• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
খালেদার মুক্তির বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত বদল

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

খালেদার মুক্তির বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত বদল

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৯ জুন ২০১৯

চলতি বছরের জানুয়ারিতে নতুন যাত্রার কিছুদিন পরই কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে নমনীয় অবস্থান নেয় সরকার। বিএনপির প্রধান এই নেতার প্যারোলের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক উপদেষ্টা। রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বাইরে আসছেন- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে দুই দলের অনেক নেতাকর্মী এমনটা ধরে নেন। তার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সমঝোতা না হওয়ায় এ বিষয়ে আগের নমনীয় অবস্থানেও আর নেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকার। বিএনপির সঙ্গে প্যারোল সমঝোতার বিষয়ে এখন অনেকটা কঠোর অবস্থানে থাকলেও আদালতের মাধ্যমে খালেদা মুক্তি পেলে সরকার তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য বাংলাদেশের খবরকে জানায়।

সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা যে নমনীয়তা দেখিয়েছেন এত দিন, সেখান থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন তারা। সরকার অনেক নমনীয় হলেও বিএনপি খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করেনি। রাজনৈতিক সমঝোতায় প্যারোল আবেদনে মুক্তি ন চাওয়ায় এখন তার মুক্তির বিষয়ে আদালতের মাধ্যম ছাড়া আর ‘কোনো পথ খোলা নেই’ বলে মনে করেন ক্ষমতাসীনরা। ‘নেতিবাচক রাজনীতি বাদ দিয়ে’ বিএনপিই সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটতে পারেনি। চেয়ারপারসনের মুক্তির পথ বিএনপিই ‘রুদ্ধ’ করে রেখেছে! বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অনেকে বক্তব্য ও বিবৃতিতে দলের চেয়ারপারসনের জামিন বা মুক্তির দাবি জানালেও আদৌ কেউ কেউ মুক্তি চান কি না, এমন প্রশ্নও আছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কারো কারো।

মানহানির দুটি মামলায় খালেদা জিয়াকে গতকাল মঙ্গলবার ছয় মাসের জামিন দেন উচ্চ আদালত। আওয়ামী লীগের মতে, বিএনপি চেয়ারপারসন সব মামলায় জামিন পাওয়ার নিশ্চয়তা পেলে জামিন পাবেন। আদালত তাকে সব মামলায় জামিন দিলে সরকার তাকে কারাগারে আটকে রাখতে পারবে না। বিএনপি নেতাদের দাবি, সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন না। সরকারের সদিচ্ছায় তার মুক্তি না হলে আন্দোলন করা ছাড়া বিএনপির আর কোনো উপায় নেই। তার মুক্তি সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। সরকারের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন হচ্ছে না বলেও বিএনপির অভিযোগ।

বিএনপির মতে, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে হলেও দলীয় প্রধানকে দ্রুত কারামুক্ত করার পক্ষে দলটির নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ। তবে সমঝোতার বিপক্ষেও মত আছে। খালেদার কারামুক্তি ও তার চিকিৎসার ব্যাপারে দলে কারো ভিন্নমত নেই। সবাই চান, দ্রুত কারামুক্ত হয়ে তিনি দলের নেতৃত্ব দিন। কিন্তু তার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ায়, আন্দোলনের মাধ্যমে নাকি সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা করে, তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। ফলে প্যারোলের সমঝোতা হয়নি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে গতকাল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সব মামলায় জামিন পাওয়ার নিশ্চয়তা পেলে তিনি জামিন পাবেন। আদালত যদি নির্দেশ দেন, তাকে জেলে রাখা হবে না, মুক্তি দেওয়া হবে। সরকার এখানে কোনো অন্তরায় নয়। এটি আদালতের ব্যাপার। সব মামলা থেকে জামিন পেলে মুক্তির বিষয়ে সরকার অন্তরায় হবে না।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি শুধু বলার জন্যই বলছে, বিরোধিতার জন্য বলছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বিএনপি নেতারা দলীয়ভাবে কিছু করতে না পেরে সবকিছু সরকারের ঘাড়ে চাপায়। যত দোষ নন্দ ঘোষ- এটিই বিএনপির রাজনীতি।’

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময়ই বলে আসছি বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। শেখ হাসিনার সরকার এ পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রমে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। খালেদার মামলায়ও আলাদা কিছু হয়নি। এখানে আদালত যখন যে মামলায় জামিন দিতে চেয়েছেন, স্বাধীনভাবে জামিন দিয়েছেন। আজকেও (মঙ্গলবার) যে জামিন দিয়েছেন, এ সরকারের আমলে দেশের বিচার বিভাগ কতটা স্বাধীন, সেটা আবার প্রমাণিত হলো।’

বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আন্দোলনের কথা গত দশ বছর ধরে আমরা শুনে আসছি। ঈদের পর, বর্ষার পর, শীতের পর, গরম একটু কমলে আন্দোলন হবে। এটি কোন বছর হবে, তারা (বিএনপি) ভালো জানে। এসব কথা বলে নিজেদের হাসির পাত্র না করার জন্য তাদের অনুরোধ জানাই।’

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, বিএনপি মহাসচিবের শপথ না নেওয়া বগুড়া-৬ সংসদীয় আসনের পুনর্নির্বাচনে দলটির চেয়ারপারসনকে প্রার্থী করতে আগ্রহী ছিলেন দলের শীর্ষ কয়েক নেতা। খালেদা জিয়া রাজি হলে পুনর্নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজয়ী হয়ে যেন জাতীয় সংসদে যেতে পারেন, এ কৌশল সামনে রেখে বিএনপির নেতারা এমন পরিকল্পনা করেন। খালেদার প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলার আগেই বিএনপির দুজন সংসদ সদস্য ও কয়েক নেতা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন। সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা ওই বৈঠকে বিএনপি নেতাদের জানান, খালেদা আইনি প্রক্রিয়ায় কারাগারের বাইরে এসে বগুড়া-৬ আসনের নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে তাতে আওয়ামী লীগের বাধা দেওয়ার কিছু নেই। দলীয় চেয়ারপারসনকে সংসদে পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা বিএনপি বাস্তবায়ন করতে চাইলে আওয়ামী লীগের তাতে আপত্তির কোনো সুযোগ নেই বলেও মনে করে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে শেষ পর্যন্ত খালেদা রাজি না হওয়ায় বগুড়ার ওই আসনে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তাকে দল প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেনি।

তথ্যমতে, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তিনি তিনটি আসন থেকে প্রার্থী হতে চাইলেও তা পারেননি। তার বগুড়া-৬ আসনে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। বগুড়ার আসনে তিনি জয়ীও হন। মির্জা ফখরুল নির্বাচিত হয়েও শেষ পর্যন্ত ‘কৌশলগত কারণে’ শপথ নেননি বলে দাবি করেন তিনি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি শপথ না নেওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষিত হয়।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads