• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
কোরিয়ান ক্লাবের সামনে আবাহনী

সংগৃহীত ছবি

ফুটবল

কোরিয়ান ক্লাবের সামনে আবাহনী

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২১ আগস্ট ২০১৯

এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) ক্লাব কাপের ইন্টার জোন প্লে-অফ সেমিফাইনালে আজ বুধবার মুখোমুখি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী লিমিটেড ও সফরকারী উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ স্পোর্টস ক্লাব। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ  সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় দুই দেশের দুই জায়ান্টের প্রথম লেগ ম্যাচটি মাঠে গড়াবে।

গত শনিবার কোরিয়ান ক্লাবটি ঢাকায় আসে। দুই দলের ফিরতি লেগ ম্যাচ ২৮ আগস্ট উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ংয়ে অনুষ্ঠিত হবে।

কোরিয়ান দলটির ম্যাচের চারদিন আগে ঢাকায় আসার প্রধান কারণ ফ্লাইট শিডিউল। আবাহনী ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, উত্তর কোরিয়া থেকে ঢাকায় আসার ফ্লাইট সমস্যার কারণেই দেশটির ক্লাবকে আগেভাগে চলে আসতে হচ্ছে। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে ইন্টার জোনাল সেমিফাইনাল বিজয়ী দলটি জোনাল ফাইনাল খেলবে।

ঈদের ছুটি কাটিয়ে আবাহনীর ফুটবলাররা পুনরায় অনুশীলনে নামে গত ১৪ আগস্ট। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মাঠ ভিজে যাওয়ায় অনুশীলনে সমস্যা হলেও আবাহনীর ফুটবলাররা মানিয়ে নিয়েই সবকিছু করেছে। পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমস উত্তর কোরিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে দলের রক্ষণভাগকে প্রস্তুত করেছেন। কারণ, কোরিয়ান ক্লাবটি আবাহনীর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।

হতাশার কথা, লেমসের হাতে নেই লিগে রক্ষণদুর্গ সামাল দেওয়া আফগান ফুটবলার মাসিহ সাইঘানি। রক্ষণভাগ সামলানোর পাশাপাশি এই আফগান আক্রমণভাগেও দারুণ খেলেছেন। এএফসি কাপ ফুটবলের প্রথম পর্বে দুটি ম্যাচ জিতিয়েছেন গোল করে। তার দুই গোলেই মূলত আবাহনী এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে। আবাহনী এই ফুটবলারকে রাখতে পারেনি। চলে গেছেন চেন্নাইন এফসিতে। যদিও মাসিহ সাইঘানি পুনরায় আবাহনীতে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে আপাতত তো তাকে পাচ্ছে না বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্লাবটি।

আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাশ রুপু বলেছেন, ‘কোরিয়ান দলটি তাদের শক্তি নিয়ে খেলবে, আমরা খেলব আমাদের শক্তি নিয়ে। আমরা জয়ের জন্যই মাঠে নামব।’

বাংলাদেশের ফুটবলকে বহুদিন পর গৌরবময় অবস্থানে নিয়ে গেছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী। এএফসি কাপের সেরা আটে পৌঁছেছে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাধারী এই দলটি। ‘ই’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো এএফসি কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে ইতিহাস গড়েছে আবাহনী। নকআউট পর্বে প্রতিপক্ষ কারা হয়, সেটাই ছিল দেখার। দ্বিতীয় পর্ব বা আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে আবাহনীর প্রতিপক্ষ কারা হচ্ছে, তা জানার অপেক্ষাতেই ছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। সেটা চূড়ান্ত হয়েছে কিছুদিন আগে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ড্রতে।

এতদিন এএফসি কাপে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে একক রাজত্ব ছিল ভারতীয় ক্লাব বেঙ্গালুরু এএফসির। ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চলের ক্লাবগুলোকে এএফসি কাপের প্রথম পর্বে নিজেদের মধ্যে খেলার সুযোগ করে দেয় এশিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা। প্রথম দুবারই চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল বেঙ্গালুরু। এবারই ভারতের দুই ক্লাবকে পেছনে ফেলে তাদের রাজত্ব দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশের আবাহনী। ৬ ম্যাচে ৪ জয় ও ১ ড্রয়ের বিপরীতে একটি মাত্র ম্যাচ হেরে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা।

এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ স্পোর্টস ক্লাব, সংক্ষেপে ৪.২৫ এসসি নামেই পরিচিত উত্তর কোরিয়ার এ ক্লাবটি। ক্লাবটি উত্তর কোরিয়ার ঘরোয়া ফুটবলে অন্যতম সেরা দল। এই ক্লাবের পারফরম্যান্স ছিল আরো দুর্দান্ত। ৬ ম্যাচে ৫ জয়ের বিপরীতে তারা ম্যাচ হেরেছে মাত্র একটি। ঘরোয়া লিগে এগারোবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া কোরিয়ান ক্লাবটিতে নেই কোনো বিদেশি খেলোয়াড়। প্রথম পর্বে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬ গোল করেছেন স্ট্রাইকার কিম ইউ সং।

এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ বাংলাদেশের ফুটবলে খুব অপরিচিত প্রতিপক্ষ নয়। এই দলটির বিপক্ষে অতীতে জয়ের রেকর্ড আছে। ১৯৮৮ সালে সে সময়ের এশিয়ান ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল পর্বে এই এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। মালয়েশিয়ার পাহাংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ম্যাচটি। মোহামেডানই ১৯৯০ এশিয়ান ক্লাব কাপের চূড়ান্তপর্বে গোলশূন্য ড্র করেছিল উত্তর কোরীয় ক্লাবটির সঙ্গে। ১৯৯১ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চূড়ান্তপর্বে এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ তৃতীয় হয়েছিল। যদিও কোরিয়ান ক্লাবটি এখন আর ওই অবস্থায় নেই। তারা খুবই দুর্দান্ত দলে পরিণত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার ঐ ক্লাবকে পেয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ৬ বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী।

এর আগে, দারুণ খেলে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) কাপের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গ্রুপ পর্ব পার হয় আবাহনী। তারা গ্রুপের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের মিনেরভা পাঞ্জাবকে হারিয়ে দ্বিতীয় পর্বে উঠে যায় বাংলাদেশের জনপ্রিয় দল আবাহনী। গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে ‘ই’ গ্রুপের নিজেদের শেষ ম্যাচে মিনেরভাকে ১-০ গোলে হারায় আবাহনী। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের তৃতীয় সারির টুর্নামেন্ট প্রেসিডেন্টস কাপে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলা পাঁচ আসরে গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারেনি আবাহনী। এরপর ২০১৭ ও ২০১৮ সালে খেলা এএফসি কাপেও একই অবস্থা ছিল তাদের।

মারিও লেমোসের তত্ত্বাবধানে আবাহনী যে দারুন উন্নতি করেছে, এএফসি কাপের নকআউট পর্বে ওঠায় সেটাই প্রমাণ হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী দল ঢাকা আবাহনী এখন ফুটবলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। ফুটবল দর্শকদের আশা, কোরিয়ার ক্লাবটির বিপক্ষে ভালো একটি ফলাফল করে আবাহনী নতুন ইতিহাস রচনা করুক। আজকের ম্যাচে আবাহনী জিতে গেলে তা হবে বাংলাদেশের জন্য নতুন ইতিহাস। এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ যতই শক্তিশালী হোক, তাদের বিপক্ষে আবাহনী ইতিহাস গড়তেই মাঠে নামবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads