• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

খেলা

কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ খেলোয়াড়দের টাকায়!

  • কবিরুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৭ মে ২০১৮

আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার আবেদন করে খেলোয়াড়দের নামে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকে টাকা উত্তোলন করে কর্মকর্তারা করেছেন বিদেশ সফর। বিশ্বমঞ্চে যে খেলোয়াড়রা দেশের পতাকা উজ্জ্বল করবেন, তাদেরকে দেশে রেখে ফেডারেশনের কর্মকর্তারা আনন্দ উপভোগ করেছেন বিদেশের মাটিতে। ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক আলোচিত এ ঘটনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশন। মঙ্গোলিয়ার উলানবাটরে সদ্য সমাপ্ত ৫২তম এশিয়ান বডিবিল্ডিং অ্যান্ড ফিটনেস চ্যাম্পিয়নশিপ আসরকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে ন্যক্কারজনক এ ঘটনা।

গত ২৫ এপ্রিল থেকে মঙ্গোলিয়ায় শুরু হয় এশিয়ান বডিবিল্ডিং অ্যান্ড ফিটনেস চ্যাম্পিয়নশিপ। এ আসরের জন্য আমন্ত্রণ পেয়েই দেশসেরা তিন বডিবিল্ডারের নামসহ দুই কর্মকর্তার নাম প্রেরণ করা হয় এনএসসির কাছে জিওর (সরকারি অনুমোদনপত্র) জন্য। ফেডারেশনের তরফ থেকে এনএসসি বরাবর একটি চিঠি দেওয়া হয় খেলোয়াড়দের আর্থিক অনুদানের জন্য। তিন বডিবিল্ডারের (মিস্টার বাংলাদেশ খ্যাত নাজমুস সাকিব ভুঁইয়া, মিস্টার বাংলাদেশ খ্যাত সুমন চন্দ্র দাস ও মিস্টার ঢাকা খ্যাত আতিকুর রহমান শিমুল) অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক সংস্থাটি বডিবিল্ডিং ফেডারেশনকে চার লাখ টাকা প্রদান করে।

গত ১৫ এপ্রিল এনএসসির সচিব মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত অনুমোদনপত্র পায় ফেডারেশন। বডিবিল্ডাররাও এনএসসির আর্থিক অনুদানের বিষয়টি জানতে পেরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন আন্তর্জাতিক এ চ্যাম্পিয়নশিপে লড়াইয়ের জন্য। কিন্তু যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসার পর হঠাৎ করেই বোল পাল্টে ফেলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। তিনি দেশসেরা দুই বডিবিল্ডারকে দেশে রেখে উড়াল দেন মিস্টার ঢাকা খ্যাত আতিকুর রহমান শিমুলকে নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ জহির চৌধুরী। টিম ডেলিগেট হিসেবে তাকে নেওয়া হয়েছিল মঙ্গোলিয়াতে। বডিবিল্ডার নাজমুস সাকিব ভুঁইয়া ও সুমন চন্দ্র দাস নামে দুই কর্মকর্তা এনএসসি কর্তৃক বরাদ্দকৃত টাকায় মঙ্গোলিয়া সফর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরুল ইসলামকে নিয়ে ট্রল হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এনএসসি থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক এ আসরে খেলতে যেতে না পারার প্রসঙ্গে সুমন চন্দ্র দাস জানান, ‘ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এপ্রিলের শুরুতে জিজ্ঞেস করেন আমি মঙ্গোলিয়াতে যাব কি না? তাকে বলেছি, আপনারা যেটা ভালো মনে করেন সেটাই করেন। আমাদের নামও পাঠানো হয় এনএসসিতে। আমি নিজেও প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ একদিন জিমে সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ দেখা করতে আসেন। তারা বলেন এনএসসি থেকে দুইজন কর্মকর্তা ও একজন খেলোয়াড়ের নামে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পরে আমিও জানতে পেরেছি এনএসসি থেকে চার লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।

নাজমুস সাকিব ভুঁইয়া গত ২ মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লেখেন, আন্তর্জাতিক বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপগুলোতে শুধুমাত্র অংশগ্রহণ করার মানসিকতা থেকে প্লেয়ার ও ফেডারেশনের সবার বের হয়ে আসা উচিত। কারণ আমাদের অনেক বডিবিল্ডার এখন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টপ প্লেস করার যোগ্যতা রাখে। আর যারা ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেবে তাদের উচিত পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া। আর ফেডারেশনের উচিত যারা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলতে যাবে তাদের আগে থেকেই বাছাই করে তত্ত্বাবধানে রাখা।

এ বিষয়ে এনএসসির সচিব বলেন, ‘কী কারণে দেশসেরা দুই বডিবিল্ডারকে রেখে একজনকে নিয়ে যাওয়া হলো সে বিষয়টি আমরা ফেডারেশনের কাছে জানতে চাইব। যদি কোনো খেলোয়াড় লিখিত অভিযোগ, সংবাদপত্র, অনলাইন বা টিভি খবরের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি জানতে পারি তাহলে বিষয়টি নিয়ে ফেডারেশনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।’

এনএসসির পরিচালক (অর্থ) সহিদউল্লাহ জানান, ‘তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা চার লাখ টাকা অনুমোদন করেছিলাম। যাদের নামে জিও করেছি তাদেরকেই যেতে হবে। এখানে অন্য কাউকে নিয়ে গেলে সেটা হয়তো জিও ছাড়াই গেছে। তবে এটা অন্যায়।’ এনএসসির সাবেক পরিচালক (ক্রীড়া) দীল মোহাম্মদ বলেন, ‘খেলোয়াড়দের নামে টাকা উত্তোলন করে কোনোভাবেই কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারেন না। এটা অন্যায়। এমনটা হলে ওই অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। তবে এটাও সত্য, যারা শাস্তি দেবে তারাই এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো শাস্তি হয়নি।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দুটি সেলফোন নম্বরে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। দুটি নম্বরই ছিল বন্ধ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads