১৯ মে খুলনা জেলা, ২০ মে বাগেরহাট ও ২১ মে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় অংশ নেবেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা সফরের মধ্য দিয়ে এ সাংগঠনিক সফর শুরু হয়। যেসব জেলায় দীর্ঘদিন দলের সম্মেলন হয় না, সেসব জেলাকে প্রাধান্য প্রাধান্য দিয়ে সাজানো হয়েছে সফরসূচি।

আওয়ামী লীগের আটটি বিভাগীয় টিমের লক্ষ্য সারা দেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন করা, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন এবং বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্যান্য দল থেকে দলে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তবে অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া অনেক নেতার বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে দল। কারো কারো বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দৃশ্যমান না হলেও কোনো না কোনোভাবে শাস্তির আওতায় আসবেন অনুপ্রবেশকারীরা। তৃণমূল পর্যায় থেকে দলের নেতাকর্মীদের তথ্যভান্ডার তৈরিতেও কাজ চলছে।

আসন্ন ঈদের পর অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে ছাঁটাইয়ের অভিযান পুরোদমে শুরু হবে। ঈদের পর শুদ্ধি অভিযান শুরু হলেও দলের আগামী জাতীয় সম্মেলনের আগেই অভিযান শেষ করার পরিকল্পনা করছেন নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতি, বঙ্গবন্ধুতনয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী দলকে চাঙ্গা করতে চলতি বছরের অক্টোবরেই জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। অক্টোবরে শেষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা জানান, টানা ১০ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকায় দলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অনেক অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছেন। যারা বিভিন্ন সময়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। অনেক সুবিধাবাদী দলে ঢুকেছে আর এ বাস্তবতা মেনে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বারবার বলছেন। অনুপ্রবেশকারীদের যারা দলে জায়গা করে দিয়েছেন, সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধেও। পাশাপাশি দায়িত্বশীল কেউ জামায়াতিদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন বলে প্রমাণ হলে তার বা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলে এসে ঠাঁই নিলেও সাবেক জামায়াতির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘এখন সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।’

দলীয় সূত্র মতে, সম্প্রতি ফেনীতে মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির অগ্নিদগ্ধে হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির নাম উঠে আসে। হত্যার ঘটনার সন্দেহভাজন আরো কয়েকজনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা থাকা নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়। এর আগে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাতজন খুনের ঘটনায়ও আওয়ামী লীগ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে বলে দলটির অনেকে মনে করেন। দেশের আরো কয়েকটি এলাকায় আওয়ামী লীগের লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির জেরে সংঘর্ষের খবর উঠে আসে গণমাধ্যমে। এসব ঘটনা সরকার ও আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। তাই দলে শুদ্ধি অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads