• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

হংকং স্পোর্টস ইনিস্টিটিউটে অনুশীলন করছন এক অ্যাথলেট

ছবি: বাংলাদেশের খবর

খেলা

হংকং স্পোর্টস ইনস্টিটিউট

অ্যাথলেট তৈরির কারখানা

  • কবিরুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০১৮

 

ইন্সপায়ার, ট্রেইন অ্যান্ড এক্সেল- এই তিন শব্দই হচ্ছে হংকং স্পোর্টস ইনস্টিটিউটের (এইচকেএসআই) মূলমন্ত্র। আমাদের যেমন জাতীয় ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি), ওদের তেমনি এইচকেএসআই। বিশ্বমানের অ্যাথলেট তৈরির এ কারখানায় যেসব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা আছে, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। একটি দেশের স্পোর্টসের উন্নতি নিয়ে কতটা ভাবনা থাকলে সে দেশের সরকার এত সুযোগ-সুবিধা দিতে পারে অ্যাথলেটদের, সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। বছরে বাজেটের কী পরিমাণ টাকা খরচ করা হয় এখানে, তার কোনো নির্ধারিত সীমা নেই। যখন যেখানে যা দরকার, তা-ই খরচ করা হচ্ছে। এইচকেএসআইর মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বসেরা অ্যাথলেট তৈরি করা। এই প্রতিষ্ঠানটি হতে পারে বাংলাদেশের জন্য বড় উদাহরণ।

১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু এই সংস্থাটির। প্রতিষ্ঠার মাত্র ১৬ বছরের মধ্যেই ১৯৯৬ সালে আটলান্টা অলিম্পিকের উইন্ড সার্ফিং ইভেন্টে স্বর্ণ জেতেন লি লাই সান। অলিম্পিকের মতো বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া আসর থেকে পদক ছিনিয়ে এনে বিশ্বমঞ্চে দেশের পতাকা উজ্জ্বল করেছেন হংকংয়ের অ্যাথলেটরা।

প্রায় ৮ হাজার শতাংশ জমির ওপর নির্মিত এ স্পোর্টস কমপ্লেক্সের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেখলে মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম। কী নেই এখানে! একজন অ্যাথলেটের জন্য ট্রেনিং থেকে শুরু করে ডোপ টেস্ট পর্যন্ত সব পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। পরিকল্পনার ছোঁয়া ও আধুনিকতার মিশ্রণে গড়া এ কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের সময়ই ধাক্কা খেতে হবে যে কাউকে। কতটা উন্নত মননশীলতা থাকলে এত সুন্দর ও পরিপাটিভাবে সাজানো যায় একটি কমপ্লেক্স। প্রতিটি জায়গার সদ্ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি রাস্তার দুপাশে অ্যাথলেটদের হাঁটার জন্য আলাদা করে টার্ফ বসানো হয়েছে। যেন মাঠের বাইরেও তারা টার্ফে হাঁটার প্র্যাকটিস চালিয়ে যেতে পারে। ৫২ মিটারের সুইমিং পুলে রয়েছে আরো আধুনিকতার ছোঁয়া। ২৫ মিটারের পুলের প্রয়োজন হলে অন্য কোথাও যেতে হয় না। এই পুলের একটি অংশে রয়েছে অতিরিক্ত একটি ডাইভ পয়েন্ট। সেটি একটি ইলেকট্রিক সুইচের মাধ্যমে পুলের মাঝে এনে বসিয়ে ২৫ মিটার বানিয়ে ফেলা হয় ৫২ মিটারের পুলটিকে।

টেবিল টেনিস, উশু ও সাইক্লিংয়ে অনেক এগিয়েছে দেশটি। অলিম্পিকে এরই মধ্যে গোল্ড মেডেল জয় করেছে তারা। উশু প্লেয়ারদের জন্য আছে পাঁচটি কোর্ট। যেখানে সকাল-বিকাল উশু প্লেয়ারদের ট্রেনিং করানো হয়। মূল ভবনের পাশেই নির্মিত রাগবি মাঠের চারদিকে গড়ে উঠেছে অ্যাথলেটিকস টার্ফ ও হ্যামার থ্রু কোর্ট। রোয়ারদের ট্রেনিং করতে দূরে যেতে হয় না। ইনস্টিটিউটকে ঘিরে চারদিকে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক, যে লেকে অনুশীলন করেন তারা। ১৪১টি রোইং বোট আছে এই ইনস্টিটিউটে। পাশের লেকেই অনুশীলন করে থাকেন রোয়াররা। তারা শুধু ভর্তি হন এখানে। বাকি সবকিছুই সরকারি এ সংস্থা থেকে দেওয়া হয়ে থাকে। টেনিস প্লেয়ারদের জন্য আছে ৬টি হার্ড কোর্টের পাশাপাশি আছে দুটি উন্নত মানের ক্লে কোর্ট। হংকংয়ের টেনিস ফেডারেশনের ক্লে কোর্ট না থাকলেও এই ইনস্টিটিউটে আছে। প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়ার ১৯টি ডিসিপ্লিনের অ্যাথলেটদের ট্রেনিং করানো হয় এখানে। তবে তৃণমূল থেকে তুলে এনে নয়; বরং জাতীয় পর্যায়ে ভালো করা বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের অ্যাথলেটরা ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকেন।

হংকং স্পোর্টস ইনস্টিটিউটের কমিউনিকেশন ও রিলেশন ডিপার্টমেন্টের সহকারী অফিসার ম্যাং বলেন, ‘১৯৮০ সালে শুরুর পর থেকে আমাদের লক্ষ্য ছিল ভালো মানের অ্যাথলেট তৈরি করা। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জকি ক্লাব আমাদের বিশাল পরিমাণ অর্থ সহযোগিতা করে থাকে। এখানে অ্যাথলেটদের ট্রেইনিংয়ের পাশাপাশি স্পোর্টস মেডিসিনের ওপর ধারণা দেওয়া হয়। ড্রাগের ওপরও ক্লাস করানো হয়। মাঝে মধ্যে অ্যাথলেটদের ব্লাড টেস্ট করানো করানো হয়, যেন তারা ডোপ কিংবা মাদক গ্রহণ থেকে দূরে থাকে।

অত্যাধুনিক ফিটনেস মেশিন দিয়ে সাজানো হয়েছে বিশালাকারের ফিটনেস ট্রেনিং সেন্টার, যেখানে ১০০ জন অ্যাথলেট একসঙ্গে ব্যায়াম করতে পারেন বলে জানান ম্যাং, ‘এটা খুবই উন্নত মানের একটা জিম হাউজ। কারণ খেলোয়াড়দের ফিটনেসটা খুব জরুরি। তাই আমরা ব্যায়ামের পাশাপাশি নিজস্ব কিচেনের বাবুর্চিরা নিউট্রিশাসদের পরামর্শ অনুযায়ী রান্না করে থাকেন, যেন খাবার-দাবারে পরিমাণমতো সব ধরনের ভিটামিনের উপস্থিতি থাকে।

১২০০ অ্যাথলেটের ট্রেনিং সুবিধার এই ইনস্টিটিউটে আছেন তিনশ স্টাফ। ১৮৫ রুমে খেলোয়াড়দের আবাসন ব্যবস্থা। অনুশীলনের ব্যবস্থা থাকলেও পড়াশোনার কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে। এখানকার অ্যাথলেটদের প্রশিক্ষণের জন্য মাঝে-মধ্যেই বাইরে থেকে কোচ নিয়ে আসা হয়।

আমাদের দেশের বিকেএসপির দেয়াল টপকে রাতের আঁধারে খেলোয়াড় পালানোর অহরহ ঘটনা থাকলেও এখান থেকে কোনো অ্যাথলেট পালিয়ে বাইরে গেছে- এমন কোনো নজির নেই। নিয়মানুবর্তিতা আর অধ্যবসায় কাকে বলে, সেটা এই ইনস্টিটিউট না ঘুরলে বোঝা দায়। উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা আর শৃঙ্খল জীবনই যে পারে একজন খেলোয়াড়কে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হংকং স্পোর্টস ইনস্টিটিউট।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads