• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
সংগ্রাম সাফল্য অর্জনের ৭০ বছর

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

সংগ্রাম সাফল্য অর্জনের ৭০ বছর

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৩ জুন ২০১৯

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ-ইতিহাসে এ তিনটি নাম অমলিন, অবিনশ্বর আর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নাম তিনটি চিরকালের জন্য একই সূত্রে গাঁথা। বাঙালির সংগ্রাম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য, অর্জন ও উন্নয়নের নাম আওয়ামী লীগ। এ দল জাতির গৌরব ও ঐতিহ্যের ধারক। বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূলধারা মানে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ মানে এ দেশের সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি। দেশের কাদা-মাটি গায়ে মাখা ও খেটে খাওয়া আমজনতার কাফেলা। জাতির জন্য যখন যা প্রয়োজন ও অনিবার্য ছিল, সেগুলোই যোগ্য, দক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে বাস্তবায়িত করেছে দলটি। জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেওয়া উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের আজ ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দেওয়া ও জাতির প্রতিটি অর্জনেরও দাবিদার প্রাচীন এ রাজনৈতিক দল পথচলার ৭০ বছর পূর্ণ করল। সেই পাকিস্তানি শাসকসহ স্বাধীন দেশের নানা সরকারের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে দেশের মাটি ও মানুষের ভালোবাসায় ৭১ বছরে পা রাখল দলটি। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। একপর্যায়ে দলটি প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়। অন্য বছরের মতো এবারো যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে দলটি বর্ণাঢ্য কর্মসূচির আয়োজন করছে।

আওয়ামী লীগই দেশের একমাত্র দল, যে দল টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে। প্রায় ৩৮ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন নেতৃত্ব দিয়ে আর মৃত্যুভয়কে ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলটিকে দেশের কোটি মানুষের প্রাণের সংগঠনে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। তার সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনে মানুষের আস্থা আছে। দেশকে উন্নত ও মানবিক রাষ্ট্রে উপনীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে তার নেতৃত্বে চতুর্থবারের সরকার। ২০০৮ সালে সরকার গঠন করে ‘রূপকল্প ২০২১’-এর আলোকে মধ্যম আয়ের সুখী-সমৃদ্ধিশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং ২০১৪ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প ২০৪১’-এর আলোকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার করেন। ফলে অতীতের মতো দেশের ভবিষ্যতের উন্নত বাংলাদেশও যেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়ে আছে। ভাষা আন্দোলন, গণআন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের পাতার পরতে পরতে জায়গা করে নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। তার কন্যা শেখ হাসিনা জাতিকে সফলতার নতুন পথ দেখিয়েছেন।

ইতিহাসবিদ, লেখক ও লোকসাহিত্যিক শামসুজ্জামান খান দলটিকে মূল্যায়ন করে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, “আওয়ামী লীগ পাকিস্তান নামের অবৈজ্ঞানিক, ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিকভাবে এক উদ্ভট রাষ্ট্রের পূর্ব বাংলার বাঙালি জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে অবজ্ঞায়, অবহেলায় ও ঔপনিবেশিক কায়দায় শোষণ-পীড়ন-দমন ও ‘দাবিয়ে রাখা’র বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং গণসংগ্রামের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা বিপুল জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল। এ দলের নেতাকর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অঙ্গীকারদীপ্ত সংগ্রামী ভূমিকা ইতিহাসবিদিত। ভাষা, স্বাধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা অর্জনে মহোত্তম গৌরবে অভিষিক্ত আওয়ামী লীগের সাত দশকের অভিযাত্রায় শান্তি, সমৃদ্ধি ও দিনবদলের লক্ষ্যে অবিচল বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী।”

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তানি সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগ। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপসহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা হলেও দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলটির প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসে।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মলগ্নে এ দলের নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। জন্মলগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সাম্যের সমাজ নির্মাণের আদর্শ ও একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা নির্মাণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করে আওয়ামী লীগ। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়।

১৯৪৮ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সূচিত ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালে গণজাগরণে পরিণত হয়। অব্যাহত রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার তরুণ সংগ্রামী জননেতা শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময়ে কারান্তরালে থেকেও ভাষা আন্দোলনে রাখেন গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ভাষা আন্দোলনের বিজয়ের পটভূমিতে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। পূর্ব বাংলায় আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চিত করে এক মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ।

এরপর আইয়ুবের এক দশকের স্বৈরশাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬২ ও ’৬৪-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬-দফা আন্দোলন, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৬-দফাভিত্তিক ’৭০-এর নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’খ্যাত কালজয়ী ভাষণ ও পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার পর ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবশেষে দীর্ঘ ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের।

স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের রূপকার আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার সুমহান ঐতিহ্যের প্রতীক। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু সরকার স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে নিবেদিত, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তায় ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে।

১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নবউদ্যামে সংগঠিত হয়। তার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি জাতির হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের এক নবতর সংগ্রামের পথে যাত্রা করে আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকায় আজ কর্মসূচি শুরু হবে সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে দুই দিনের কর্মসূচির মধ্যে আছে আজ সূর্যোদয়ের সময় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারা দেশের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আর বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় দলের কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। আগামীকাল বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এক বিবৃতিতে দলের বর্ষপূর্তিতে কর্মসূচি উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব জেলা, উপজেলাসহ সব স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads