• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

'ফোরজি হবে অপারেটরদের বিজ্ঞাপনের মতো'

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ মার্চ ২০১৮


সম্প্রতি চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক (ফোর-জি) যুগে পা রেখেছে বাংলাদেশ। নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা শেষে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছে ফোর-জি লাইসেন্স হস্তান্তর করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।


লাইসেন্স পাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে ফোর-জি নেটওয়ার্ক চালুর মাধ্যমে নিজেদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে অপারেটরগুলো। আর খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা।


দেশে ফোর-জি সেবা দেওয়ার গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত স্পেকট্রাম নিলামে তোলে বিটিআরসি। যদিও ফোর-জি স্পেকট্রাম নিলামে অংশ নিয়েছিল শুধুমাত্র বাংলালিংক এবং গ্রামীণফোন।

এই নিলাম অনুষ্ঠানে ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড থেকে গ্রামীণফোন ৫ মেগাহার্জ এবং বাংলালিংক কিনেছিল ৫.৬ মেগাহার্জ তরঙ্গ। অন্যদিকে পর্যাপ্ত পরিমান স্পেকট্রাম থাকায় নিলামে অংশ নেয়নি রবি। আর টেলিটকের হাতে থাকা বর্তমান স্পেকট্রামের তুলনায় গ্রাহক সংখ্যা কম থাকায় নতুন করে স্পেকট্রাম ক্রয়ে অনাগ্রহী ছিলো রাষ্ট্রায়ত্ত এই অপারেটরটি।


ফোরজি নেটওয়ার্ক চালু হলে টেলিযোগাযোগ খাতে বিপ্লব ঘটে যাবে বলে দাবী করেছিলেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা। আর সেই থেকেই ফোর-জি চালুর পর গ্রাহকরা কতটা মানসম্মত সেবা পাবেন, তা নিয়ে দ্বিধাদন্দে ছিলো অনেক গ্রাহকই। ২০১২ সালে দেশে থ্রিজি চালু হলেও এখন পর্যন্ত ঠিকভাবে অনেক এলাকাতেই থ্রি-জি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, এমন অভিযোগ তাদের।


তবে এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটরগুলো জানায়, ২১০০ ব্যান্ডে থ্রিজি সেবা দেওয়া হয়। এ ব্যান্ডের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো বড় দালান বা অন্য কোনো বড় স্থাপনার কারণে তরঙ্গ বাধাগ্রস্থ হয়। ফোর-জির ক্ষেত্রে এ সমস্যা নেই। যেকোনো ব্যান্ডেই এ সেবা দেওয়া সম্ভব। টেক নিউট্রালিটির মাধ্যমে বিটিআরসি অপারেটরগুলোকে এ সুবিধা দিয়েছে।


গতির দিক থেকেও বেশ এগিয়ে আছে ফোর-জি। ফোর-জি এলটিই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এক গিগাবাইট পার সেকেন্ডের বেশি গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব। যদিও বর্তমানে ফোর-জি এলটিই ইন্টারনেটের গতির দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছে সিঙ্গাপুর। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ওপেনসিগন্যাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বর্তমানে ফোর-জি ইন্টারনেটের গড় গতি ৪৪.১ মেগাবিট পার সেকেন্ড।


এদিকে বিটিআরসি সুত্র থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি ৭ মেগাবিট পার সেকেন্ড নির্ধারণ করা হতে পারে। যদিও অপারেটরগুলোর পরীক্ষামূলক ব্যবহারে এর ১০ গুনের বেশি গতি পেয়েছে। শুরুতে ৭ এমবিপিএস নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও পর্যায়ক্রমে গতি বাড়ানো হতে পারে বলেও জানিয়েছিল বিটিআরসি। তবে গ্রাহক পর্যায়ে ফোর-জি ইন্টারনেটের দাম কেমন হবে, সে ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন।


অন্যদিকে ফোর-জি সিম প্রতিস্থাপনের নামে অপারেটরগুলো যে অর্থ নিচ্ছে, তা নিয়ে অনেক গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বনানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মাসরুর রহমান তার ব্যবহৃত সিমটি বদলে ফোর-জি সিম আনতে গিয়ে জানতে পারলেন এজন্য তাকে ১০০ টাকা গুনতে হবে। ফোর-জি সিম না নিয়েই ফিরে আসেন তিনি। মাসরুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফোর-জি’র নামে সিমের জন্য ১০০ টাকা করে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এই সিম নিয়েও যে ঠিকভাবে ফোর-জি ব্যবহার করতে পারব তার নিশ্চয়তা কতটুকু?


এছাড়াও নির্দিষ্ট ব্যান্ড না থাকায় আইফোন, এইচটিসিসহ আরো কিছু হ্যান্ডসেটে ফোরজি নেটওয়ার্ক কার্যকর না হওয়ায় বিরক্ত হয়েছেন অনেক গ্রাহক। কারণ, এইসব হ্যান্ডসেটের মালিকগণের মধ্যে অনেকেই সিম প্রতিস্থাপনের পরবর্তী সময়ে ফোরজি উপভোগ করতে পারেন নি।


একটি বেসকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাহিদ হাসনাইন সিদ্দিকী বলেন, সিম প্রতিস্থাপনের পর ফোরজি না পেয়ে গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। পরে সেবা কর্মকর্তা জানালেন, সীমাবদ্ধতা থাকায় এখনই সব ধরণের হ্যান্ডসেটে উন্মুক্ত হচ্ছে না ফোরজি।


এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমাদের দেশে সাধারণ জিএসএম ভয়েস কলের অবস্থাই এখনও খুবই বাজে। দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে ২০ বছরেও বেশি সময় ধরে। কিন্তু এখনো কানেক্টিভিটির উন্নয়ন ঘটেনি। যা খুবই হতাশজনক।


ফোর-জি কেমন হবে এই বিষয়ে তিনি বলেন, অপারেটরগুলো যেমন বিজ্ঞাপনে দেখায়, বাফার ছাড়া ভিডিও স্ট্রিমিং করা যাবে, কোনো বাধাগ্রস্থ না হয়েই ভিডিও কনফারেন্স করা, কল ড্রপ করবে না, নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ থাকা, ফোর-জি সেবা এমন হতে হবে।


একজন গ্রাহকের ফোর-জি অভিজ্ঞতা যেন ভালো হয় অপারেটরগুলোকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সব মিলিয়ে মোবাইল অপারেটরগুলো গ্রাহকদের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সেগুলো রক্ষা করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads